আরাবুলের গাড়ির ডিকি থেকে উদ্ধার হল লাঠি, লাইপ। ছবি: সামসুল হুদা ।
ভাঙড় ২ ব্লক অফিসে ঢোকার সময়ে নাকা চেকিংয়ে বৃহস্পতিবার আটকে পড়ল আরাবুল ইসলামের গাড়ি। তাঁকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ব্লক অফিসে ঢুকতে বলা হলে তিনি অস্বীকার করেন। এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বাদানুবাদ হয়। আরাবুলের গাড়ির ডিকি থেকে বেশ কয়েকটি লাঠি, প্লাস্টিকের পাইপ ও একটি ছোট বাঁশের লাঠি পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি পুলিশের। সে সব বাজেয়াপ্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য গাড়িতেই ব্লক অফিসে ঢোকেন আরাবুল। দীর্ঘ দশ মাস বাদে হাই কোর্ট তাঁকে ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত অফিসে নিজের পদে ফেরার অনুমতি দিয়েছে। সোমবার দফতরে এলেও নিজের ঘর, চেয়ার ফিরে পাননি আরাবুল। বৃহস্পতিবারও এলেন বটে, তবে নিজের চেয়ারে বসেননি এ দিনও। বরং বিডিওর ঘরে বেশ কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে ফিরে গিয়েছেন। সে বিষয়টি নিয়েও কিছুটা জটিলতা তৈরি হয় এ দিন। এ দিন ব্লক অফিসের সামনে আরাবুল অনুগামী ও কর্মাধ্যক্ষ খয়রুল ইসলাম অনুগামীরা জড়ো হন। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির উপক্রম হয়। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে এলাকা ফাঁকা করে দেয়।
কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয়, সে জন্য বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কড়া নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছিল ব্লক অফিস চত্বর। সকাল থেকেই ব্লক অফিসে আসা ৫টি রাস্তায় চলে নাকা তল্লাশি। বাদ যায়নি আরাবুল ও তাঁর ছেলে হাকিমুল ইসলাম, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সোনালি বাঝাড়, ভূমি কর্মাধ্যক্ষ খয়রুল ইসলামের গাড়িও।
আরাবুলের গাড়ি থেকে যখন পুলিশ লাঠি উদ্ধার করছে, সে সময়ে তিনি ছিলেন না গাড়িতে। তবে চালক ছিলেন। পরে এ বিষয়ে আরাবুল বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার করা হচ্ছে। হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। কয়েক দিন আগে আমাদের একটা মিটিং ছিল। পতাকা বাঁধার জন্য কিছু প্লাস্টিকের পাইপ রাখা থাকতে পারে। তা আমি জানি না। আমার চালক ভাল বলতে পারবেন, কী ছিল। আমি কোনও দিন অস্ত্র ব্যবহার করিনি।’’এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের ভাঙড় ডিভিশনের এক কর্তা বলেন, ‘‘আরাবুল ইসলামের গাড়ি থেকে একটি বাঁশের লাঠি, ৮টি কোদালের বাঁট, ৯টি প্লাস্টিকের পাইপ ও একটি বেতের লাঠি পাওয়া গিয়েছে। কী কারণে তিনি ওই সমস্ত জিনিসপত্র গাড়িতে রেখেছিলেন, তা নিয়ে ওঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে। যদি সদুত্তর না পাওয়া যায়, তখন পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ভাঙড়ের তৃণমূল পর্যবেক্ষক সওকাত মোল্লার প্রতিক্রিয়া, ‘‘আরাবুল বেশ কিছু সমাজবিরোধীকে নিয়ে ব্লক অফিসে এসেছিলেন, বিডিওর ঘরে ঢুকেছিলেন। সেই ছবি আমাদের কাছে আছে। এ দিন তাঁর গাড়িতে করে কোদালের বাঁট, রড, পাইপ আনা হয়েছিল। আসলে আরাবুলের উদ্দেশ্য, শান্ত ভাঙড়কে অশান্ত করার। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে জানিয়েছি।’’
প্রায় পৌনে ১১টা নাগাদ আরাবুল ব্লক অফিসে ঢোকেন। সোমবারই তাঁর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল নতুন চেম্বার। সেখানে না গিয়ে আরাবুল সরাসরি বিডিওর চেম্বারে ঢোকেন। প্রায় আড়াইটে পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন। সেখানে বসেই বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। এ দিকে, দীর্ঘক্ষণ বিডিও চেম্বারে আরাবুল বসে থাকায় সাধারণ মানুষ বিভিন্ন কাজ নিয়ে বিডিওর কাছে যেতে পারেননি বলে অভিযোগ। পরে পঞ্চায়েত সমিতির ৯ জন কর্মাধ্যক্ষ বিডিওর ঘরে যান। তখনও আরাবুল বসে থাকায় তাঁরা বিডিওকে বলেন, এ ভাবে চেম্বার বন্ধ থাকলে সাধারণ মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাঁরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিডিওর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চান বলে জানান। বিডিও আধ ঘণ্টা সময় চান। কিছুক্ষণ পরে আরাবুল সেখান থেকে বেরিয়ে ফিরে যান।
এ দিন ব্লক অফিসে এসে সরকারি পরিষেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সরিফুল মোল্লা, মোসাইব আলি খান। পরে তাঁরা বিডিওকে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন এ নিয়ে। ব্লক প্রশাসন জানিয়েছে, এ বিষয়ে দু’টি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে, যা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আরাবুল বলেন, ‘‘আমি দীর্ঘ দিন বাইরে থাকায় বহু মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। এ দিন আমি সভাপতির শংসাপত্র দেওয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন পরিষেবা দিয়েছি।’’ বারুইপুরের মহকুমাশাসক চিত্রদীপ সেন জানিয়েছেন, আরাবুল হাই কোর্টের নির্দেশে পঞ্চায়েত সমিতির অফিসে কাজে যোগ দেওয়ার পরে সভাপতির পদ ফিরে পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই মতো সমস্ত দিক বিবেচনা করে তাঁকে সভাপতির পদে পুনর্বহাল করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy