বেহাল রাস্তা। — নিজস্ব চিত্র।
মাস তিনেক আগে মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন ‘পথশ্রী রাস্তাশ্রী’ প্রকল্পে রাজ্য জুড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার রাস্তা তৈরি ও সংস্কার হবে। গোটা রাজ্যের মতো দুই ২৪ পরগনার বহু এলাকাতেই রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মানুষের। দীর্ঘ দিন ধরে দাবি জানিয়েও রাস্তা সংস্কার হয়নি, এমন সংখ্যা নেহাত কম নয়। প্রকল্পের সূচনা হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন অনেকে। কিন্তু অভিযোগ, বহু রাস্তা প্রকল্পের আওতাভুক্ত হয়নি। আবার অনেক রাস্তার কথা প্রকল্পে উল্লেখ থাকলেও এখনও কাজ শুরুই হয়নি। বর্ষার আগে বেশ কিছু বেহাল রাস্তা সংস্কারের দাবি তুলেছিলেন স্থানীয় মানুষ। ডায়মন্ড হারবার, বাসন্তী ব্লকের কয়েকটি এলাকায় বিক্ষোভও দেখান গ্রামবাসীরা। রাস্তা তৈরি না হলে ভোট দেবেন না বলে জানান অনেকে। কিন্তু তারপরেও বহু কাজ অসম্পূর্ণ। কোথাও কোথাও কাজ শুরুই হয়নি। গোটা বিষয়টি আসন্ন ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। যদিও শাসকদলের দাবি, প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে চলছে। দ্রুত তা শেষ হবে।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘আমাদের জেলায় পথশ্রী প্রকল্পে ঘোষিত রাস্তাগুলির মধ্যে ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। ৪০ শতাংশ রাস্তার কাজ চলছে। বাকি রাস্তার কাজ ভোটের পরে শুরু করা হবে।’’
যদিও জেলার মানুষের অভিযোগ, বেশ কিছু জায়গায় পথশ্রী প্রকল্পে রাস্তা তৈরি হবে বলে ফলক লাগানো হয়েছে। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। আরও অভিযোগ, পুরনো বকেয়া বাকি থাকায় ঠিকাদারদের একাংশ নতুন করে কাজ করতে চাইছেন না। ফলে কাজ থমকে আছে। গ্রামবাসীদের প্রশ্ন, ভোট মিটে গেলে রাস্তার কাজ আদৌ শেষ হবে তো?
আমডাঙ্গা, দেগঙ্গা ও বারাসাত ১ ব্লকের বহু রাস্তা এখনও ভাঙাচোরা। বর্ষা আসতেই জমা জলে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। প্রায়ই ঘটছে ছোটখাট দুর্ঘটনা। এ বিষয়ে সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আহমেদ আলি খান বলেন, ‘‘আবাস-সহ চাকরি ও অন্যান্য দুর্নীতি থেকে নজর ঘোরাতে রাস্তা সংস্কারের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে উদ্বোধন করল সরকার। কিন্তু রাস্তা হল না। ভোটের আগে চমক দেওয়ার ফন্দি এ সব।’’
দেগঙ্গা ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মফিদুল হক সাহাজি বলেন, ‘‘তালিকায় থাকা অধিকাংশ রাস্তা সংস্কার ও তৈরি হয়েছে। অল্প কিছু জায়গায় নানা কারণে কাজ আটকে আছে। কিছু দিনের মধ্যে ওই কাজশেষ হবে।’’
হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের বায়লানি বাজার থেকে হাসনাবাদের ঘুনি বাঁশতলা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার পিচের রাস্তাটি বহু বছর ধরে বেহাল। রাস্তার কারণে কয়েক মাস ধরে শিথলিয়া-ধর্মতলা রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এপ্রিল মাসে হিঙ্গলগঞ্জের তৃণমূলের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল ফিতে কেটে আনুষ্ঠানিক ভাবে পথশ্রী প্রকল্পে রাস্তা সংস্কারের কাজের উদ্বোধন করেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই রাস্তা সংস্কার হয়নি। শুধুমাত্র রাস্তার দু’পাশে মাটি ফেলে পাইলিং করা হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুদ্দিন গাজি বলেন, ‘‘ধীর গতিতে কাজ হয়েছে। ভেবেছিলাম ভোটের আগে কাজ শেষ হবে। কিন্তু তা হল না।’’ বিজেপি নেতা তুলসী দাসের কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার মানুষকে বোকা বানিয়ে ভোট নিতে চায়।’’ বিধায়ক দেবেশ মণ্ডলকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
পথশ্রী প্রকল্পে বেশ কিছু রাস্তার সংস্কার হয়েছে বলে জানালেন ক্যানিং, বাসন্তী, গোসাবা এলাকার মানুষ। যদিও অভিযোগ, বহু বেহাল রাস্তা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফলে বর্ষায় সমস্যায় পড়ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।
ডায়মন্ড হারবার ব্লকে কিছু জায়গায় পথশ্রী প্রকল্পে রাস্তার কাজ শুরু হলেও সরঞ্জাম নিয়েও নানা অভিযোগ উঠেছে। নিম্নমানের সরঞ্জাম ও প্রকল্পের নির্দেশ মতো রাস্তার গুণগতমান ঠিক রাখা হয়নি বলেও একাধিক অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। মথুরাপুর ১ ব্লকের উত্তর লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের বাপুলিরচক মাঝেরপাড়ার রাস্তাটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে তার উপর দিয়ে যাতায়াত করছেন স্থানীয় মানুষ। রাস্তা সংস্কার না হলে ভোট দিতে যাবেন না বলেও জানান গ্রামবাসীদের একাংশ। এ বিষয়ে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘পথশ্রী প্রকল্পে অধিকাংশ রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। কিছু এলাকায় কাজ বাকি আছে। ভোটের পরে তা শেষ করা হবে।’’
সামনে ভোট থাকা সত্ত্বেও যেখানে কাজ হল না, সেখানে ভোট মিটলে নেতারা প্রতিশ্রুতির কথা কতটা মনে রাখবেন— তা নিয়ে সংশয়ে ভুগছেন গ্রামবাংলার বহু মানুষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy