গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে দুঃস্থ পড়ুয়ার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছেন সৌমিত্র। নিজস্ব চিত্র
আর্থিক অনটনের মধ্যে বড় হয়েছেন তিনি। পড়াশোনা করতে দিনের পর দিন অন্যের বাড়িতে থাকতে হয়েছে। কখনও আত্মীয়-স্বজনেরা পাশে দাঁড়িয়েছেন তো কখনো শিক্ষকেরা। আর সেই কারণে অভাবের যন্ত্রণা ভালই বোঝেন সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের বালি দ্বীপের বাসিন্দা সৌমিত্র মণ্ডল।
প্রতি বছর মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্ট বের হলেই নিজের উদ্যোগে দুঃস্থ অথচ মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের খুঁজে বেড়ান বছর আঠাশের এই যুবক। প্রকৃত দুঃস্থদের খুঁজে তাঁদের স্কুল-কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। কখনও নিজে স্কুলের সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে কথা বলে ভর্তির ফি মুকুবের চেষ্টা করেন। কখনও সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সমস্ত দুঃস্থদের জন্য সাহায্যের আবেদন জানান সৌমিত্র। তাঁর আবেদনে কেউ সাড়া দিলে সরাসরি স্কুল বা ওই দুঃস্থ পড়ুয়াদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সেখানে সাহায্য পাঠাতে অনুরোধ করেন এই যুবক।
এ ভাবেই গত কয়েক বছরে সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের দুঃস্থ মেধাবী পড়ুয়াদের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছেন তিনি। এ বছর এখন পর্যন্ত ৯ জন দুঃস্থ পড়ুয়া, যারা মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছে, তাঁদের স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন সৌমিত্র। সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের সাতজেলিয়া, মোল্লাখালি, কচুখালি, সোনাগাঁ সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দুঃস্থ ও মেধাবী পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর কথা শুনেই দুঃস্থ পড়ুয়াদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন মধ্যমগ্রামের তপন কর, উল্টোডাঙার বাসিন্দা গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষজন। এ ছাড়াও, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই সমস্ত পড়ুয়াদের বই কিনে দেবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।
ছোটবেলায় গোসাবার বাড়ি ছেড়ে ক্যানিংয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছেন সৌমিত্র। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়েছেন। বিএড পাশ করেছেন। নিজের শিকড়ের টান অনুভব করে পড়াশোনা শেষে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন এই যুবক। গোসাবার কচুখালি হাইস্কুলে পার্টটাইম শিক্ষক হিসেবে কিছু দিন শিক্ষকতা করেন। তারপর থেকে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে চলেছেন। আর এই সব কাজ করতে মূলত সোশ্যাল মিডিয়াই তাঁর অন্যতম ভরসা বলে জানালেন।
সৌমিত্র বলেন, ‘‘ছোট থেকেই আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব, শিক্ষকদের সাহায্যে পড়াশোনা করে বড় হয়েছি। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না। তাই টাকার জন্য পড়াশোনা বন্ধের কষ্টটা আমি বুঝি। সে কারণেই সুন্দরবনের এই সব মেধাবী পড়ুয়া, যারা অর্থাভাবে স্কুল কলেজে ভর্তি হতে পারছে না, তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’’
এ সব ছাড়াও গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন প্রান্তের জনা চল্লিশেক পড়ুয়াদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়ান সৌমিত্র। এ রকমই তাঁর এক ছাত্র প্রতাপ মণ্ডল বলে, ‘‘সৌমিত্রদার জন্য আমরা গর্ববোধ করি। উনি আমাদের বিপদে সব সময়ে পাশে দাঁড়ান।’’
স্কুলে ভর্তি হওয়ায় জন্য আর্থিক সাহায্য পেয়েছে অলোকেশ গায়েন, তুহিন মণ্ডলরা। তাদের কথায়, ‘‘লকডাউন আর করোনা আবহে বাবা মা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কী ভাবে স্কুলে ভর্তি হব বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু এই দাদা আমাদের স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy