ধৈর্যের-পরীক্ষা: অশোকনগরে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজের জন্য নাম নথিভুক্ত করার লাইন। ভ্যাকসিন নিতে আসতে হবে আবার অন্য দিন। বুধবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি
৮ লক্ষ মানুষ এখনও পর্যন্ত ভ্যাকসিন পেয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনায়। তার মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৭ লক্ষ। মঙ্গলবার পর্যম্ত পাওয়া এই পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে আপাতত প্রথম ডোজের তুলনায় দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়ার উপরে জোর দিচ্ছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, ভ্যাকসিনের জোগান এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত নয় বলেই জানাচ্ছেন আধিকারিকেরা। এ দিকে, দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন না পেলে প্রথম ডোজের কার্যকারিতাও থাকবে না। ফলে যতক্ষণ পর্যন্ত জোগান স্বাভাবিক না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত জোর দেওয়া হচ্ছে দ্বিতীয় ডোজের উপরেই।
মঙ্গলবার ভ্যাকসিনের বিষয়ে জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রয়োজনের তুলনায় প্রতিষেধকের মজুত কম। তাই দ্বিতীয় প্রতিষেধক দেওয়ার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ, যাঁরা ইতিমধ্যেই প্রথম ডোজ নিয়েছেন, সময়ের মধ্যে তাঁদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়াটা জরুরি। তা না হলে প্রথম ডোজ নেওয়ার কার্যকারিতা থাকবে না। তবে যে সব হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিষেধক মজুত স্বাভাবিক, যেখানে দু’টো ডোজই দেওয়া হবে।’’ জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, ‘‘প্রতিষেধক সরবরাহ কম। যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনই মানুষকে দেওয়া হচ্ছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার থেকে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যে সব হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রতিষেধক মজুত স্বাভাবিক, সেখানে মানুষকে ভ্যাকসিনের প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ দু'টোই দেওয়া হবে।
বুধবার জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল এবং ব্লক স্বাস্থ্য দফতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বেশিরভাগ হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে এ দিন ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়নি। তবে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ। এর ফলে এ দিন অনেক মানুষকে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসে করোনার প্রথম ডোজ না নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে। কবে তাঁরা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পাবেন, তা নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি বলে অভিযোগ।
বনগাঁ মহকুমা হাসপাতালে এ দিন করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিতে এসেছিলেন প্রণব চক্রবর্তী। বললেন, ‘‘ভ্যাকসিন নিতে পাঁচ দিন ধরে হাসপাতালে ঘুরছি। সকালে এলেও লাইনে প্রচুর ভিড় থাকায় ভ্যাকসিন কপালে জোটেনি। এদিন লাইনে দাঁড়ানো কাউকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি। বুধবার হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, ১ মে এসে খোঁজ নিতে।’’ হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, বারাসত জেলা হাসপাতালেও ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিতে এসে অনেকে ফিরে গিয়েছেন। এক বৃদ্ধ বাড়ি ফেরার সময়ে বলে গেলেন, ‘‘জেলায় করোনা লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়ির আশপাশে রোগীতে ভরে গিয়েছে। আমরা আতঙ্কিত। অথচ হাসপাতালে এসেও প্রতিষেধক পেলাম না। আমাদের মতো বৃদ্ধ মানুষ কী ভাবে বাঁচবে?’’
এত দিন কেন ভ্যাকসিন নেননি? কিছু দিন আগেও তো ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত সরবরাহ ছিল। অনেক বৃদ্ধের বক্তব্য, কিছু দিন আগে পর্যন্ত তো করোনা পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ ছিল না। তা ছাড়া, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়েও সংশয়ে ছিলেন অনেকে।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন ধরেই জেলায় ভ্যাকসিনের সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় কম। প্রবীণ মানুষেরা গভীর রাত থেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতালে ভিড় করেও প্রতিষেধক পাননি। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন বনগাঁ মহকুমা হাসপাতাল, হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল, বারাসত জেলা হাসপাতাল বা বনগাঁ-গাইঘাটা-বাগদা ব্লকের মতো বেশিরভাগ ব্লকেই করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ।
তবে ব্যারাকপুরের বিএন বসু মহকুমা হাসপাতালে এ দিন ভ্যাকসিনের প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজ দু'টোই দেওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy