সেবা: অক্সিজেন নিয়ে চলেছেন সৌমিত্র। নিজস্ব চিত্র।
বাহন বলতে সাইকেল। তাতে চেপেই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত দ্বীপে ঘুরে ঘুরে করোনা আক্রান্তদের অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছেন গোসাবার সৌমিত্র মণ্ডল। ফোন পেলেই নিজের সাইকেলের পিছনে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর চাপিয়ে এক দ্বীপ থেকে আর এক দ্বীপে পৌঁছে যাচ্ছেন এই যুবক। তাঁর কাজে খুশি গোসাবা ব্লক প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্লক স্বাস্থ্য দফতর।
সৌমিত্রর বাড়ি বালি দ্বীপের ৫ নম্বর গ্রামে। দীর্ঘদিন ধরেই সুন্দরবনের গোসাবা ব্লকের ৯টি দ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের রক্তে সুগারের মাত্রা, প্রেশার ইত্যাদি পরীক্ষা করে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে রোগীদের হাতে বিনামূল্যে ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে আসছেন সৌমিত্র। এবার করোনা সংক্রমণের জেরে অক্সিজেনের অভাবে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটছে। গোসাবার মতো প্রত্যন্ত দ্বীপে এক দিকে যেমন অক্সিজেন সিলেন্ডারের যথেষ্ট অভাব রয়েছে, তেমনই নিয়মিত সেই সিলেন্ডার রিফিলিং করে একের পর এক নদী পার করে আনার যথেষ্ট অসুবিধাও রয়েছে। ফলে, এই দ্বীপের যে-বাসিন্দারা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই অক্সিজেনের অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন, এমনকী, মারাও যাচ্ছেন।
এই সমস্যাটির কথা অনুভব করে নিজের পরিচিত দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় সৌমিত্র একটি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর জোগাড় করেছেন দিন কয়েক আগে। চিকিৎসকের কাছ থেকে সেটির ব্যবহার শিখে নিয়েই অসুস্থ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছেন এই যুবক।
ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবামূলক কাজে যুক্ত সৌমিত্র। তিনি গোসাবার একটি স্কুলে আংশিক সময়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। কিন্তু বছর তিনেক আগে সেই কাজ হাতছাড়া হয়ে যায়। কাজের খোঁজে হন্যে হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে ঘুরতে কাজ না পাওয়ার হতাশায় নিজেই আক্রান্ত হন ডায়াবেটিসে। তবে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ভেঙে না পড়ে আরও এগিয়ে যাওয়ার দিকে প্রত্যয়ী হন বছর ঊনত্রিশের সৌমিত্র। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের জন্য বইপত্র জোগাড় করা থেকে শুরু করে তাদের স্কুল, কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেন তিনি। সমাজসেবামূলক কাজের মাধ্যমেই বহু মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে তাঁর। তাঁদের সাহায্যেই সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামে গ্রামে দুঃস্থ মানুষের ডায়াবেটিসের ওষুধ থেকে শুরু করে তাঁদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এই যুবক।
সম্প্রতি করোনা মোকাবিলার জন্য এখন নিজের সাইকেলকে সঙ্গী করে গোসাবা ব্লকের বিভিন্ন দ্বীপে ঘুরে ঘুরে এই অক্সিজেন পরিষেবা দেওয়ার কাজ শুরু করেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন ‘অক্সিজেন ম্যান’। সৌমিত্র বলেন, “আমাদের চারিদিকে গাছগাছালি আর ম্যানগ্রোভের অরণ্য। তবুও অক্সিজেনের অভাবে এই দ্বীপের মানুষ মারা যাবে এটা মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছিল। তাই একটা অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর জোগাড় করি আমার কয়েকজন পরিচিতের সহযোগিতায়। নিজের মতো করেই এই দ্বীপাঞ্চলের মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।” সৌমিত্রর এই কাজে খুশি বিডিও থেকে শুরু করে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। এক দ্বীপ থেকে আর এক দ্বীপে সৌমিত্রের যাতায়াতের জন্য বিনামূল্যে খেয়া পারাপারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন বিডিও।
বিডিও সৌরভ মিত্র বলেন, “এই সময় উচিত সকল মানুষকে সকলের পাশে দাঁড়িয়ে এই মহামারির হাত থেকে বাঁচা। সৌমিত্র যে কাজটা করছেন সেটা অনুপ্রেরণা দেয়। ওঁকে দেখে এই ধরনের কাজে আরও কিছু মানুষ এগিয়ে আসলে সত্যিই এই দ্বীপাঞ্চলে অক্সিজেনের অভাব অনেকটাই মিটে যাবে।”
ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ইন্দ্রনীল বর্গী বলেন, “গোসাবা ব্লকের ৯টি দ্বীপের সবক’টিতেই সরকারের তরফে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সৌমিত্র নিজে যে চেষ্টা করে চলেছেন তা প্রশংসনীয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy