—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কন্যাশ্রী সহ নানা সরকারি প্রকল্পের প্রচারে ওরা এর আগে নেমেছে পথে। কিন্তু কোনও গণ আন্দোলনে শামিল হওয়ার অভিজ্ঞতা ছিল এই প্রথম। আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে মিছিলে নেমেছিল যে ছাত্রীরা, তারা বুঝেই উঠতে পারছে না, কী দোষটা করেছে! কেন আন্দোলনে নামতে বারণ করছে সরকার।
ভাঙড়ের পোলেরহাট হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী বলে, ‘‘শুধু আর জি করের ঘটনা তো নয়, আমরা যে কোনও ধর্ষণ, নারী নিগ্রহের প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম পথে নেমে। তা ছাড়া, আমরা মেয়েরা রাস্তাঘাটে, বাসে-ট্রেনে নানা ভাবে নির্যাতনের শিকার হই। স্কুলে আসার পথে ছেলেরা উত্যক্ত করে। নিজেদের নিরাপত্তার দাবিই তো তুলেছি আমরা, এতে ভুলটা কোথায়!’’
পোলেরহাট, কাঁঠালিয়া, ভাঙড় বালিকা বিদ্যালয় সহ ভাঙড়ের বিভিন্ন স্কুলের সামনে রোমিয়োদের উৎপাত লেগেই থাকে বলে অভিযোগ। এর আগে পুলিশ পোলেরহাট হাই স্কুলের সামনে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতারও করেছিল। ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ রোমিয়োদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছিল। কিন্তু তারপরেও উপদ্রব যে পুরোপুরি কমেছে, তা নয় বলেই জানাচ্ছে অনেক ছাত্রী। আর জি করের ঘটনা সামনে রেখে তারা সে সবের বিরুদ্ধেও সরব হতে চেয়েছিল বলে জানাচ্ছে অনেকে। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘মিছিল করে আমাদের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। রাস্তার বাজে ছেলেগুলোর বিরুদ্ধে এককাট্টা হতে পেরেছি আমরা মেয়েরা— এমনটাই মনে হয়েছে। এতে দোষের কী হল, বুঝতে পারছি না!’’
নারায়ণপুর হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর কথায়, ‘‘আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদ জানানোয় আমাদের উপরে নানা ভাবে চাপ তৈরি করা হচ্ছে। স্কুল থেকে বা টিউশন সেরে বাড়ি ফেরার পথে নানা সময়ে অশ্লীল মন্তব্য উড়ে আসে। সন্ধ্যার পরে টিউশন থেকে বাড়িতে ফেরার জন্য পরিবারের কাউকে আনতে যেতে হয়। ভাঙড়ের অধিকাংশ গ্রামীণ রাস্তাঘাট অন্ধকারাচ্ছন্ন। ফাঁকা রাস্তা দিয়ে একা বাড়ি ফিরতে ভয় লাগে। শুধু আর জি কর-কাণ্ড নয়, আমরা তো মেয়েদের নিরাপত্তার দাবিতে পথে নেমেছিলাম। আমাদের কন্ঠরোধ করার চেষ্টা কেন হচ্ছে জানি না।’’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাঙড়ের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘যদি স্কুল ছুটির পরে স্কুলের বাইরে ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের মতো করে কোনও কর্মসূচি পালন করে, সে জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষকে কেন দায়ী করা হবে? তা ছাড়া, শিক্ষক-শিক্ষিকারা তো ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কোনও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে যোগদান করেননি। এটা ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব বিষয়। এখানে স্কুল হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’’
ক্যানিংয়ের এক ‘প্রতিবাদী’ ছাত্রীর কথায়, ‘‘এই প্রথম এ ধরনের মিছিলে হেঁটেছি। নিজেদের মর্যাদা রক্ষার অধিকারের আন্দোলন এত সহজে থামবে না।’’ আর জি কর কাণ্ডে পথে নেমেছিল একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। তার কথায়, ‘‘আমরা যেমন আর জি কর-কাণ্ডে ডাক্তার দিদির উপরে অত্যাচারের বিচার চাই, তেমনই আমাদের নিজেদেরও নিরাপত্তা চাই। আমরা গ্রামের মেয়েরা পথেঘাটে অনেক সময়েই ভয়ে ভয়ে থাকি। এমন চলতে থাকবে কেন দিনের পর দিন! আমরা মিছিলে নেমে অনেকটা সাহস পেয়েছি এই প্রথম বার। এ ভাবে আমাদের থামিয়ে দেওয়া যাবে না।’’
আর এক দশম শ্রেণির ছাত্রীর কথায়, ‘‘সরকার নির্দেশ পরে দিক, আগে আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা
করুক। না হলে এই আন্দোলন চলবে। সন্ধ্যার পরে বাবা-মা বাড়ি থেকে বেরোতে দিতে ভয় পান। রাতে টিউশন থেকে ফেরার পথে ওঁরা আমাকে আনতে যান। বাইরে থাকলে ফিরতে দেরি হলে বার বার ফোনে খোঁজ নেন। এত ভয়ে ভয়ে কেন থাকব আমরা! মিছিলে হেঁটে বরং অনেক মনের জোর বেড়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy