Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
school

Excluded from school: স্কুলছুট পড়ুয়াদের দুয়ারে শিক্ষক, উদ্যোগ গাইঘাটায়

অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া আরিফ মণ্ডল। পড়াশোনা বন্ধ করে সেও এখন বাবা জলিল মণ্ডলের সঙ্গে খেতমজুরির কাজ করছে। আরিফের সহপাঠী আফতাব মণ্ডলও নেমে পড়েছে খেতমজুরির কাজে।

n পরিদর্শন: পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষকেরা।

n পরিদর্শন: পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন শিক্ষকেরা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

সীমান্ত মৈত্র  
গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০২১ ০৭:৩২
Share: Save:

মলয় দশম শ্রেণির ছাত্র। তার দাদা মানস পাল এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তাদের বাবা মহাদেব পাল ভ্যানচালক। মা গৃহ সহায়িকার কাজ করেন। করোনা পরিস্থিতিতে পরিবারের আয় তলানিতে ঠেকেছে। বাড়িতে সাহায্য করতে দুই ভাই পড়াশোনা ছেড়ে কাজ নিয়েছে পোশাক বিক্রির দোকানে। বাড়তি রোজগার হওয়ায় খুশি তাদের
বাবা-মা।

অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া আরিফ মণ্ডল। পড়াশোনা বন্ধ করে সেও এখন বাবা জলিল মণ্ডলের সঙ্গে খেতমজুরির কাজ করছে। আরিফের সহপাঠী আফতাব মণ্ডলও নেমে পড়েছে খেতমজুরির কাজে।

এরা সকলেই গাইঘাটার চাঁদপাড়া বাণী বিদ্যাবীথি স্কুলের পড়ুয়া। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু এরাই নয়, বিদ্যালয়ের অনেক পড়ুয়াই এখন পড়াশোনা বন্ধ করে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে পড়েছে। এই বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্য ১৮০০। পড়ুয়াদের মধ্যে অনেকেই দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা পরিবারের সন্তান। করোনা পরিস্থিতিতে এই পরিবারগুলির আর্থিক সমস্যা আরও বেড়েছে। তার আঁচ এসে পড়েছে পড়ুয়াদের
উপর। ফলে, পড়াশোনা ছেড়ে রোজগারের তাগিদে কাজে যোগ দিচ্ছে অনেকেই।

এই প্রবণতা রুখতে উদ্যোগী হয়েছেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। স্কুল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক অবস্থা সরেজমিনে দেখতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা সকল পড়ুয়াদের বাড়িতে যাবেন। এই পদক্ষেপের নামকরণ করা হয়েছে ‘ছাত্রের দুয়ারে শিক্ষক’। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা একটি সমীক্ষা রিপোর্ট বানিয়েছেন। সেখানে ছাত্রছাত্রীদের ফোন নম্বর ও অন্যান্য তথ্য থাকছে। শিক্ষক শিক্ষিকারা তাদের সঙ্গে সংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, তাঁরা তাঁদের ১ দিনের বেতন দান করেছেন। তা দিয়ে পড়ুয়াদের উপহার ও স্কুল থেকে রেশন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছে শিক্ষা দফতর। সোমবার স্কুল শিক্ষা দফতরের বনগাঁ মহকুমার অতিরিক্ত বিদ্যালয় পরিদর্শক দিব্যেন্দু পাল স্কুলে গিয়ে কর্মসূচির সূচনা করেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা রয়েছেন ৪৪ জন। এদিন তাঁরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে টোটোতে করে ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে তাঁদের খোঁজ নেওয়ার কাজ শুরু করেন। যারা ইতিমধ্যে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, তাদের আবার পড়াশোনা শুরু করতে উৎসাহিত করা হয়। প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের কোনও পরিস্থিতিতেই পড়াশোনা ছাড়তে দেওয়া হবে না। অভিভাবকদের বলা হয়েছে, যে কোনও সমস্যায় আমাদের জানাতে। পড়ুয়াদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন শিক্ষকেরা।’’

তিনি আরও জানান, স্কুলের অনেক পড়ুয়াই নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে যোগ দিচ্ছে না। মিড-ডে মিল নিতেও আসছে না অনেকে। এই পড়ুয়াদের শনাক্ত করে তাদের উপর বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। কোনও পরিবার আর্থিক অনটনের মধ্যে রয়েছে কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিন শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললেন। পড়াশোনায় উৎসাহ দিতে তাদের হাতে দুটি খাতা, দুটি পেন, বিদ্যালয়ের লোগো লাগানো একটি মাস্ক এবং কিছু চকোলেট তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষক শিক্ষিকারা মনে করছেন, এই কর্মসূচির ফলে পড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ফিরবে এবং শিক্ষক-ছাত্রের বন্ধনও দৃঢ় হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

school Gaighata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy