Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
হাওড়ায় বিষমদ কাণ্ডে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনা মগরাহাট-কাণ্ডের স্মৃতি উসকে দিচ্ছে। কেমন আছেন মগরাহাটে বিষমদে মৃতদের পরিবারগুলি? হাওড়ার ঘটনা নিয়ে কী তাঁদের প্রতিক্রিয়া, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। চোলাইয়ের রমরমা বন্ধ হলেও এখন নানা প্রান্তে চলছে দেশি মদের বেআইনি কারবার। যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে বিপত্তি।
Hooch

Howrah Hooch Death: হাওড়া-কাণ্ডে কঠোর শাস্তি চান মগরাহাটে বিষমদে মৃতদের পরিবার

মগরাহাটের বিষমদ কাণ্ডে মৃতদের পরিবার এ বার হাওড়ার বিষমদে মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব।

অসহায়: দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন স্বামীহারা তমিনা বেওয়া।

অসহায়: দুই নাবালক সন্তানকে নিয়ে কোনও রকমে সংসার চালাচ্ছেন স্বামীহারা তমিনা বেওয়া। নিজস্ব চিত্র।

দিলীপ নস্কর
মগরাহাট শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০২২ ০৭:২৩
Share: Save:

এগারো বছর পেরিয়ে গিয়েছে। স্মৃতিতে আজও সেই মৃত্যু-মিছিল।

মগরাহাটের বিষমদ কাণ্ডে মৃতদের পরিবার এ বার হাওড়ার বিষমদে মৃত্যুর ঘটনায় দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব।

২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর মগরাহাট, মন্দিরবাজার ও উস্তির ১৭৫ জন মানুষ মারা যান বিষাক্ত চোলাই খেয়ে। অন্ধ হয়ে গিয়েছেন অনেকে। অসংখ্য পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে ঘটনার অভিঘাতে। বিষমদ কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মগরাহাটের বিলন্দপুরের বাসিন্দা নূর ইসলাম ফকির ওরফে খোঁড়া বাদশা এখন জেলে।

খোঁড়া বাদশার বাড়ির পাশেই ছিল তার চোলাই মদ তৈরির ভাটি। সেখান থেকে পাইকারি দরে চোলাই কিনে বিক্রি হত বিভিন্ন স্টেশন চত্বরে ও ঠেকে। সংগ্রামপুর স্টেশন চত্বরেও কিছু ঠেকে বিক্রি হত ওই মদ। বিভিন্ন ঠেকে মদ খেয়ে সে দিন গিয়েছিল এতগুলি প্রাণ। মন্দিরবাজার, মগরাহাট, উস্তি গ্রামে গ্রামে ওঠে কান্নার রোল।

সরকার মৃতদের পরিবার-পিছু ২ লক্ষ করে টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে। তবে সে টাকা এককালীন নয়। ডাকঘরে গচ্ছিত থাকবে। তা থেকে প্রতি মাসে ১ হাজার ৪৫০ টাকা করে পাবে পরিবারগুলি। বর্তমানে মৃতদের পরিবারের সদস্যেরা ডাকঘর থেকে মাসে বারোশো টাকা করে পাচ্ছেন বলে জানালেন। তবে অগ্নিমূল্যের বাজারে ওই টাকায় সংসার চলে না, জানালেন সকলেই।

মগরাহাট ১ ব্লকের পদ্মেরহাট গ্রামের আয়নাল মোল্লার প্রাণ গিয়েছিল বিষমদে। তাঁর পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকাও পেত। কিন্তু আয়নালের স্ত্রী মাজেদা মারা যাওয়ার পরে টাকা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের মেয়ে রোশনারা খাতুন বলেন, ‘‘মায়ের মৃত্যুর পর থেকে প্রায় এক বছর ধরে কোনও টাকা পাচ্ছি না। বাবা ভ্যান চালিয়ে সংসারচালাতেন। এখন কোনও মতেসংসার চলছে। টাকাটা পাওয়ারব্যবস্থা করলে খুব ভাল হয়।’’ তাঁর দাদা শুকুর আলি মোল্লা জানালেন, বিষমদ খেয়ে এই পাড়ায় তিনজন মারা গিয়েছিলেন। হাওড়ার বিষমদ কাণ্ডের কথা শুনেছেন তিনি। শুকুরের কথায়, ‘‘প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতাদের মদতে এই সব বেআইনি কারবার চলে। প্রশাসন কঠোর হাতে ব্যবস্থা নিলে এমন ঘটনা ঘটত না। ওই মদ বিক্রেতার কঠোর শাস্তি পাওয়া উচিত।’’

মন্দিরবাজারের ভারীউড়ান গ্রামের দিনমজুর নিরঞ্জন বর বিষ মদ খেয়ে মারা যান। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন। দু’চোখ অন্ধ বৃদ্ধা স্ত্রী শচীদেবী ও এক ছেলে বাড়িতে রয়েছেন। বৃদ্ধা জানালেন, বারোশো টাকা করে প্রতি মাসে পাচ্ছেন। তবে তাতে সংসার চলে না। ছেলে কাজকর্ম করতেও পারে না। খুব কষ্টেরমধ্যে আছেন।

এই পাড়ায় ৮ জন বিষমদ খেয়ে মারা গিয়েছিলেন। উত্তর ঝাঁপবেড়িয়া গ্রামের মইনুদ্দিন জমাদারও আছেন তাঁদের মধ্যে। তাঁর দুই নাবালক ছেলে, দুই মেয়ে রয়েছে।

মইনুদ্দিনের স্ত্রী তমিনা বেওয়া বললেন, ‘‘রোজগেরে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে খুব কষ্টে আছি। কোনও মতে একবেলা খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। সরকার বরাদ্দ বাড়ালে খুব ভাল হয়।’’ হাওড়ার বিষমদ কাণ্ডের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘যারা মদ বিক্রির সঙ্গে যুক্ত, তাদের কঠোর শাস্তি হোক।’’

বিষমদ খেয়ে দু’চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন মন্দিরবাজারের ঝাঁপবেড়িয়া ঘোষপাড়ার কাশীনাথ ঘোষ। দুই ছেলেমেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে সংসার। ঝাঁপবেড়িয়া মোড়ে একটি ছোট্ট পান-বিড়ির দোকান সামলান স্ত্রী টুম্পা। তিনি জানালেন, সরকার মৃতদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিল। অথচ, আমার স্বামী সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে গেলেও কোনও ক্ষতিপূরণ পেলাম না। দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাতে পারছি না। খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছি। সরকার যদি আর্থিক সাহায্য করে, খুবই ভাল হয়।’’

তবে ওই ঘটনার পর থেকে সংগ্রামপুর বা আশপাশের এলাকায় চোলাইয়ের ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়েছে বলে জানালেন অনেকেই। কিন্তু যাঁদের পরিবারর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, তাঁরা এখনও এই ঘটনার জন্য দুষছেন পুলিশ-প্রশাসনের উদাসীনতাকেই। তাঁদের অনেকেরই মতে, আগে থেকে এই কারবার যদি বন্ধ করা যেত, তা হলে এতগুলো পরিবার এমন তছনছ হয়ে যেত না।

অন্য বিষয়গুলি:

Hooch Magrahat Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy