টাকি গ্রামীণ হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র Sourced by the ABP
জাতীয় প্রকল্পে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার মাপকাঠিতে রাজ্যে প্রথম হল উত্তর ২৪ পরগনার টাকি গ্রামীণ হাসপাতাল। রাজ্যের মোট ৩৭৮টি গ্রামীণ হাসপাতালের মধ্যে টাকি হাসপাতালের এই স্বীকৃতিকে বড় সাফল্য বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য প্রশাসনের কর্তারা। স্বাস্থ্যভবনের গুণমান বিভাগের আধিকারিক নির্মাল্য রায় বলেন, ‘‘এই সাফল্য অন্য হাসপাতালকেও উৎসাহিত করবে বলে আশা করছি।’’
কেন্দ্রের ন্যাশনাল হেলথ মিশনের অন্তর্গত ‘কায়াকল্প’ প্রকল্প চালু হয় ২০১৩ সাল থেকে। বছরে এক বার করে এই প্রতিযোগিতা হয়। প্রকল্পের উদ্দেশ্য, সরকারি হাসপাতালের রোগী পরিষেবা উন্নত করা ও হাসপাতালের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ভাল করতে উৎসাহ ও স্বীকৃতিদান। প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথমে নিজেকে মূল্যায়ন করেন। ৭০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করলে তারপরে স্বাস্থ্যজেলার গুণগত মান নির্ণায়ক বিভাগ থেকে প্রতিনিধিরা মূল্যায়ন করতে আসেন হাসপাতালে। সেখানেও হাসপাতাল অন্তত ৭০ শতাংশ নম্বর পেলে তবে পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত হয় হাসপাতাল। এর পরের স্তরে রাজ্য স্বাস্থ্যভবন থেকে পরিদর্শনে আসেন কর্তারা। তাঁদের মূল্যায়নে পাশ করলে তবে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরিদর্শক দল আসে হাসপাতালে। টাকি হাসপাতালে চূড়ান্ত পর্যায়ের পরিদর্শন হয়েছিল ৩ মার্চ। পরিদর্শক দলের সদস্যেরা চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মূলত আটটি বিষয় পরিদর্শকেরা খতিয়ে দেখেন। এর মধ্যে হাসপাতাল চত্বরের ব্যবস্থা, পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জীবাণু নিয়ন্ত্রণ, রোগী সহায়তা পরিষেবা, স্বাস্থ্য সচেতনতা বিধি প্রচার ও হাসপাতালের বাইরের পরিবেশ— এই ৭টি বিষয়ে একশো শতাংশ নম্বর পেয়েছে টাকি হাসপাতাল। হাসপাতাল কতটা পরিবেশবান্ধব, সেই বিষয়ে ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। ৭০০ নম্বরের পরীক্ষায় টাকি হাসপাতাল পেয়েছে ৬৯৮ নম্বর। রাজ্যে প্রথম হওয়ায় এই হাসপাতাল সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকারও বেশি আর্থিক সাহায্য পাবে।
হাসপাতালের কর্তারা জানান, এই হাসপাতাল গত বছর কেন্দ্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রকের মূল্যায়ন অনুযায়ী ‘এনকোয়াস’ (ন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিওরেন্স স্ট্যান্ডার্ডস) স্বীকৃতি পেয়েছে। সে বারও প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয় এই হাসপাতাল। হাসপাতালের মুকুটে যেমন নানা পালক যুক্ত হচ্ছে, তেমনই রোগীর চাপও বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। তবে কয়েক বছর আগেও এই হাসপাতালে রোগীরা তেমন আসতেন না। স্বাস্থ্যভবনের গুণমান বিভাগের আধিকারিক নির্মাল্য রায়ও জানাচ্ছেন, একটা সময়ে অনেক পিছিয়ে ছিল এই হাসপাতাল। তাঁর কথায়, ‘‘আজ এত বড় সাফল্য সম্ভব হল ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের নেতৃত্বে সকলে খুবই ভাল কাজ করায়।’’
হাসনাবাদের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক শাহিন হাসান বলেন, “এটা সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সকলের ভূমিকা আছে। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি, রোগী পরিষেবার মান আরও উন্নত করতে।’’ এখন হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ ও টাকি পুরসভা এলাকার মানুষের মূল ভরসা এই হাসপাতাল। প্রতিদিন হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৫০০ জন রোগী আসেন। শাহিন জানান, হাসপাতালে সদ্য চালু করা হয়েছে প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগ, বয়স্ক বিভাগ, চোখের চিকিৎসার বহির্বিভাগ। প্রসূতিদের জন্য অস্ত্রোপচার বিভাগ ও চোখের অস্ত্রোপচার বিভাগ দ্রুত চালু হতে চলেছে। শাহিনের কথায়, ‘‘এই সাফল্য হাসপাতালকে আরও এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy