চলন্ত গাড়ি আটকে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু অস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধার করল রাজ্য পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাড়োয়া থানা এলাকার জোকার বিল এলাকায় একটি সাদা সেডান গাড়ি থামিয়ে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় ওই অস্ত্র। ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে চার জনকে। ধৃতদের নাম আমিরুল মণ্ডল, হাবিল মোল্লা, আবু সাহিদ গাজি এবং গিয়াসউদ্দিন গাজি। তাদের বাড়ি হাড়োয়ার গোপালপুরের পুকুরিয়া এলাকায়। শুক্রবার ধৃতদের বসিরহাটের এসিজেএম আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, ধৃতদের মধ্যে হাবিল গাড়ির চালক। বসিরহাট জেলা পুলিশের সুপার হোসেন মেহেদি রহমান বলেন, ‘‘একটি একনলা বন্দুক, একটি দোনলা বন্দুক, একটি ৭ এমএম আধা-স্বয়ংক্রিয় পিস্তল এবং ১৭ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে।’’ প্রাথমিক তদন্তের পরে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মোটা টাকার বিনিময়ে বারাসতের কয়েক জন দুষ্কৃতীর কাছে এই অস্ত্র ও কার্তুজ পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল পাচারকারীরা।
এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির একটি চক্র হাড়োয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে তাদের কাছে খবর আসে। তার ভিত্তিতে গোয়েন্দারা হাড়োয়ার বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি অভিযান শুরু করেন। বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাঁরা হাড়োয়া থানার পুলিশকে নিয়ে যৌথ অভিযানে নামেন। রাজারহাট রোডের জোকার বিল এলাকায় দুষ্কৃতীদের ধরতে জাল বিছানো হয়। গভীর রাতে একটি গাড়িকে আসতে দেখে হাড়োয়া থানার পুলিশ সেটি আটকানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দুষ্কৃতীরা জোরে গাড়ি চালিয়ে পালানোর চেষ্ট করলে তাদের বাধা দেন এসটিএফের
গোয়েন্দারা। শেষে পুলিশ সব পথ বন্ধ করে দেওয়ায় দুষ্কৃতীরা গাড়ি থামাতে বাধ্য হয়।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ধৃত চার জনের মধ্যে কেউ গাড়িচালক, কেউ দরজির কাজ করে। কিছু দিন যাবৎ তারা ছোটখাটো চুরি-ছিনতাইয়ে হাত পাকিয়ে অস্ত্র পাচারের সঙ্গে জড়ায়।
উল্লেখ্য, মাস দুয়েক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলা থেকে বিপুল পরিমাণ কার্তুজ এবং কয়েকটি দোনলা বন্দুক উদ্ধার করেছিলেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। কয়েক দফায় গ্রেফতার করা হয় আট জনকে। যাঁদের মধ্যে ছিলেন কলকাতার একটি প্রাচীন অস্ত্র বিপণির দুই কর্মীও। প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন, ওই অস্ত্র বিপণি থেকে বন্দুক এবং কার্তুজ চোরাপথে দুষ্কৃতীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তার মধ্যে বেশির ভাগই ছিল একনলা বা দোনলা বন্দুক।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার হাড়োয়া থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের সঙ্গে জীবনতলার ঘটনার যোগসূত্র পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, অস্ত্র পাচারকারীরা
সাধারণত দেশি পিস্তল বা বন্দুক পাচার করে থাকে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, পাচার করা হচ্ছিল একনলা এবং দোনলা বন্দুক। যা দেখে গোয়েন্দাদের অনুমান, হাড়োয়ার ঘটনার সঙ্গে জীবনতলার যোগসূত্র থাকতেও পারে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)