উল্লাস: ফাটানো হচ্ছে বাজি। নিজস্ব চিত্র
২২-এ ১১ আগেই চাপে রেখেছিলেন। এ বার যুক্ত হলেন আরও ৩। সব মিলিয়ে ২২ জনের পুরসভায় ১৪ জন কাউন্সিলরই অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে সায় দিলেন। সব মিলিয়ে চাপ আরও বাড়ল বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্যের। নতুন করে যাঁরা অনাস্থায় সম্মতি জানালেন, তাঁদের মধ্যে আছেন উপ পুরপ্রধান কৃষ্ণা রায়।
শুক্রবার পুরসভার ১১ জন তৃণমূল কাউন্সিলর পুরপ্রধানের ‘অনৈতিক’ কাজের প্রতিবাদে অনাস্থা প্রস্তাব এনে মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই কাউন্সিলররা লোকসভা ভোটে বনগাঁ শহরে শাসক দলের ভরাডুবির জন্য পুরপ্রধানের আচরণকে দায়ী করেছেন। তাঁদের মতে, সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ব্যবহার করেন শঙ্কর। কাউন্সিলরদের সঙ্গে তেমনই আচরণ তাঁর। কাউন্সিলরদের বক্তব্য, পুরপ্রধান তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, কথায় কথায় অপমান করেন। শনিবার কৃষ্ণা রায় সহ তিন কাউন্সিলর মহকুমাশাসকের কাছে ওই অনাস্থা প্রস্তাব সমর্থন করে চিঠি দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন উপ পুরপ্রধান নিজেই। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণা ছাড়াও অনাস্থা প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছেন, তাঁর বৌমা টুম্পা রায় ও কাউন্সিলর দীপ্তেন্দুবিকাশ বৈরাগী (মন্টু)।
কৃষ্ণা-সহ তিন কাউন্সিলর অনাস্থায় সমর্থন করেছেন জানতে পেরে শনিবার বেলা ১২টা নাগাদ শঙ্কর যান তাঁর বাড়িতে। সঙ্গে ছিলেন কাউন্সিলর শম্ভু দাস, মৌসুমি চক্রবর্তী এবং জ্যোৎস্না আঢ্য। জ্যোৎস্না পরে বলেন, ‘‘কৃষ্ণা কাকিমার স্বামী অসুস্থ। তাই দেখতে এসেছিলাম। রাজনৈতিক কোনও আলোচনা হয়নি।’’
উপ পুরপ্রধান বলেন, ‘‘শুক্রবার ১১ জন কাউন্সিলর অনাস্থা প্রস্তাব এনে মহকুমাশাসককে চিঠি দেওয়ার পর থেকে ওয়ার্ডের অনেকেই আমাদের কাছে প্রশ্ন তোলেন, কেন আমরা ওই কাউন্সিলরদের সঙ্গে সহমত হলাম না। মানুষ দাবি জানান অনাস্থায় সমর্থন করার জন্য। এই পরিস্থিতিতে অনাস্থায় সমর্থন না করলে ওয়ার্ডের মানুষের কাছে খারাপ বার্তা যেত।’’ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে তিনি অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে কৃষ্ণার কথায়, ‘‘১১ জন কাউন্সিলর প্রথমে আমাদের অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে কিছু জানাননি। আগে জানালে হয় তো আগেই স্বাক্ষর করে দিতাম।’’
পুরপ্রধান শুক্রবার এলাকায় ছিলেন না। শনিবার সকালে বাড়ি ফিরে বলেন, ‘‘সব কাউন্সিলরকে নিয়েই বনগাঁর উন্নয়ন করেছি। এলাকায় কেমন উন্নয়ন হয়েছে, শহরের মানুষ তা জানেন। লোকসভা ভোটে বামেদের ভোটটা বিজেপির দিকে চলে যাওয়াতেই আমরা পুর এলাকায় পিছিয়ে ছিলাম। রাজ্যের অনেক পুরসভা এলাকাতেই খারাপ ফল হয়েছে। সেই সব পুরপ্রধানদেরও তা হলে দায়ী করা হোক দলের তরফে। পঞ্চায়েত এলাকায় হারের জন্য সেখানকার নেতাদের দায়ী করা হোক।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, জেলা নেতাদের কেউ কেউ পুরপ্রধানকে পদ থেকে সরে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য জানিয়েছেন, ১২ জুন পুরমন্ত্রীর উপস্থিতিতে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’
অনাস্থা প্রস্তাব যাঁরা এনেছেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই ফোন এ দিন সকাল থেকে বন্ধ ছিল। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ওই কাউন্সিলরেরা এলাকার বাইরে চলে গিয়েছেন।
পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার পরে বনগাঁর চিত্রটাই যেন বদলে গিয়েছে। নানা প্রান্তে এই নিয়েই চলছে আলোচনা। অনাস্থা যাঁরা আনলেন, তাঁরা বিজেপিতে যাচ্ছেন কিনা, তা নিয়ে শুরু হয়েছে গুঞ্জন। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বাজি ফাটিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকে। পুলিশের তৎপরতাও চোখে পড়েছে। শহরের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী শুক্রবার সন্ধের পর থেকে খদ্দেরদের যে কোনও কেনাকাটায় ২০ টাকা করে কম দাম নিয়েছেন। কারণ হিসাবে সকলকে বলেছেন, ‘‘আজ মনটা ভাল, তাই।’’অনাস্থা আনার পিছনে শুক্রবার ‘অদৃশ্য হাত’-এর অস্তিত্ব টের পেয়েছিলেন পুরপ্রধান শঙ্কর আড্য। এ দিন অবশ্য তিনি সরাসরিই বলেন, ‘‘বিজেপির লোকজন বাজি ফাটিয়েছে। এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, গোটা ঘটনার পিছনে বিজেপির মদত রয়েছে।’’বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল অবশ্য বলেন, ‘‘মানুষ পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে আনন্দে বাজি ফাটিয়েছেন। এর সঙ্গে বিজেপির কেউ যুক্ত নন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy