উৎসাহ: ক্লাস করছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।
সরকারি নির্দেশ মেনে হাসনাবাদ থানার দুর্গাপুর বায়লানি হাইস্কুলে বেশ কয়েক মাস ধরেই অনলাইন ক্লাস চালু হয়েছে। কিন্তু পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি ক্লাসে গড়ে চার-পাঁচ জনের বেশি পড়ুয়াকে অনলাইন ক্লাসে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই খোলা আকাশের নীচে সামনাসামনি ক্লাস নিতে উদ্যোগী হলেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার স্কুলের পাশে একটি চাষের জমিতে পড়ুয়াদের দূরত্ব বিধি মেনে বসিয়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ৩০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে ক্লাস করলেন তিন শিক্ষক। স্কুলের উদ্যোগে খুশি পড়ুয়া ও অভিভাবকেরা।
প্রধান শিক্ষক সমীর মান্না জানান, পড়ুয়াদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এই সপ্তাহে শনিবার পর্যন্ত প্রত্যেকদিন সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত মাঠেই ক্লাস নেওয়া হবে। পরের সপ্তাহে সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত একই সময়ে নেওয়া হবে নবম ও দশম শ্রেণির ক্লাস। প্রত্যেকদিন চারজন করে শিক্ষক আসবেন ক্লাস নিতে।
এদিন ক্লাসে এসে খুশি পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়ারা। তারা জানায়, বহুদিন শিক্ষক ও সহপাঠীদের দেখেনি। আজ প্রথম আলাপ হল সকলের সঙ্গে। করোনা-আবহে স্কুল বন্ধ থাকায় ভর্তি হওয়ার পর থেকে এই পড়ুয়াদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগই হয়নি। বেশিরভাগই বিভিন্ন কারণে অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারেনি। তাই চেনা হয়নি বন্ধু ও শিক্ষকদের।
ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সাথী কর্মকার বলে, ‘‘চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তে পড়তে স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নতুন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিলাম। এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ি। অথচ এতদিন কোনও ক্লাসই করতে পারিনি। তাই শিক্ষক ও সহপাঠীদের চিনতাম না। আজ প্রথম ক্লাস করে খুব ভাল লাগল। শিক্ষকদেরও চিনলাম। এখন থেকে রোজ আসব ক্লাস করতে।’’
একই অভিজ্ঞতার কথা জানায় পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া অর্পিতা ঘরামি, শুভ দাসেরা। অনেকদিন পরে পড়ুয়াদের কাছে পেয়ে খুশি শিক্ষকেরাও। স্কুলের শিক্ষক প্রদীপ্ত মাইতি, কৃষ্ণেন্দু গিরি চৌধুরীরা জানান, ক্লাসে এমন অনেক পড়ুয়া এসেছে, যারা গত দু’বছর ধরে অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে পারেনি। পড়ুয়াদের মধ্যে আগ্রহ চোখে পড়ল।’’ পদ্মাবতী কর্মকার নামে এক ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘স্কুলের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমাদের মতো দরিদ্র পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য অনলাইন ক্লাসের থেকে বেশি উপযোগী এই ধরনের ক্লাস। স্কুল না খোলা পর্যন্ত এই উদ্যোগ জারি থাকলে খুব ভাল হয়।’’ প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘স্কুল না খোলা পর্যন্ত মাঠের মধ্যে করোনাবিধি মেনে এই ক্লাস চলবে। প্রতিটি ক্লাসের প্রায় একশো শতাংশ পড়ুয়াকে পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।’’
হাসনাবাদের পূর্ব খেজুরবেড়িয়া ২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন বছরের শুরু থেকেই চলছে পাড়ায় গিয়ে ক্লাস নেওয়া। অনলাইন ক্লাসে এই স্কুলের অর্ধেকের বেশি পড়ুয়াকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাদের কথা ভেবে স্কুল থেকে কিছুটা দূরে পূর্ব খেজুরবেড়িয়া পালপাড়া ও পশ্চিম খেজুরবেড়িয়া দাসপাড়ায় মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে ২টো পর্যন্ত ক্লাস নেওয়া হচ্ছে পড়ুয়াদের বাড়ির উঠোনে। ক্লাস নিয়েছেন স্কুলের চার শিক্ষক হরষিত বাইন, অমিত দাস, অমিয় বিশ্বাস ও প্রধান শিক্ষক বিক্রমজিৎ মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘‘পাড়ায় গিয়ে পড়ানো নিয়ে প্রাথমিক ভাবে কিছু সংশয় ছিল। তবুও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। এখন রাজ্য সরকার এই পথে চলতে বলছে দেখে উৎসাহ পাচ্ছি।’’ প্রধান শিক্ষক আরও জানান, পাড়ার ক্লাস দু’টিতে প্রায় ৩৫ জন পড়ুয়া আসে, যাদের অনলাইন ক্লাসে এতদিন পাওয়া যাচ্ছিল না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy