সোদপুরের অমরাবতী মাঠ অধিগ্রহণ করবে রাজ্য সরকার। প্রায় ৮৫ বিঘার ওই মাঠের বড় অংশ বিক্রির পরিকল্পনা ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার সেই খবর জানতে পেরে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরেই নবান্ন থেকে বার্তা পাঠানো হয় উত্তর ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকেও।
দীর্ঘ বহু বছর ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা ওই মাঠটি কেন খাস জমি হিসাবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে বুধবার মালিকপক্ষকে নোটিস পাঠিয়েছেন ব্যারাকপুরের মহকুমাশাসক। আগামী সাত দিনের মধ্যে ওই মাঠ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নথি নিয়ে দেখা করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় জল্পনা চলছিল, মাঠের বড় অংশ আবাসন প্রকল্পের জন্য বিক্রির পরিকল্পনা হয়েছে। মাঠের মালিক ‘সোসাইটি ফর দ্য প্রোটেকশন অব চিল্ড্রেন ইন ইন্ডিয়া’ (এসপিসিআই)-র তরফেও বিষয়টি স্বীকার করে দাবি করা হয়, আবাসন প্রকল্পের বাকি অংশে জনকল্যাণমূলক একাধিক প্রকল্প করা হবে। বিষয়টি পানিহাটির বিধায়ক এবং পুরপ্রধানকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু
হাই কোর্টের রায়ে স্পষ্ট রয়েছে, অলাভজনক ও জনকল্যাণমূলক সংস্থা ‘এসপিসিআই’ ওই মাঠকে বাণিজ্যিক বা লাভজনক কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। তেমন কিছু করা হলে সরকার ফের সংস্থাকে নোটিস পাঠাবে। সেখানে স্থানীয় প্রশাসন সব জেনেও চুপ ছিল কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিক এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘অমরাবতী মাঠ বিক্রির পরিকল্পনার অভিযোগের কথা জানতে পেরেই মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত স্তরে কথা বলে প্রক্রিয়াটি বন্ধ করেছেন। রাজ্য সেটি অধিগ্রহণ করবে। সরকারি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। মাঠটি জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহার হবে।’’ পানিহাটির সিপিএম নেতা তথা নাগরিক সমাজের পক্ষে দুলাল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারের অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত। তবে হাই কোর্টের রায়কে মাথায় রেখে সরকারকে কাজ করতে হবে। সাংস্কৃতিক চর্চা, ক্রীড়া ক্ষেত্রে ওই মাঠ ব্যবহার করা হোক।’’
অন্য দিকে, ‘এসপিসিআই’-এর সম্পাদক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন ও
পুরসভার মাধ্যমে উপযুক্ত নথি নিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। আজই সেটা করছি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্য অধিগ্রহণ করলে আপত্তি নেই। তবে, জোকায় অনাথ মেয়েদের একটি হোম রয়েছে আমাদের। তার পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ এবং আঠারো বছর বয়সের পরে ওই মেয়েদের পুনর্বাসনের প্রকল্প, সোদপুরে পুনরায় ছেলেদের হোম তৈরির জন্যও আর্থিক তহবিলের প্রয়োজন। সরকারের সঙ্গে আলোচনায় সে সব বলা হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)