স্কুলের ঘণ্টার ঢং ঢং শব্দ এখন আর শোনা যায় না। পড়ুয়াদের কোলাহল, হুড়োহুড়িও চোখে পড়ে না। দোতলা ভবনটিতে পরিকাঠামোর কোনও অভাব নেই। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও কম নয়। তবু গত প্রায় চার বছর ধরে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে স্কুল।
রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের বয়ারগদি দুঃখেরপোল জুনিয়র হাইস্কুলে কোনও শিক্ষক নিয়োগ হয়নি গত কয়েক বছরে। ফলে এখন স্কুলের দরজায় তালা পড়েছে।
বয়ারগদি দুঃখেরপোল জুনিয়র হাইস্কুল স্থাপনের আগে ৪-৫ কিলোমিটার দূরের স্কুলে ছেলেমেয়েদের পাঠাতেন এলাকার মানুষ। অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া দিতে সমস্যায় পড়ছিলেন অনেকেই। স্কুলছুট লেগেই থাকত।
১৯৬৯ সালে ওই ব্লকের কৌতলা পঞ্চায়েতে বয়ারগদি গ্রামের জুনিয়র হাইস্কুলটি সরকারি অনুমোদন মেলার পরে গ্রামবাসীদের ছেলেমেয়েকে স্কুলে পাঠানোর চিন্তা অনেকটা দূর হয়।
শুরুর দিনগুলিতে এক বিঘা দানের জমিতে মাটির দেওয়ালে খড়ের ছাউনির ঘরে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পঠনপাঠন চলত। পরবর্তীকালে সরকারি অনুমোদনের টাকায় স্কুলের দোতলা ভবন তৈরি হয়। ৮টি শ্রেণিকক্ষ, অফিস ঘর, ৫টি শৌচালয়, মিড ডে মিলের রান্নাঘর, পানীয় জলের নলকূপের ব্যবস্থা, খেলার মাঠ— সবই তৈরি করা হয়েছিল।
২০০৫ সালে মাধ্যমিকের অনুমোদন পায় স্কুলটি। কিন্তু শিক্ষকের অভাবে নবম-দশম শ্রেণির পঠন-পাঠন চালু করা যায়নি। ২০১৬ সালের আগে পর্যন্ত ৩ জন শিক্ষক ও প্রায় ১৭০ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা চলত। ২০১৭ সালে এক জন শিক্ষক অবসর নেন, আরও এক জন কলেজে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়ে চলে যান। ফলে স্কুলের সমস্ত দায়িত্ব এসে পড়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের উপরে।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে তিনিও অবসর নেন। সেই থেকে স্কুলটির দরজা বন্ধ হয়েছে। সে সময়ে ৩০-৪০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল। তারা আশপাশে ৪-৫ কিলোমিটার দূরের স্কুলে চলে যায়।
এই স্কুলে বয়ারগদি ছাড়াও দুঃখের পোল, বকুলতলা, হাতিপাড়া ও ও মাঝেরপাড়ার পড়ুয়ারা পড়তে আসত। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাড়ির কাছে আস্ত একটি স্কুল থাকা সত্ত্বেও সময় মতো শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় তাঁদের ভুগতে হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বলরাম ভান্ডারী, নিতাই হালদারেরা জানান, স্কুল বন্ধ হওয়ার মুখে ২০১৯ সালে শিক্ষক নিয়োগের দাবি নিয়ে তাঁরা আন্দোলন করেছিলেন। সে সময়ে প্রশাসনের তরফে আশ্বাস দেওয়া হলেও কার্যত স্কুলটি বন্ধই হয়ে গেল। এই পরিস্থিতিতে স্কুলছুটের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। স্কুলের সম্পাদক শ্যামাপ্রসাদ সাউ বলেন, “প্রায় গত দশ বছর ধরে সম্পাদক পদে ছিলাম। শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিভাগীয় দফতরে বহু আবেদন করেছি। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে স্কুলটি এখন বন্ধ রাখতে হয়েছে। আমপান-ইয়াসের জেরে স্কুল ভবনের ক্ষতি হয়েছিল। সংস্কারের জন্য লক্ষাধিক টাকা অনুমোদন হয়। প্রশাসন থেকে সংস্কারও করে দেওয়া হয়েছিল। শুধুমাত্র শিক্ষক নিয়োগ হলেই চালু করা যেতে পারে স্কুল।”
এ বিষয়ে জেলা স্কুল দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)