রায়দিঘিতে ফ্লাড শেল্টারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন প্রশাসনের লোকজন। নিজস্ব চিত্র
ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় ফের রাতের ঘুম উড়েছে সুন্দরবনবাসীর।
গত কয়েক বছর আমপান, ইয়াসের মতো ঝড়ে বার বার বাঁধ ভেঙে বানভাসি হয়েছেন সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। ফের বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ঝড় কোন এলাকায় এসে পড়বে, সে ব্যাপারে এখনও নির্দিষ্ট করে কিছু জানায়নি আবহাওয়া দফতর। তবে এর মধ্যেই আতঙ্কের প্রহর গুণছেন দুই জেলার উপকূলের বাসিন্দারা।
শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, অনেকেই ঘরের চাল সংস্কার করছেন। টালি বা অ্যাসবেসস্টের চাল কী ভাবে আরও একটু মজবুত করা যায়, সেই চেষ্টা চলছে। কাঁচা বাড়ির দেওয়ালে বাঁশ বা কাঠের ঠেকনা দিয়ে শক্ত করার চেষ্টা করছেন অনেকে। খেত থেকে আধ পাকা ফসল তুলে নিচ্ছেন বহু চাষি। গাছের কাঁচা আমও পেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বাসিন্দাদের চিন্তা বাড়াচ্ছে বিভিন্ন এলাকার দুর্বল নদীবাঁধ। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, ন্যাজাট, মিনাখাঁ-সহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁধ বেহাল। নানা অংশে গত কয়েক দিনে ধস নেমেছে বলেও জানালেন কিছু এলাকার মানুষজন। হিঙ্গলগঞ্জের চাঁড়ালখালি এলাকায় কালিন্দী নদীবাঁধ, আতাপুর ও মণিপুর এলাকায় রায়মঙ্গল নদীবাঁধ, ন্যাজাটের বিদ্যাধরী নদীবাঁধ-সহ বিভিন্ন ধস নেমেছে। অভিযোগ, বাঁধ সংস্কারে নজর দিচ্ছে না প্রশাসন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার ঘোড়ামারা, মৌসুনি, সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, রায়দিঘি-সহ বহু এলাকা এর আগে বাঁধ ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সেই আতঙ্কের স্মৃতি এখনও বয়ে বেড়াচ্ছেন স্থানীয় মানুষ। স্থানীয় সূত্রের খবর, এখনও এলাকার কিছু বাঁধ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যেই বড় ঝড় এলে কী হবে, তা ভেবেই তটস্থ মানুষ।
হিঙ্গলগঞ্জের বাসিন্দা তরুণ মণ্ডল, সন্ধ্যা দাসেরা বলেন, “আমপান, ইয়াসে এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। ঘরবাড়ি সব তলিয়ে গিয়েছিল। তারপরে সরকারি সাহায্যে অনেক পরিশ্রমে কোনও রকমে বাড়ি ঘর তৈরি করেছেন মানুষ। নদীবাঁধের অবস্থা খারাপ। আবার যদি ঝড় হয়, তা হলে নদীবাঁধ ভেঙে সব তলিয়ে যাবে।”
পাথরপ্রতিমার শ্রীধরনগর পঞ্চায়েতের উপেন্দ্রনগর গ্রামের বাসিন্দা তাপস রঞ্জিত বলেন, “এলাকার বাঁধের অবস্থা খুব খারাপ। ইয়াসের পর থেকে আর বাঁধে মাটি পড়েনি। তাড়াতাড়ি না মেরামতি করলে পুরো এলাকা প্লাবিত হয়ে যাবে। প্রশাসন প্রস্তুতি দিয়েও কাজ করেনি। আমরা সবাই চিন্তায় আছি। আবার যদি ইয়াসের মতো জলোচ্ছ্বাস হয়, তা হলে কোথায় যাব!”
ঝড়ের আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় প্রশাসনের তরফে অবশ্য কোথাও কোথাও বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের আধিকারিকেরা বাঁধের পরিস্থিতি এবং ফ্লাড শেল্টারগুলি ঘুরেও দেখছেন। বৃহস্পতিবার রায়দিঘির কুমড়োপাড়া এলাকায় বাঁধ এবং ফ্লাড শেল্টার ঘুরে দেখেন মথুরাপুর ২ বিডিও নাজির হোসেন। তিনি বলেন, “বেশ কিছু বাঁধ বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ফ্লাড শেল্টারগুলি সাফ করার জন্য পঞ্চায়েতকে বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ এবং জল সরবরাহের জন্য বিভাগীয় দফতরে জানানো হয়েছে।”
সন্দেশখালির আতাপুর, হিঙ্গলগঞ্জের চাঁড়ালখালি-সহ বিভিন্ন এলাকায় নদীবাঁধের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। পাশাপাশি, নদীবাঁধের উপরে নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। সন্দেশখালি ২ বিডিও অর্ণব মুখোপাধ্যায় বলেন, “সেচ দফতর নদীবাঁধ মেরামতির কাজ করছে। পঞ্চায়েতের প্রধানদের নদীবাঁধের উপরে নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও সমস্যা হলে দ্রুত প্রতিকার করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy