Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Contaiment Zone

রাস্তা বন্ধ, মাঠ পেরিয়েও চলছে অবাধ যাতায়াত 

বহু জায়গাতেই লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখালেন বাসিন্দাদের একাংশ।

গণ্ডিবদ্ধ এলাকা। তাও চলছে যাতায়াত। হাবড়ার কামারথুবা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

গণ্ডিবদ্ধ এলাকা। তাও চলছে যাতায়াত। হাবড়ার কামারথুবা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২০ ০৪:১৫
Share: Save:

কন্টেনমেন্ট ঘোষণার পরে এলাকার রাস্তা বাঁশ দিয়ে ঘিরে দিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু পাশেই খোলা মাঠ। এলাকার মানুষ কেউ হেঁটে, কেউ সাইকেল, মোটর বাইকে চেপে সেই মাঠ দিয়েই এলাকার বাইরে বেরোচ্ছেন, ঢুকছেন।

শনিবার দুপুরে এই ছবি চোখে পড়ল হাবড়া শহরের পূর্ব কামারথুবা এলাকায়। দুই জেলার বহু জায়গাতেই এ ভাবে লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখালেন বাসিন্দাদের একাংশ।

হাবড়া, অশোকনগরে একাধিক কন্টেনমেন্ট জ়োন হলেও, কোথাও সার্বিক লকডাউন চোখে পড়েনি। বহু মানুষই এ দিন বাইরে বেরিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মাঝে মধ্যে সিভিল ভলান্টিয়ার ও পুলিশের গাড়ি এসে টহল দিয়ে যাচ্ছে। তবে স্থায়ী নজরদারির ব্যবস্থা নেই। কন্টেনমেন্ট জ়োনগুলিতে পুলিশের তরফে গার্ডরেল দেওয়া হয়েছে। অনেক জায়গায় মানুষ তা সরিয়েই যাতায়াত করছেন। এমনকী, বাইরে থেকে খাবার সরবরাহের কাজ করা যুবককেও কন্টেনমেন্ট জ়োনে ঢুকতে দেখা গিয়েছে এ দিন।

তবে অনেক সচেতন নিজেদের ঘরবন্দি থাকছেন। কামারথুবার ওই এলাকাতেই দেখা গেল, মাঠ পেরিয়ে সাইকেল নিয়ে বাইরে বেরোচ্ছেন দুই ব্যক্তি। প্রশ্ন করতে বললেন, ‘‘না বেরোলে খাব কি! বাজারহাট তো করতে হবে।’’

কন্টেনমেন্ট জ়োনে যত্রতত্র যাতায়াত চলছে বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকাতেও। কন্টেনমেন্ট নিয়ে প্রথম থেকেই ধন্দ রয়েছে বলে জানান অনেকেই। বসিরহাট শহরের ১০, ১২ এবং ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের কিছু কিছু এলাকা কন্টেনমেন্ট করা হয়েছে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে মাইকে সব দোকান ও বাজার বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়। তা শুনে বহু দোকান বন্ধও হয়ে যায়। তবে বাজার খোলা ছিল। একদিন পরে, শুক্রবার মাইকে দোকান ও বাজার দু’টোই খোলা রাখার জন্য বলা হয় বলে জানালেন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ। তা শুনে শনিবার থেকে ফের সব খুলে যায়।

শহরবাসীদের অভিযোগ, কোন ওয়ার্ডের কতটা কন্টেনমেন্টের আওতায় পড়ছে, তা পরিস্কার নয় অনেকের কাছেই। পুলিশের তরফেও কোনও ব্যারিকেড করা হয়নি। ফলে যত্রতত্র আসা-যাওয়া চলছেই। পাশাপাশ, যে সব ওয়ার্ডে সব থেকে বেশি করোনায় আক্রান্ত বা মৃত্যু হয়েছে, সেই সব ওয়ার্ড কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়নি বলেও অভিযোগ।

বসিরহাট জেলা পুলিশের সুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই অবশ্য জানান, সরকারি নির্দেশ মতো কন্টেনমেন্ট জ়োনে পুলিশ কড়া ব্যবস্থা করছে। কেউ ভুল প্রচার করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ক্যানিং ১ ব্লকের কোনও কন্টেনমেন্ট জ়োনেই এ দিন লকডাউনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়নি। সকাল সকাল বহু মানুষ বাজার করতে বেরোন। দোকানপাটও অন্য আর পাঁচটা দিনের মতোই খোলে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে কিছু দোকান, বাজার বন্ধ করে দেয়। পুলিশের তরফে এলাকায় মাইকে প্রচার করা হয়েছে। ভাঙড়ে কন্টেনমেন্টের আওতায় থাকা এলাকাগুলিতেও রাস্তাঘাটে বহু মানুষ চোখে পড়েছে দিনভর।

কন্টেনমেন্টের আওয়ায় থাকা ডায়মন্ড হারবার ১ ও ২ ব্লক, মন্দিরবাজার, মথুরাপুর ১ ও ২, মগরাহাট ১ ও ২ ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশি নজরদারির অভাব রয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। সেই সুযোগে লকডাউন উপেক্ষা করে বাইরে বেরোচ্ছেন বহু মানুষ। তবে বেশ কিছু জায়গায় এ দিন পুলিশি তৎপরতা চোখে পড়েছে। কন্টেনমেন্ট জ়োনের বাইরেও মাস্ক পরা বা দূরত্ব মানার ক্ষেত্রে মানুষকে বুঝিয়েছেন পুলিশ কর্মীরা। কিছু জায়গায় মাস্ক না পরে বাইরে বেরোনোয় ব্যবস্থাও নিয়েছে পুলিশ। ক্যানিংয়ে মাস্ক ছাড়া বাইরে বেরোনোয় এ দিন কয়েকজনকে কান ধরে ওঠবোস করানো হয়। ঘটকপুকুরে মাস্ক না পরায় জরিমানা করা হয় ২০ জনকে। তবে কাকদ্বীপ মহকুমায় লকডাউনের ভাল প্রভাব ছিল শনিবার। সাগর, নামখানা, কাকদ্বীপ ও পাথরপ্রতিমা চারটি ব্লকের বাসিন্দাদের আগে লকডাউনের সময়ে ঘরবন্দি করতে অনেক মেহনত করতে হয়েছিল। জমায়েত দেখলে কোথাও লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করেছে পুলিশ, কোথা লাঠিচার্জ করে ঘরে ঢোকাতে হয়েছিল। কিন্তু এখন তা অনেকটাই বদলে গিয়েছে।

সাগর ব্লকের রুদ্রনগর ও কৃষ্ণনগর এলাকায় কয়েকজনের পজ়িটিভ মিলেছিল। ওই এলাকা এ বার কন্টেনমেন্ট জ়োন ঘোষণা করা হয়েছে। ওই জ়োনের বাইরে থাকা এলাকার বাসিন্দারাও সতর্ক থাকায় প্রায় কেউ বাইরে বেরোচ্ছেন না বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। তেমন কোনও জমায়েতও চোখে পড়েনি। পুলিশও নিয়ম করে প্রতিটি মোড়ে মোড়ে টহলদারি চালাচ্ছে। মাস্ক না পরলে তাকে দোকানে নিয়ে গিয়ে মাস্ক কিনিয়ে পরানো হচ্ছে, এমন ঘটনাও ঘটেছে।

সাগর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজেন্দ্রনাথ খাঁড়া জানালেন, আগের থেকে মানুষ অনেক সচেতন হয়েছেন। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া রাস্তাঘাটে কেউ বেরোচ্ছেন না। প্রত্যেকের মাস্ক পরা বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার না থাকলে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। লাগাতার প্রচার চলছে মাইকে। নামখানা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কল্পনা মালি মণ্ডল বলেন, ‘‘এলাকার বাসিন্দারা আগের থেকে অনেক সচেতন হয়েছেন।’’

—সহ প্রতিবেদন: নির্মল বসু, সীমান্ত মৈত্র, দিলীপ নস্কর, সামসুল হুদা, প্রসেনজিৎ সাহা

অন্য বিষয়গুলি:

Habra Covid 19 Contaiment Zone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE