Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
train

চলন্ত ট্রেনে ফের পাথর, বনগাঁ-লাইনে পুরনো আতঙ্ক

শুক্রবার সন্ধ্যায় বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে ছোড়া পাথরের ঘায়ে জখম হন গাইঘাটার বাসিন্দা পীযূষ সাহা। কামরার গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

জখম: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পীযূষ সাহা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

জখম: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পীযূষ সাহা। ছবি: সুজিত দুয়ারি

সীমান্ত মৈত্র  
হাবড়া শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২২ ০৬:৪০
Share: Save:

বছর দু’য়েক বন্ধ থাকার পরে ফের ফিরে এল চলন্ত ট্রেনের কামরা লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায় চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে ছোড়া পাথরের ঘায়ে জখম হন গাইঘাটার বাসিন্দা পীযূষ সাহা। কামরার গেটের কাছে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। অভিযোগ, সংহতি ও হাবড়ার মাঝে ৩০ নম্বর রেলগেটের কাছে হঠাৎই ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর উড়ে আসে। চোট লাগে পীযুষের বুকে এবং মুখে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাবড়া স্টেশনে নামিয়ে হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তদন্ত শুরু করেছে বনগাঁ জিআরপি। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে। তবে কী উদ্দেশ্যে কারা পাথর ছুড়ল, তা স্পষ্ট নয়।

২০২০ সালের মার্চ মাসে চলন্ত ট্রেনের কামরায় দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলা যাত্রী পাথরের আঘাতে জখম হয়েছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার বারাসত ও বামনগাছি স্টেশনের মাঝে। জখম ওই মহিলার বাড়ি অশোকনগর থানা এলাকায়। গৃহসহায়িকার কাজ করেন তিনি। বিরাটিতে তাঁর মা থাকেন। ঘটনার দিন তিনি বিরাটিতে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় মাতৃভূমি লোকালে বাড়ি ফেরার পথে পাথরের আঘাতে জখম হন। বাঁ পায়ে লেগেছিল পাথর। বারাসত জিআরপিতে অভিযোগ হয়। এই ঘটনার পরে দীর্ঘদিন ট্রেনে উঠতেই ভয় পেতেন বলে জানিয়েছিলেন মহিলা।

কয়েক বছর আগেও বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখায়, অশোকনগর থেকে সংহতি এলাকায় এবং বনগাঁ-রানাঘাট শাখায়, আকাইপুর থেকে সাতবেড়িয়া এলাকায় নিয়মিত ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটত। পাথরের ঘায়ে অনেকে জখম হন। বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুহুরি স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে একদিন শিয়ালদহ থেকে ফিরছিলাম। ট্রেনের জানলার পাশে বসেছিলাম। হাবড়া-অশোকনগরের মাঝে আচমকা তিরের বেগে একটা পাথর জানলা ভেদ করে ঢুকল। কামরার দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে নীচে পড়ে। বড় কালো পাথর। অল্পের জন্য বেঁচে যাই সেবার।’’

বনগাঁ শহরের বাসিন্দা গোরা চৌধুরী জানালেন, একবার রানাঘাট থেকে বনগাঁর বাড়িতে ফিরছিলেন। সন্ধ্যায় গোপালনগর-সাতবেড়িয়ার মাঝে একটি পাথর ট্রেনের জানলায় লেগে ছিটকে পড়ে। জানলায় বসেছিলেন তিনি। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন। এমন অভিজ্ঞতা ওই দু’টি শাখায় যাতায়াত করা অনেক যাত্রীরই আছে। কারা ছোড়ে পাথর? কী তাদের উদ্দেশ্য?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, মূলত নেশা করে ‘মজা’ করতেই পাথর ছোড়ে কিছু যুবক। কারও গায়ে লেগেছে বুঝতে পারলে তারা আনন্দে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। অনেক সময়ে নেহাতই খেলার ছলে পাথর ছোড়া হয়। মানসিক ভাবে অসুস্থ কেউ পাথর ছুড়ে থাকতে পারেন বলেও তদন্তকারীদের অনুমান।

রেলপাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে দুষ্কৃতীরা এলাকায় সন্ত্রাস ও ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পাথর ছুড়ত। রাজ্য ও রেলপুলিশের নিয়মিত ধরপাকড় ও নজরদারির জেরে সে সব বন্ধ হয়েছিল। তবে মাঝে মধ্যে পাথর ছোড়া হয়। জিআরপি সূত্রে জানানো হয়েছে, দুর্গাপুজোর মধ্যেই বনগাঁ-রানাঘাট শাখায় গোপালনগরের মেহেরপুরে সন্ধ্যার পরে ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হচ্ছিল। জিআরপি স্থানীয় পঞ্চায়েত ও বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে তা বন্ধ করে। বনগাঁ জিআরপি জানায়, বনগাঁ থেকে বারাসত কারশেড, রানাঘাট কারশেড এবং বনগাঁ থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত বনগাঁ জিআরপি-র অন্তর্গত। এই বিশাল এলাকায় টহল দেওয়ার জন্য ফোর্স অফিসার মিলিয়ে পুলিশের সংখ্যা মাত্র ৩৫ জন। তারমধ্যেও নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তাদের দাবি।

অন্য বিষয়গুলি:

train stone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy