এখানেই ছিল সুখ সাধুর ভিটে। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
‘সুখ সাধুর ভিটে’ এক সময়ে সব সুখ কেড়ে নিয়েছিল সুটিয়ার।
ঝোপজঙ্গলে ঘেরা ওই এলাকা ছিল সুশান্ত চৌধুরী, বীরেশ্বর ঢালিদের আড্ডাখানা। সেখানেই এলাকার মেয়ে-বৌদের তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হত। কেউ ভয়ে টুঁ শব্দ করার সাহস পেতেন না। কারও কারও বাড়িতে ঢুকেও মহিলাদের উপরে অত্যাচার চালাত এই দুষ্কৃতীরা।
পরে বিষয়টি জানাজানি হয়। রাজ্য জুড়ে শুরু হয় তোলপাড়। একে একে ধরা পড়ে সুশান্ত-বীরেশ্বররা। ২০০০-০২ সাল নাগাদ ওই ঘটনায় এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছিল প্রতিবাদী মঞ্চ। তার সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার তেলঙ্গনা-এনকাউন্টার প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জড়িতদের এনকাউন্টারে মৃত্যু ভালই হয়েছে। কারণ, আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক ক্ষেত্রে আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় ধর্ষক। দোষীদের সাজা পেতে পেতে ৫-১০ বছর কেটে যায়। পুরো সময়টা জুড়ে অসম্ভব মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন নির্যাতিতা। অনেক ক্ষেত্রে হুমকির মুখে পড়তে হয়।’’
উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার সুটিয়ায় প্রতিবাদী মঞ্চের অন্যতম মুখ ছিলেন শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস। একাধিক মামলায় অন্যতম সাক্ষীও ছিলেন তিনি। এলাকার জনপ্রিয় মাস্টারমশাইকে ২০১২ সালের ৫ জুলাই গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা। সুশান্ত দমদম সেন্ট্রাল জেলে বসে খুনের ছক কষেছিল বলে জানতে পারেন তদন্তকারীরা। পরে সুশান্ত মারা গিয়েছে জেলেই। বরুণ-খুনের ঘটনায় ধরপাকড় হলেও মামলাটি এখনও বিচারাধীন।
বরুণের দিদি প্রমীলা রায়ও এনকাউন্টারের পক্ষেই সরব। বললেন, ‘‘যাদের মারা হয়েছে, তারা যদি প্রকৃত অপরাধী হয়ে থাকে, তা হলে সঠিক কাজই করেছে পুলিশ।’’ প্রমীলার দাবি, এমন এনকাউন্টারের ঘটনা আগে ঘটলে অনেক মেয়ে ধর্ষিত হত না। নৃশংস ভাবে মরতে হত না।’’ এনকাউন্টার-তত্ত্বের সমর্থনে মুখ খুললেও ননীগোপাল মনে করেন, ধর্ষকদের সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে যদি আইন আরও সরল করা যেত এবং দ্রুত সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত, তা হলে এনকাউন্টারের প্রয়োজন পড়ত না।
প্রতিবাদী মঞ্চ সূত্রে জানা গেল, সে সময়ে সুটিয়া ও সংলগ্ন এলাকায় বহু মেয়ে নির্যাতিতা হয়েছিলেন। বহু চেষ্টায় ৩৫ জন মুখ খুলেছিলেন। বাকিরা ভয়ে সামনে আসতে পারেননি। ওই মামলাগুলিতে সুশান্ত, বীরেশ্বর, রমেশ মজুমদার, জীবন বিশ্বাস-সহ ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পুলিশের খাতায় এখনও তিন জন ফেরার।
রাজ্য বা দেশের কোথাও গণধর্ষণের ঘটনার কথা কানে এলেই সুটিয়ার মানুষের পুরনো আতঙ্কের দিন মনে পড়ে যায়। কামদুনিতে তরুণীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার পরে এখানকার বহু মেয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। এক নির্যাতিতা মহিলার কথায়, ‘‘আমাদের সময়ে যদি এমন এনকাউন্টার হত, তা হলে এতগুলো বছর ভয়ে ভয়ে থাকতে থাকতে আমাদের জীবনটা শেষে হয়ে যেত না।’’
ননীগোপাল বলেন, ‘‘গণধর্ষণের প্রায় সব মামলার নিষ্পত্তি হয়ে গিয়েছে। বারাসত জেলা আদালতে একটি মামলা এখনও চলছে। ভেবে দেখুন, মামলা শেষ হতে কত বছর লাগে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy