দৃঢ়: পরীক্ষা দিয়ে ফেরার পরে মায়ের সঙ্গে কাশ্মীর। নিজস্ব চিত্র
ভোরে উঠে বই নিয়ে পড়তে বসেছিল কাশ্মীর। শনিবার ছিল মাধ্যমিকের ভূগোল পরীক্ষা। ভাল ফল করে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে ছেলেটি।
পড়তে পড়তেই হঠাৎ কানে এল, পড়শিদের কান্না। কান খাড়া করে কাশ্মীর জানতে চায়, কার কী হল!
কয়েক মিনিটের মধ্যেই সমবেত কান্নার রোলটা এসে হাজির তারই বাড়ির আঙিনায়। কাশ্মীর জানতে পারল, গত রাতে পথ দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন তার বাবা।
শুক্রবার রাতে ওড়িশার কটকের কাছে জাজপুর জেলার ছাপড়া ধর্মশালা থানা এলাকায় দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন মাটিয়ার নেহালপুর সর্দারপাড়ার বাসিন্দা, কাশ্মীরের বাবা সুরজ মণ্ডল। গ্রামের আরও ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে ওই দুর্ঘটনায়। বাড়িতে বাড়িতে কান্নার রোল। শনিবার তবু চোখের জল মুছতে মুছতেও পরীক্ষা দিতে গিয়েছে কাশ্মীর।
তার কথায়, ‘‘অনেক কষ্টে রোজগার করে পড়াচ্ছিল বাবা। আমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। অকালে চলে গেলেও বাবার স্বপ্নকে কোনও ভাবে নষ্ট হতে দিলে চলবে না। পড়াশোনা আমাকে চালিয়ে যেতেই হবে।’’
কাশ্মীরের এই মনোবল দেখে বিস্মিত পাড়া-পড়শিরা। সাধুবাদ জানিয়েছেন ধান্যকুড়িয়া হাইস্কুলের শিক্ষকেরাও। এই স্কুলেরই ছাত্র কাশ্মীর এ বার মাধ্যমিক দিচ্ছে। সিট পড়েছে বুনোরআটি হাইস্কুলে।
এ দিন সর্দারপাড়ায় গিয়ে জানা গেল, সুরজ মুরগির গাড়ি চালাতেন। স্ত্রী নুপুরা বিবি, ছেলে কাশ্মীর এবং মেয়েকে নিয়ে ছিল সংসার। হঠাৎই সে সংসারে নেমে এল এমন বিপত্তি।
কাশ্মীরের স্কুলের প্রধান শিক্ষক নাসির আলম বলেন, ‘‘ও পড়াশোনায় বরাবরই ভাল। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কাশ্মীরের বাড়ি এবং পরীক্ষা কেন্দ্রে যাই। যে ভাবে নিজেকে সংযত রেখে আজ ও পরীক্ষায় বসল, তা সকলের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’’
দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন গ্রামের বাসিন্দা আমির আলি সর্দারও। তিনি ছিলেন পেশায় শ্রমিক। যখন যে কাজ পেতেন, ঢুকে পড়তেন। এক ছেলে, এক মেয়ে। হতদরিদ্র পরিবার। সেই পরিবারেও নেমে এসেছে বিষাদ।
করিম সর্দারের বাড়ি একই পাড়ায়। মারা গিয়েছেন তিনিও। বছর সাতাশের আরিফ সর্দারও মৃত। তাঁর মেয়ে, স্ত্রী এবং বাবা-মা আছেন। দুর্ঘটনায় মৃত জাহাঙ্গির সর্দারের দুই মেয়ে, স্ত্রী। মারা গিয়েছেন মোয়াজ্জেম সর্দার। তিনি অবশ্য বিয়ে-থা করেননি। আমজেদ আলি সর্দারের বাড়িতে স্ত্রী, ভাই, বাবা-মা। দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না কেউ। এলাকায় কার্যত এ দিন অরন্ধন। দরমা, টিন-টালির ঘর দেখিয়ে আমজেদের স্ত্রী বলেন, ‘‘এই তো দেখছেন অবস্থা। পাড়ার সকলেরই প্রায় এই হাল। সংসার কী ভাবে চলবে জানি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy