শঙ্কর আঢ্য, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের তরফে গোটা জেলা কার্যত যাঁর তত্ত্বাবধানে চলত, সেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (বালু) রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ইতিমধ্যে জেলে। তাঁরই ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা তথা জেলা পরিষদ সদস্য শেখ শাহজাহানকে খুঁজছে পুলিশ। ইডির হাতে ধরা পড়েছেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। শঙ্কর-শেখ শাহজাহানকে জালে জড়িয়ে ভোটের আগে বালুর জামিন পাওয়া কি আরও অনিশ্চিত হয়ে পড়ল, সে প্রশ্ন উঠছে। এ দিকে, সামনে লোকসভা ভোট। বালুর গ্রেফতারির পরে চাকলার সভা থেকে জেলা নেতাদের মধ্যে ২১ জনকে বেছে একটি কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কমিটি আজ, সোমবার প্রথম বৈঠকে বসতে চলছে। এই পরিস্থিতিতে কোর কমিটির বৈঠকে কী বিষয় উঠে আসে, তা নিয়ে কৌতূহল আছে নানা মহলে।
কমিটির সদস্য তথা জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘সোমবার মধ্যমগ্রামে দলীয় কার্যালয়ে জেলা কোর কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। তবে বৈঠকের দিন কয়েক দিন আগেই স্থির করা হয়েছিল। তখন সন্দেশখালি ও বনগাঁর ঘটনা সামনে আসেনি। তবে বৈঠকে দু’টি ঘটনা নিয়েও আলোচনা হতে পারে।’’ জেলা নেতারা মনে করিয়ে দিচ্ছে, কমিটি গঠনের সময়েই ঠিক হয়েছিল, দশ দিন অন্তর রিপোর্ট তৈরি করে কমিটি তা পাঠাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
রাজনৈতিক মহল ও তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কোর কমিটির বৈঠক প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসাবে জ্যোতিপ্রিয়, শেখ শাহাজাহান, শঙ্কর আঢ্যকে নিয়েই মূল আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা আছে। কমিটির সদস্যেরা সেই মতো পরিস্থিতির কথা জানাবেন মুখ্যমন্ত্রীকে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ অনুযায়ী জেলা নেতারা পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জামিন পাবেন না, এটা ধরে নিয়েই মূলত এগোতে পারে আলোচনা।’’
জ্যোতিপ্রিয়, শঙ্করের গ্রেফতারির পিছনে বিজেপির হাত থাকতে পারে বলে শুরু থেকেই সরব জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। শেখ শাহজাহানের বাড়ি-অফিসে ইডির হানাকেও চক্রান্তের তত্ত্বেও ব্যাখ্যা করতে ব্যস্ত তাঁরা। যদিও গোটা বিষয় নিয়ে দলের অন্দরে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, সে কথা ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মানছেন অনেকেই। আরও কোন নেতার ডাক পড়তে পারে ইডি-সিবিআইয়ের তরফে, তা নিয়েও চলছে গুঞ্জন। এক নেতার দুশ্চিন্তা, ‘‘রেশন দুর্নীতি মামলায় জেলার আরও কয়েক জন ইডির ডাক পেতে চলেছেন বলে শুনছি। জানি না, এর শেষ কোথায়!’’
জেলা তৃণমূল কোর কমিটির চেয়ারম্যান তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলেন, ‘‘বিজেপির উদ্দেশ্য, যাতে লোকসভা ভোটের আগে দলীয় নেতৃত্ব এক জায়গায় আসতে না পারেন। লোকসভা ভোটের দু’মাসও বাকি নেই। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে বিজেপি রাজনৈতিক চক্রান্ত ও প্রতিহিংসার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে।’’ নির্মলের অবশ্য দাবি, লোকসভা ভোটে এর ফল উল্টো হবে। রাজ্য সরকার, প্রশাসনকে উপেক্ষা করে যে ভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী গ্রামের মানুষকে উত্তেজিত করছে, অত্যাচার করছে— মানুষ এর জবাব ইভিএমে দেবেন।
নির্মলের কথায়, ‘‘ইডি-সিবিআই কোথাও যাওয়ার আগেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগে থেকে বলে দিচ্ছেন। এ থেকেই তো বোঝা যাচ্ছে, গোটাটাই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা।’’ নারায়ণের কথায়, ‘‘আমার ব্যক্তিগত মত, আইনের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাশীল থাকা উচিত। তদন্তকারী সংস্থা, তা সে রাজ্যের হোক বা কেন্দ্রের— তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করা উচিত।’’ তবে নারায়ণও মনে করেন, ‘‘কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই তৎপরতায় বিজেপির ভোটে কোনও লাভ হবে না। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক না থাকলেও বিজেপির কোনও লাভ হবে না। কারণ, লক্ষ লক্ষ মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন, মানবিকতা দেখেই তৃণমূলকে জেলায় পাঁচটি আসনেই জয়ী করবেন।’’
এ বিষয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, ‘‘আদালতের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি তদন্ত করছে। তৃণমূল নেতারা চুরি করেছেন, এটা প্রমাণিত। কেউ বিদেশে টাকা পাচার করেছেন, কেউ রোহিঙ্গাদের এনে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছেন। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তৃণমূল নেতৃত্ব রাজনৈতিক প্রতিহিংসার তত্ত্ব খাড়া করছেন। তাঁদের কিছু বলার থাকলে আদালতে গিয়ে বলুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy