Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Illegal factory

বারুইপুরে অবৈধ জল কারখানার রমরমা, বড় ক্ষতি পরিবেশের

সব কারখানার বেশির ভাগ চলছে কোনও রকম বৈধ শংসাপত্র ছাড়া। পরিশুদ্ধ জলের নামে তারা কী বিক্রি করছে, তা পরীক্ষা করে দেখার কেউ নেই।

জল-পথ: এভাবেই জারবন্দি জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছে বারুইপুরের বাসিন্দারা।

জল-পথ: এভাবেই জারবন্দি জল কিনে খেতে বাধ্য হচ্ছে বারুইপুরের বাসিন্দারা। ছবি শশাঙ্ক মণ্ডল।

সমীরণ দাস 
বারুইপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩ ০৬:৫৮
Share: Save:

পানীয় জলের সমস্যায় ভুগছে বারুইপুর-সোনারপুরের বহু গ্রাম। অনেক জায়গাতেই এখনও পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছয়নি। জলস্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপেও মিলছে না জল। সেই সুযোগেই গ্রামে গ্রামে গজিয়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ জলের কারখানা। বেআইনি ভাবে যন্ত্রের সাহায্যে মাটির নীচ থেকে বিপুল পরিমাণ জল তুলে জারবন্দি করে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। সঙ্কটের মুখে সেই জল কিনতে বাধ্য হচ্ছেন মানুষ।

অভিযোগ, ওই সব কারখানার বেশির ভাগ চলছে কোনও রকম বৈধ শংসাপত্র ছাড়া। পরিশুদ্ধ জলের নামে তারা কী বিক্রি করছে, তা পরীক্ষা করে দেখার কেউ নেই। তার উপরে বেআইনি ভাবে বিপুল জল তুলে নেওয়ায় ক্রমশ নামছে জলস্তর। সরকারি নজরদারির অভাবে অবৈধ জলের কারখানার সংখ্যা বাড়ছে বলে অভিযোগ। ফলে আগামী দিনে বড় সঙ্কট আসতে চলেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। পরিবেশের ক্ষতি করে আর কত দিন চলবে এ রকম কারখানা, ভোটের মুখে মাথাচাড়া দিচ্ছে সেই প্রশ্ন।

স্থানীয় সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত এলাকায় কার্যত পাড়ায় পাড়ায় গড়ে উঠেছে এমন কারখানা। বাসিন্দারা জানান, এর জন্য আলাদা জায়গার দরকার নেই। অনেকে বাড়িতেই কারখানা চালু করেছেন। মাটির নীচ থেকে জল তোলার জন্য বসানো হচ্ছে একটি শক্তিশালী সাবমার্সিবল পাম্প। জল পরিশুদ্ধ করার জন্য বসানো হচ্ছে আরও একটি যন্ত্র। পাম্প চালিয়ে জল তুলে তা কোনও রকমে পরিশুদ্ধ করে, জারবন্দি করে বিক্রি করা হচ্ছে। পাম্প বসানোর খরচ ৫০-৬০ হাজার টাকা। আর যন্ত্রের দাম শুরু লাখ দেড়েক টাকা থেকে। অর্থাৎ মাত্র দু’লক্ষ টাকা পুঁজিতেই শুরু করা যাচ্ছে ব্যবসা। জারবন্দি জলের ভাল চাহিদা রয়েছে। ফলে টাকা উঠে আসছে অল্প দিনেই। তাই অনেকে অন্য কাজ ছেড়ে এই ব্যবসায় নেমে পড়ছেন।

সাধারণত ২০ লিটারের বড় জারে বিক্রি হচ্ছে এই জল। বারুইপুরের হরিহরপুর পঞ্চায়েত এলাকার এমনই এক জল কারখানার মালিক জানান, তাঁর কারখানা থেকে রোজ প্রায় ৪০০টি জার বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ আট হাজার লিটার জল বিক্রি হচ্ছে রোজ। ওই কারখানা সূত্রের খবর, যে পরিমাণ জল মাটির নীচ থেকে তোলা হচ্ছে, তার পুরোটা জারবন্দি করা সম্ভব হয় না। যন্ত্রের মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করতে লিটার প্রতি ২০ শতাংশ জল নষ্ট হয়। অর্থাৎ আট হাজার লিটার জল তৈরি করতে ওই কারখানাই মাটির নীচ থেকে তুলে নিচ্ছে প্রায় ১০ হাজার লিটার জল। একটি কারখানাতেই ১০ হাজার লিটার জল উঠলে, সব কারখানা মিলিয়ে রোজ কী বিপুল পরিমাণ ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে, তা ভেবে শঙ্কিত পরিবেশ সচেতন মানুষ। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘এর ফলে ভয়ঙ্কর ভাবে জলস্তর কমছে। আগামী দিনে বড় বিপদ অপেক্ষা করে আছে। শুধু তা-ই নয়। একসঙ্গে এত জল তোলার ফলে মাটির নীচের ভারসাম্য হারিয়ে ভূমিকম্প বা ভূমিক্ষয়ের মতো বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। তা ছাড়া, এ ভাবে তৈরি জল শরীরের জন্যও ক্ষতিকারক। সাধারণ মানুষকে সতর্ক হতে হবে। প্রশাসনের উচিত পদক্ষেপ করা।’’

বারুইপুর পুলিশ জেলার এক কর্তা জানান, বেআইনি জল কারখানাগুলিতে বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালানো হয়। আগামী দিনেও চালানো হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal factory Baruipur Drinking water
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy