প্রতিরোধ: বাসিন্দাদের তাড়া খেয়ে পালায় বহিরাগতেরা। ফেলে গিয়েছে বাইক। বনগাঁ পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
শুরুটা হয়েছিল শনিবার রাত থেকে। সাড়ে ৯টা নাগাদ বোমাবাজি হয় বনগাঁ পুরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরএস মাঠ এলাকায়। বাসিন্দারা লাঠিসোঁটা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। দুষ্কৃতীরা পালায়। পুলিশ গিয়ে একটি বোমা উদ্ধার করে।
রাত যত বেড়েছে, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বোমাবাজি হয়েছে। বহিরাগতেরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে শহরের গলিঅলিতে বাইক নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় বলে অভিযোগ। অতীতে কোনও ভোটের আগে শহরে এমন বোমাবাজির কথা মনে করতে পারছেন না ভোটারেরা।
রাত যে সুরে বাঁধা হয়েছিল, ভোটের সকালেও সেই তারেই বাঁধা হল ভোটপর্ব।
বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে একের পর এক বুথ দখল, ছাপ্পার অভিযোগ উঠেছে দিনভর। পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ছাপ্পা ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে বিজেপি, সিপিএম, নির্দল প্রার্থীরা। নির্দল প্রার্থী সুমিত্রা দত্ত রায়ের দাবি, তাঁকে এবং দুই মেয়েকে মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। দু’টি মোবাইল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সুমিত্রা বলেন, ‘‘আমার মেয়ে এজেন্ট ছিল। তাঁকে বসতে দেওয়া হয়নি। প্রতিবাদ করলে মারধর করা হয়।’’
বিজেপি প্রার্থী সীমা বিশ্বাস কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ‘‘এক জনের ভোট অন্য জন দিয়ে দিচ্ছে। এ ভাবে কী ভোট হয়!’’
ছাপ্পার অভিযোগ তুলে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী শিপ্রা বাইন সকালে বনগাঁ থানার সামনে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ধর্নায় বসেন। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের লোকজন কাউকে ভোট দিতে দিচ্ছে না। হাতে কালি লাগিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একই অভিযোগে পরে ধর্নায় যোগ দেন নির্দল ও বিজেপি প্রার্থীরা।
পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ছিল শক্তিগড় হাইস্কুলে। বিজেপি প্রার্থী দীপ্তেন্দু বিকাশ বৈরাগীর অভিযোগ, বহিরাগতেরা ছাপ্পা মারে। প্রতিবাদ করায় তাঁকে মারধর করা হয়েছে। বুথের কাছে বোমাবাজিও হয়। বিজেপি এজেন্ট লক্ষ্মণচন্দ্র ঘোষকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। বাটারমোড় এলাকায় যশোর রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি।
ছাপ্পা, সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডেও। দুষ্কৃতীরা সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের বাঁচাতে গেলে দু’জন স্কুল শিক্ষিকা তথা সিপিএম কর্মীকে দুষ্কৃতীরা মারধর, গালিগালাজ করে বলে অভিযোগ।
দুপুরে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে জীবনী কলোনি জিএসএফপি স্কুলে তৃণমূলের লোকজন ছাপ্পা দেয় বলে অভিযোগ। কংগ্রেস প্রার্থী দেবযানী চট্টোপাধ্যায়ের মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়েছে বলে অভিযোগ। মহিলারা প্রতিবাদ করায় দুষ্কৃতীরা পালায়। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী বন্দনা মুন্সির স্বামী সত্যেন্দ্র মুন্সির পাল্টা অভিযোগ, তিনি ভোট দিতে গিয়ে দেখেন কংগ্রেস প্রার্থী দেবযানী এবং তাঁর স্বামী শুভম বহিরাগতদের জড়ো করেছেন। প্রতিবাদ করলে তাঁদের নির্দেশে মারধর করা হয়। সত্যেন্দ্রের মাথায় তিনটি সেলাই পড়েছে।
দুপুরে ১ নম্বরে ওয়ার্ডে বহিরাগতেরা ভোট লুট করতে আসে বলে অভিযোগ। বাসিন্দারা একজোট হয়ে তাড়া করেন। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালায়। কয়েকটি বাড়ির কাচ, ইটপাটকেল মেরে ভেঙে দেয় তারা। কিছু বাইক ফেলে গিয়েছে।
বিকেলে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে বহিরাগতেরা ছাপ্পা দিতে গেলে নির্দল ও বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা প্রতিরোধ করেন। তাঁদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। ভোট শেষে ইভিএম ও ভোটকর্মীদের আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখান বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, বহিরাগতদের গ্রেফতার করতে হবে। পুলিশের আশ্বাসে সমস্যা মেটে।
বিরোধীদের অভিযোগ, হাতে গোনা কয়েকটি ওয়ার্ড ছাড়া সব ওয়ার্ডেই বহিরাগতেরা ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। অভিযোগ তির সব ক্ষেত্রেই তৃণমূলের দিকে। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাও ছিল দর্শকের, অভিযোগ তুলছেন বিরোধীরা।
সিপিএম নেতা পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘ব্যাপক রিগিং, সন্ত্রাস হয়েছে। দু’একটি ওয়ার্ড ছাড়া সব জায়গাতেই কমবেশি অবৈধ ভোট পড়েছে। বহিরাগতদের আটকাতে পারলে এই অবাঞ্ছিত পরিবেশ তৈরি হত না। আমাদের দাবি, কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ফের ভোট করাতে হবে।’’
বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিজেপির অশোক কীর্তনীয়া বলেন, ‘‘ভোটের নামে প্রহসন হল। গণতন্ত্রকে হত্যা করা হল। পুলিশ দাঁড়িয়ে থেকে এ সব করিয়েছে।’’
অশান্তির অভিযোগ অস্বীকার করে বনগাঁ পুরভোটে তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘বিরোধীরা মাঠে ছিল না। মানুষ ওদের সঙ্গে নেই। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। বিরোধীশূন্য বোর্ড হবে।’’
বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy