টহল: বাসন্তীতে পুলিশ। শনিবার। ছবি: সামসুল হুদা
যুব তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, সকলেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত।
শুক্রবার রাতে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে বাসন্তীর আমঝাড়া পঞ্চায়েতের ৮ নম্বর খড়িমাচান এলাকায় নিজের বাড়ির কাছেই দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হন যুব তৃণমূল কর্মী রহিম শেখ (৪৬)। তদন্তে নেমে পুলিশ রাতেই এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে আদেশ গায়েন, রেজাউল খান, সাইরুল মোল্লা নামে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি আগ্নেয়াস্ত্র ও বোমা উদ্ধার করেছে পুলিশ। বারুইপুর পুলিশ জেলার সুপার রশিদ মুনির খাঁ বলেন, ‘‘দুই পরিবারের মধ্যে জমিজমা নিয়ে বিবাদে এক জন খুন হয়েছেন। তিন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের খোঁজ চলছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই এলাকার বাসিন্দা রহিম শেখ, কাশেম শেখের পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরে একটি জমি নিয়ে বিবাদ চলছে বাবলু গায়েন, মিনারা গায়েনের পরিবারের। ছ’-সাত মাস আগে দুই পরিবারের মধ্যে মারামারি বেধেছিল। ওই ঘটনায় গায়েন পরিবারের একজনের পা ভাঙে।
এই ঘটনার পরে বাবলুর পরিবার রহিমের পরিবারের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করে। শুক্রবার রাতে রহিম, তাঁর দাদা কাসেম শেখ, ভাই এসার শেখ এবং ছেলে কুতুব শেখ ও আজহার শেখদের নিয়ে ভারতীর মোড়ে নিজের কাপড়ের দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছিলেন। অভিযোগ, রহিমের বাড়ির অদূরে বাবলুর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন দুষ্কৃতী বোমা, বন্দুক নিয়ে চড়াও হয়। কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
রহিমের দু’পায়ে সাতটি গুলি লাগে। সেখান থেকে তাঁকে মিনারা গায়েনের বাড়িতে তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে মুখে গুলি করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। কাশেমেরও দু’পায়ে গুলি লেগেছে। তাঁর মাথায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপ মারা হয়। এশার ও কুতুবের মাথায় কোপ মারা হয়েছে। খবর পেয়ে আসে বাসন্তী থানার পুলিশ। তারাই সকলকে উদ্ধার করে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসক রহিমকে মৃত ঘোষণা করেন। কাশেমের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় তাঁকে চিত্তরঞ্জন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এশার ও কুতুবের চিকিৎসা চলছে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে।
এলাকায় রহিম যুব তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। অন্য দিকে, বাবলু তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত। বাবলু আমঝাড়া পঞ্চায়েতের সদস্যও। স্বভাবতই এই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লেগেছে। শনিবার সকাল থেকে বাসন্তীর বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখান যুব তৃণমূল কর্মীরা। বাসন্তীর ফুলমালঞ্চ পঞ্চায়েতের হোমরামারি এলাকায় এক তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। শিমুলতলা হাসপাতাল মোড়ে মিছিল বেরোয়। বাসন্তীর তৃণমূল নেতা মন্টু গাজি ও তাঁর ছেলে রাজা গাজির গ্রেফতারের দাবিতে বেশ কিছুক্ষণ বাসন্তী হাইওয়ে অবরোধ করা হয়। এই দাবিতে বাসন্তী-ক্যানিং রুটে অটো, ট্রেকার-সহ বিভিন্ন যানবাহনে পোস্টার লাগায় বিক্ষোভকারীরা। সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের গাড়িও আটকে পড়ে বিক্ষোভের জেরে। পুলিশ এসে অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাক্কাধাক্কি হয়। জখম হন চার জন পুলিশ কর্মী।
এ দিন সকালে পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খাঁ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসুর নেতৃত্বে বাহিনী গ্রামে যায়। বিভিন্ন বাড়িতে তল্লাশি চলে। শিমুলতলায় রাস্তা অবরোধের ঘটনায় এক যুব তৃণমূল কর্মীকে আটক করে পুলিশ।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তথা রহিম শেখের ছেলে আজহার বলেন, ‘‘বাড়ি ফেরার সময়ে বাবলুর নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন আমাদের উপরে চড়াও হয়। ওরাই বাবাকে গুলি করে খুন করেছে।’’ তাঁর অভিযোগ, বাবলু এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য। কিন্তু উন্নয়নের কোনও কাজ না করে প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করে। এই নিয়ে প্রতিবাদ করায় তাঁর বাবাকে পরিকল্পিত ভাবে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ আজহারের। বাসন্তীর যুব তৃণমূল নেতা আমান লস্কর বলেন, ‘‘এলাকা দখল করতে সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে দলেরই মূল সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী। তারাই পরিকল্পিত ভাবে রহিমকে খুন করেছে।’’
অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল নেতা মন্টু বলেন, ‘‘এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই। দুই পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিবাদকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করলে পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ একই বক্তব্য, তৃণমূলের জেলা সভাপতি শুভাশিস চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, ‘‘জমি নিয়ে দুই পরিবারের গন্ডগোলে এই ঘটনা ঘটেছে। রাজনীতির সম্পর্ক নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy