Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
summer

গরমে শুকোচ্ছে পুকুর, মরছে মাছ

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু এলাকায় মাছের চাষ হয়। গ্রামে গ্রামে অনেকেই পুকুরে মাছের চাষ করেন। আবার নদীর তীরে ভেড়ি তৈরি করেও মাছ-চিংড়ির চাষ হয় প্রচুর পরিমাণে।

A Photograph of a pond

হাসনাবাদে চিংড়ি চাষের পুকুরে জলস্তর দেখাচ্ছেন চাষি। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর ও নবেন্দু ঘোষ
ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:০৪
Share: Save:

তীব্র গরম এবং প্রখর রোদে খাল-বিল-পুকুরের জলস্তর কমে গিয়েছে অনেকটাই। ক্ষতি হচ্ছে মাছ চাষে। চাষিরা জানান, গরমে জলস্তর কমে যাওয়ায় পুকুর বা ভেড়িতে প্রচুর মাছ-চিংড়ি মরে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়ায় নতুন চারাও ছাড়া যাচ্ছে না।

উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বহু এলাকায় মাছের চাষ হয়। গ্রামে গ্রামে অনেকেই পুকুরে মাছের চাষ করেন। আবার নদীর তীরে ভেড়ি তৈরি করেও মাছ-চিংড়ির চাষ হয় প্রচুর পরিমাণে। মাছ চাষিরা অনেকে জানালেন, প্রবল গরম এবং দীর্ঘ অনাবৃষ্টিতে পুকুরগুলি শুকিয়ে এসেছে। অনেক এলাকায় পুকুরের জল ব্যবহার করে ধান বা আনাজ চাষ হয়। সেই সব এলাকায় পুকুর থেকে সেচের জন্য জল তুলে নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও খারাপ। বৃষ্টি না হওয়ায় সমস্যা বেড়েছে। কোথাও কোথাও মাছ চাষের পুকুরে হাঁটুসমান জল। চড়া রোদে জল গরম হয়ে মাছ মরতে শুরু করেছে।

মগরাহাট ২ ব্লকের বাঁকিপুর, গরুহাটা, বিলন্দপুর, মাহিতালাব-সহ বিভিন্ন গ্রামে পুকুরে প্রচুর মাছ চাষ হয়। মাছ চাষি মেহেদি হাসান ফকির বলেন, “এ বার পাঁচটি পুকুরে মাছ চাষ করেছি। কিন্তু জলের অভাবে এখনও চারা পোনা বা ডিম ফেলতে পারিনি। পুকুরের জল একেবারে তলানিতে। অল্প জল হাওয়ায় সূর্যের তাপে তা গরম হয়ে যাচ্ছে। কিছু চারা পোনা ফেলেছিলাম। সেগুলি মরতে শুরু করেছে। জল ঢাকা দিয়ে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করছি।” রায়দিঘির নগেন্দ্রপুর এলাকার বাসিন্দা মাছ চাষি ইয়াসিন গাজি বলেন, “পাঁচটা বড় বড় পুকুরে মাছ চাষ করেছি। পুকুরের জল তুলে বোরো ধান ও আনাজ চাষ হয়েছে। টানা কয়েক সপ্তাহ ভারী বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুরের জল তলানিতে। অপেক্ষায় আছি, একটু বৃষ্টি হলেই চারা পোনা ফেলব।”

হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাড়োয়া, মিনাখাঁয় বহু মানুষ মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। বড় বড় ভেড়ি আছে এলাকায়। মিনাখাঁর মাছ চাষি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “প্রায় ষাট বিঘা জমিতে ভেড়ি রয়েছে। বাগদা চিংড়ি, গলদা চিংড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের মাছের চাষ হয়। প্রখর রোদে কিছু দিন ধরে জলস্তর ক্রমশ কমছে। জল গরম হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রচুর বাগদা চিংড়ি মরেছে। অন্যান্য মাছের অবস্থাও খারাপ। বৃষ্টি না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।” মিনাখাঁর জয়গ্রাম গ্রামের বাসিন্দা শুভদীপ সরকার বলেন, “দু’টো ভেড়িতে গলদা চিংড়ি ও বাগদা চিংড়ি ও সাদা মাছের চাষ হয়। একটা ভেড়িতে ইতিমধ্যেই জলস্তর নেমে যাওয়ায় চিংড়ির রোগ দেখা দিয়েছে। মরতে শুরু করেছে।” হাসনাবাদের উত্তর বিশপুর গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ মণ্ডল বলেন, “ছ’টা ভেনামি চিংড়ি চাষের পুকুর আছে। বৃষ্টি না হওয়ায় খুবই সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

সন্দেশখালির কোরাকাটি পঞ্চায়েতের প্রধান দীপালি গায়েন বলেন, “এলাকার বহু মাছ চাষি বিপাকে পড়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা আর্থিক কারণে গভীর পুকুর খনন করতে পারেননি, তাঁদের বেশি সমস্যা হচ্ছে।” দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা মৎস্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “রোদের তাপে পুকুরের জলের তাপমাত্রাও ৩৬-৩৭ ডিগ্রি হয়ে যাচ্ছে। জলে অক্সিজেন কমে যাওয়ায় মাছের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি পুকুর থেকে মেশিনে জল তুলে আবার ওই পুকুরে ফেললে, উপরের জল নীচের সঙ্গে মিশে কিছুটা সুরাহা হতে পারে। অন্য কোনও জলাশয় থেকেও মেশিনের সাহায্যে পুকুরে জল নেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি, তাল পাতা দিয়ে পুকুরের কিছুটা অংশ ছাউনি করা যেতে পারে। তাতে পুকুরের জল কিছুটা হলেও ঠান্ডা থাকবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

summer Fishes Fishing Water crisis hot temperature
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy