E-Paper

স্মার্টফোনে আসক্তির সমস্যা জেলাতেও, বলছে সমীক্ষা

সম্প্রতি সারা দেশের এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছে ১৪-১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে স্মার্টফোনের প্রতি আসক্তি ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু সুরক্ষিত ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে অনেকেই সচেতন নয়। ফলে প্রতারণা, অবসাদ, আত্মহত্যাপ্রবণতার মতো নানা সমস্যার শিকার হচ্ছে কিশোর-কিশোরীরা। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলেন আমাদের প্রতিবেদক

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সীমান্ত মৈত্র  

শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৪
Share
Save

দুর্ঘটনায় মৃত্যু। প্রতারণার শিকার। অবসাদ থেকে আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়া— স্মার্টফোনের এমন সব কুপ্রভাবে স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরা এমন নানা বিপদের শিকার হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সম্প্রতি অ্যানুয়াল স্টেটাস অব এডুকেশন রিপোর্টে (এএসইআর বা এসার) কিশোর বয়সে স্মার্টফোনের নেশা বাড়ার যে ছবি উঠে এসেছে, তা আসলে বাস্তবেরই প্রতিফলন বলে জেলার শিক্ষামহলের সঙ্গে যুক্তদের মত। রাজ্য সরকারও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের স্মার্টফোন কিনতে অর্থ বরাদ্দ করায় তারা আরও জড়িয়ে পড়ছে বলে দাবি অনেক শিক্ষকের।

শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনেকের অভিজ্ঞতা বলছে, করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের সময় থেকে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে স্মার্ট ফোনের ব্যবহার অনেকাংশে বেড়ে গিয়েছে। স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাস হয়েছিল। সে কারণে অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের স্মার্টফোন কিনে দিয়েছিলেন। ঘরবন্দি জীবনে কিশোর-কিশোরীরা স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে পড়ে। পরে সেই নেশা থেকে তাদের আর বের করা সম্ভব হয়নি। এখন সরকারি সাহায্যে স্মার্টফোনের বরাদ্দ পাওয়ায় তাদের কাছে দামী মোবাইল পাওয়াও সহজ হয়েছে।

স্মার্টফোনের নেশায় কেবল পড়ার সময় নষ্টই হয় না। বিপদ আরও ভয়ানক। রেললাইনের পাশে স্মার্টফোন নিয়ে গেম খেলার সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় অশোকনগরে দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়েছিল। ভিডিয়ো বানাতে গিয়েও ট্রেনের ধাক্কায় কিশোরদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে এ রাজ্যেই। অশোকনগর বয়েজ সেকেন্ডারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্তকুমার ঘোষ জানাচ্ছেন, তাঁর স্কুলের কিছু ছাত্র স্কুলের পোশাক পরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন এলাকায় স্মার্টফোনে গেম খেলছিল বলে খবর পেয়ে শিক্ষকেরা অভিযান চালান। মোবাইল আটক করে, অভিভাবকদের ডেকে ঘটনা জানিয়েও ছাত্রদের স্মার্টফোনে আসক্তি বন্ধ করা যায়নি। সুশান্ত বলেন, ‘‘ছাত্রদের স্কুলে স্মার্টফোন আনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তার মধ্যেও কোনও কোনও ছাত্র ফোন নিয়ে স্কুলে আসে। আমরা জানতে পারলে মোবাইল বাজেয়াপ্ত করি।’’

শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, অভিভাবকেরা সচেতন না হলে এই আসক্তি কাটানো অসম্ভব। উদাহরণ হিসেবে সুশান্ত জানাচ্ছেন, সম্প্রতি তাঁর স্কুলে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্র স্কুলে স্মার্টফোন নিয়ে এসেছিল। শিক্ষকেরা দেখতে পেয়ে আটক করেন। অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয়। তাঁরা এসে জানান, তাঁরা এলাকায় থাকেন না। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে ফোন দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের বক্তব্য, নানা যুক্তিতে অভিভাবকেরা অল্পবয়সি ছেলেময়েদের হাতে ফোন তুলে দিচ্ছেন। হয় তো কিছু ক্ষেত্রে তার উপযোগিতা আছে। কিন্তু ফোনের অতিরিক্ত এবং ভুল ব্যবহার আসক্তি বাড়াচ্ছে পড়ুয়াদের।

অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের কাছ থেকেও ফোন উদ্ধার করা হয়েছিল। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘ওই ছাত্রের অভিভাবকদের খবর দেওয়া হলেও পাঁচ দিন পরে দেখা করেছিলেন। তাঁরা দাবি করেন, ছেলে হয় তো মায়ের ফোন এনেছে। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকদের প্রশয়ে ছেলেমেয়েদের হাতে উঠছে স্মার্টফোন।’’

কিশোর-কিশোরীদের অজান্তে স্মার্টফোন ডেকে আনছে ভয়ঙ্কর বিপদ। ফেসবুক করতে গিয়ে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার একটি কলেজের প্রথম বর্ষের এক তরুণী সেই বিপদে পড়েন। প্রেমের ফাঁদে তাঁর ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে এক যুবক। মোটা অঙ্কের টাকা চাওয়ায় ওই তরুণী সাইবার ক্রাইম থানার দ্বারস্থ হলে পুলিশ যুবককে গ্রেফতার করে। তবে পুলিশ সূত্রের দাবি, এমন ঘটনার শিকার হয়েও অনেকে লোকলজ্জার ভয়ে পুলিশের কাছে আসেন না। বরং মুখ বুজে আর্থিক প্রতারণা, মানসিক নির্যাতন মেনে নেন।

গাইঘাটার বাসিন্দা এক তরুণীর সঙ্গেও বাংলাদেশের এক চিকিৎসকের ছবি ও পরিচয় ব্যবহার করে আলাপ জমায় এক যুবক। পেশায় রাঁধুনি ওই যুবক ভুয়ো পরিচয়ে ওই তরুণীর সঙ্গে আলাপ জমিয়ে ব্যক্তিগত ছবি হাতিয়ে নেয়, ব্ল্যাকমেল শুরু করে। পুলিশ ওই যুবককেও গ্রেফতার করেছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, স্মার্টফোনের মাধ্যমে এ ভাবে সমাজমাধ্যমে আলাপ করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেল করা বা পাচার করে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। তাঁরা স্কুল পড়ুয়াদের এ নিয়ে সচেতন করতে নানা স্কুলে শিবির করেন বলেও জানালেন জেলার এক পুলিশকর্তা।

স্মার্টফোনের নেশা যে ক্ষতিকর, তা জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরাও। বনগাঁ জীবনরতন ধর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক তথা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, স্মার্টফোন ও সমাজমাধ্যমের যুগলবন্দি বাস্তব জগতের সঙ্গে এক সমান্তরাল ভার্চুয়াল জগৎ তৈরি করেছে। কিশোর-কিশোরীরা সব বিপদ ভুলে সেই জগতেই ডুবে থাকে। শুদ্ধেন্দুর কথায়, ‘‘বয়ঃসন্ধিতে এই যুগলবন্দি থেকে অবসাদ, আত্মহত্যাপ্রবণতা তৈরি করতে পারে। অল্পবয়সি ছেলেমেয়েদের অমনোযোগী, খিটখিটে, অধৈর্য্য করে তোলে। অনেক ক্ষেত্রে সমাজবিরোধী মনোভাবও তৈরি করতে পারে। যেহেতু এই বয়সেই মানুষের ব্যক্তিত্ব নির্মিত হয়, তাই অনিয়ন্ত্রিত মোবাইল ও সমাজমাধ্যমের ব্যবহার অজান্তেই বয়ে আনতে পারে ব্যক্তিত্ববিকারের আশঙ্কা।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bangaon

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।