Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
WB Panchayat Election 2023

ভাঙড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু দু’জনের, জখম এক তৃণমূল কর্মী, আবার রণক্ষেত্র এলাকা

সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া। প্রস্তুত ছিল প্রশাসনও। বিডিও অফিস চত্বর মুড়ে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে। বেলা গড়াতেই বাধে সংঘর্ষ।

There is excitement in Bhangar on the last day of nomination filing

গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু ভাঙড়ে। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৩ ১১:৪১
Share: Save:

তৃণমূল এবং ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর মধ্যে বোমা এবং গুলির লড়াইয়ে আবার অশান্ত হয়ে উঠল ভাঙড়। তার জেরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হল এক আইএসএফ কর্মী এবং এক তৃণমূল কর্মীর। সংঘর্ষের জেরে জখম হয়েছেন এক তৃণমূল কর্মীও। এমনটাই দাবি যুযুধান দুই পক্ষের। ঘটনাস্থলে বিশাল পুলিশ বাহিনী। ভাঙড়ে অশান্তি নিয়ে আইএসএফকেই দায়ী করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে বুধবার যে অশান্তির ছবি দেখা গিয়েছিল ভাঙড়ে তা ফিরে এল বৃহস্পতিবারেও। আবার রণক্ষেত্র হয়ে উঠল ভাঙড়ের বিজয়গঞ্জ বাজার। সেখানকার কাঁঠালিয়া মোড়ে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। মুড়িমুড়কির মতো বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে গুলি চালানোরও। তার জেরে মৃত্যু হয়েছে মহম্মদ মহিদ্দিন মোল্লা নামে এক আইএসএফ কর্মীর। এমনটাই দাবি আইএসএফ নেতৃত্বের। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন রশিদ মোল্লা নামে এক তৃণমূল কর্মীরও। তিনি জীবনতলার বাসিন্দা। তাঁর তিনটি গুলি লেগেছে বলে তৃণমূলের দাবি। ভাঙড়ের জখমদের মধ্যে সেলিম মোল্লা এবং মনিরুল মোল্লা নামে ভাঙড়ের দুই যুবককে ভর্তি করানো হয়েছে আরজি কর হাসপাতালে। তাঁদের দেহে বুলেটের ক্ষত রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁরা ‘এমসিএইচ ট্রমা কেয়ার ইউনিট’-এ ভর্তি রয়েছেন। সক্রিয় রাজনীতি না করলেও তিনি আইএসএফের সঙ্গে যুক্ত বলে জানিয়েছেন জখম সেলিমের ভাই নাসিফ মোল্লা।

ওই সংঘর্ষের পর বিজয়গঞ্জ বাজারে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে এলাকায় মোতায়েন করা হয় বিশাল পুলিশ বাহিনী। চলছে পুলিশি টহলদারিও। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে প্রথম থেকেই থমথমে পরিস্থিতি ছিল ভাঙড়ে। ভাঙড়ের দু’টি বিডিও অফিস চত্বরেই জড়ো হন তৃণমূল এবং আইএসএফ-এর কর্মীরা। এর পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি।

ভাঙড়ের অশান্তির জন্য নাম না করে আইএসএফ-কে দুষেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ-ও জানিয়েছেন যে, ভাঙচুরের প্রতিবাদ করেছে তৃণমূল। তাঁর কথায়, “যারা বিরোধী আছে ওখানে, নতুন জিতেছে, তারাই প্রথম করেছে পরশুদিন (মঙ্গলবার)। ভাঙচুর করেছে, মানুষকে বিপথে চালিত করে, সাম্প্রদায়িক স্লোগান দিয়ে সবাইকে জোগাড় করে ওখানে ভাঙচুর, লুঠতরাজ, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।” তারপরই তিনি বলেন, “ আমাদের তরফে কালকে (বুধবার) একটা প্রতিবাদ হয়েছে। যেটা সত্যি আমি বলব।”

নিয়ম মতো সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া। প্রস্তুত ছিল প্রশাসনও। ভাঙড়-১ এবং ভাঙড়-২ এই দুই বিডিও অফিসের বাইরে এক কিলোমিটার পর্যন্ত মুড়ে ফেলা হয় নিরাপত্তার চাদরে। তবে গত দু’দিন ধরে তৃণমূল এবং আইএসএফের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে বৃহস্পতিবারও থমথমে এলাকার পরিস্থিতি। আবার দু’পক্ষের মধ্যে সংঘাতের আশঙ্কা করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। এই আবহে দুই পক্ষের কর্মীদেরই দেখা গিয়েছে বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হয়ে থাকতে। তাঁদের হাতে দেখা গিয়েছে লাঠিসোঁটাও। আর তা নিয়েই চড়তে শুরু করে উত্তেজনার পারদ। ভাঙড়-১ বিডিওতে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা অভিযোগ করেছেন, তাঁদের বাধা দিয়েছে তৃণমূল। যদিও সিপিএমের তোলা সমস্ত অভিযোগ ভুয়ো বলে উড়িয়ে দিয়েছে শাসকদল। আবার ভাঙড়-২ ব্লকে সিপিএম অভিযোগ করেছে, মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার পথে তাঁদের প্রার্থী গিয়াসুদ্দিন মোল্লার কাগজপত্র ছিঁড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। বামেদের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শাসকদল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই রাজ্যের শাসকদল এবং আইএসএফের মধ্যে উত্তেজনা জারি রয়েছে। মাঝেমাঝেই দু’পক্ষের মধ্যে বেধেছে মারপিট। তবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে গত মঙ্গলবার ভাঙড়-২ ব্লকের বিজয়গঞ্জ বাজার এলাকা রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়। এলাকায় যথেচ্ছ বোমাবাজি এবং গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে। তার জেরে আহতও হন কয়েক জন। এই পরিস্থিতিতে বুধবারও উত্তেজনা ছিল এলাকায়। তবে তা মঙ্গলবারের মতো আকার ধারণ করেনি। বৃহস্পতিবার আবার সেই আশঙ্কা মাথাচাড়া দিচ্ছে। প্রস্তুত রয়েছে প্রশাসনও। বাসন্তী হাইওয়ে জুড়ে মোতায়েন পুলিশ। এ ছাড়া রয়েছে টহলদারি ভ্যানও। বাসন্তী হাইওয়ে থেকে যে সব রাস্তা বিভিন্ন গ্রামে ঢুকছে সেখানেও রয়েছে বাহিনী। এ জন্য অতিরিক্ত বাহিনীও আনা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy