বিক্ষোভ: অস্থায়ী কর্মীদের। —ফাইল চিত্র।
চার দিন পার হওয়ার পরেও মিটল না ভাটপাড়া পুরসভার সাফাই কর্মীদের কর্মবিরতি। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মী বৃহস্পতিবার থেকে বকেয়া বেতন-সহ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ, আন্দোলনের শুরু থেকেই বেপাত্তা ভাটপাড়ার পুরপ্রধান সৌরভ সিংহ। আর তাতেই ক্ষোভ বাড়ছে আন্দোলনকারীদের।
এ দিকে সাফাইকর্মীরা কাজ বন্ধ করায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় জমছে জঞ্জালের স্তূপ। এখন নিয়মিত বৃষ্টি হচ্ছে। তার ফলে অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা। আজ, সোমবার ফের পুরসভার গেট আটকে তাঁরা বিক্ষোভ দেখাবেন বলে জানিয়েছেন সাফাইকর্মীরা। পুরসভার সামনে খিচুড়ি রান্না করে দিনভর আন্দোলন চালাবেন।
ভাটপাড়া পুরসভায় অস্থায়ী কর্মীর সংখ্যা প্রায় চার হাজার। তার মধ্যে সাড়ে তিন হাজার সাফাই কর্মী। গত এপ্রিল থেকে অস্থায়ী কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এর আগে বেতনের দাবিতে একাধিকবার পুর কর্তৃপক্ষের কাছে দরবার করেছেন তাঁরা। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বারবার দরবার করেও প্রাপ্য না মেলায় আগে থেকেই কর্মবিরতির হুমকি দিয়ে রেখেছিলেন সাফাই কর্মীরা। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয় সেই আন্দোলন।
এপ্রিল মাস থেকেই ভাটপাড়া পুরসভায় ডামাডোল চলছে। গত ন’বছর ধরে পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন ভাটপাড়ার বিধায়ক, তৃণমূলের অর্জুন সিংহ। লোকসভা ভোটের আগে দল বদলে বিজেপিতে যোগ দেন। তার পরেই তৃণমূলের আনা অনাস্থা ভোটে হেরে পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত হন অর্জুন। তখন থেকে বেতন বাকি অস্থায়ী কর্মীদের। এর আগেও বেশ কয়েকবার তাঁদের বেতন বকেয়া পড়েছিল। আন্দোলনে নেমেই তা আদায় করেছিলেন সাফাই কর্মীরা। লোকসভা ভোটের পরে আস্থা ভোটে জিতে পুরপ্রধান হন অর্জুনের ভাইপো সৌরভ।
অস্থায়ী কর্মীরা জানান, গত ১০ বছরে প্রায় তিন হাজার সাফাই কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এত বেশি সংখ্যক সাফাই কর্মী নিয়োগ নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। কারণ সাফাই কর্মীদের বেতন রাজ্য সরকার দেয় না। পুরসভাকেই তার সংস্থান করতে হয়। ফলে বিপুল সংখ্যক কর্মীদের বেতনের টাকা মেটাতেই তাদের ভাঁড়ার খালি হওয়ার জোগাড় হয় বলে জানালেন পুরসভার এক আধিকারিক।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত দশ বছর ধরে অস্থায়ী কর্মীরা দৈনিক ১৯৭ টাকা হারে মজুরি পান। ৩০ দিন কাজ করলে এক জন কর্মী মাসে প্রায় ছ’হাজার টাকা পান। চার হাজার কর্মীর বেতন মেটাতে প্রায় দু’কোটি টাকা খরচ হয়। এই মুহূর্তে পাঁচ মাসের বকেয়া মেটাতে পুরসভার প্রায় দশ কোটি টাকার প্রয়োজন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, অত টাকা এখন তাঁদের ভাঁড়ারে নেই। ফলে যত দিন যাচ্ছে, সমস্যা ততই জটিল হচ্ছে।
প্রণয় দত্ত এই পুরসভার এক জন অস্থায়ী কর্মী। তাঁর বাবা মরণ দত্ত এবং মা পুতুল দত্তও ওই পুরসভার অস্থায়ী কর্মী। মরণ ২৮ বছর ধরে এবং পুতুল ২০ বছর ধরে পুরসভায় একই পদে কাজ করছেন। দু’বছর আগে সুপারভাইজার পদে যোগ দিয়েছেন প্রণয়। তাঁরা জানালেন, এই মুহূর্তে পাঁচ মাসের বেতন এবং পুজোর বোনাস না দেওয়া হলে তাঁরা কাজে যোগ দেবেন না। তিনি বলেন, ‘‘নাগরিক পরিষেবা ব্যহত হচ্ছে বুঝতে পারছি। তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমাদেরও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।’’
সাফাই কর্মীদের ক্ষোভ, ঘটনার পর থেকে পুরপ্রধান তাঁদের মুখোমুখি হননি। সাফাই কর্মীরা জানিয়েছেন, পুরো টাকা না দেওয়া হলে তাঁরা কাজ শুরু করবেন না। এমনকি লিখিত প্রতিশ্রুতি পেলেও না। যখন বেতনের টাকা তাঁদের অ্যাকাউন্টে ঢুকবে, সেই মুহূর্তেই তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে কাজে ফিরবেন।
গত কয়েকদিনের মতো রবিবারও মোবাইল ‘সুইচড অফ’ সৌরভের। উপ-পুরপ্রধান সোমনাথ তালুকদার বলেন, ‘‘সাফাই কর্মীদের আন্দোলনে আমার নৈতিক সমর্থন রয়েছে। কিন্তু আমাদের হাতে অর্থ নেই। আমাদের দু’কোটির বেশি আটকে রেখেছে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। সেই টাকা পেলেই সমস্যা পুরোপুরি মিটে যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy