দাবি: জেলাশাসকের অফিসের দিকে চলেছে মিছিল। নিজস্ব চিত্র
হরিয়ানা মডেলে সিলিকোসিসে আক্রান্ত অসুস্থ ও মৃতদের পরিবারগুলিকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ-সহ বিভিন্ন দাবিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসককে স্মারকলিপি দিল কয়েকটি সংগঠন। বেআইনি পাথর খাদান, ইটভাটাগুলিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসারও দাবি জানানো হয়েছে।
কোঅর্ডিনেশন কমিটি এগেনস্ট সিলিকোসিস অ্যান্ড আদার্স অকুপেশনাল ডিজিজ, সিলিকোসিস আক্রান্ত সংগ্রামী শ্রমিক কমিটি, পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ-সহ বিভিন্ন সংগঠন শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসকের দফতরে মিছিল করে যায়। চেতলা পার্ক থেকে বেরিয়েছিল মিছিল। পুলিশ দফতরের অদূরে মিছিল আটকে দেয়। পরে ৬ জনের একটি প্রতিনিধি দল সিলিকোসিসে আক্রান্ত ও মৃতদের পরিবারকে এককালীন ৪ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ, পরিবারগুলিকে মাসিক পেনশন-সহ ৭ দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেয়। জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘ওঁরা বেশ কিছু দাবির কথা জানিয়েছেন। বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
২০০৯ সালে আয়লার পরে এবং তার আগে থেকেই উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি ১, ২ ব্লকের রাজবাড়ি, ভাঁটিদহ, সুন্দরীখাল, মাঝের সরবেড়িয়া, আগারাটি, জেলেখালি, ধুপখালি, মিনাখাঁ ব্লকের গোয়ালদহ, দেবীতলা, ধুতুরদহ, জয়গ্রাম, ক্যানিং ২ ব্লকের পারগাঁতি, মদনখালি এবং দেগঙ্গা ব্লক এলাকা থেকে বহু মানুষ আসানসোল, জামুড়িয়া, কুলটি, রানিগঞ্জ এলাকায় পাথর খাদান, স্টোন ক্রাশার ফ্যাক্টরিতে কাজে যান। পরবর্তী সময়ে এঁদের মধ্যে অনেকেই শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, জ্বর, ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে গ্রামে ফেরেন। সিলিকোসিসের মতো মারণ রোগ শরীরে বাসা বাঁধে অনেকের। এখনও পর্যন্ত ওই সব এলাকায় সিলিকোসিসে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
অসহায় ওই সব মানুষ ও তাঁদের পরিবারের পাশে সে ভাবে সরকার দাঁড়ায়নি বলে অভিযোগ ওঠে। সরকারি উদাসীনতার বিরুদ্ধে সরব হন গণসংগঠনের কর্মী, সমাজকর্মী আইনজীবীরা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন সিলিকোসিস আক্রান্ত মৃতদের পরিবারগুলিকে এককালীন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয়। ২০১৮ সালে হরিয়ানা মডেলে রাজ্য সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন আইনজীবীরা। সেই মতো কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়, হরিয়ানা মডেলেই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য। ওই নির্দেশের পরে এখনও পর্যন্ত মিনাখাঁ ব্লকের ২৩ জন মৃতের পরিবারের মধ্যে মাত্র ১১ জনের পরিবার ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। তার পরেও দিন দিন সিলিকোসিসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু-মিছিল বেড়ে চলেছে। অধিকাংশ পরিবার সরকারি ক্ষতিপূরণ বা অন্যান্য সুযোগ- সুবিধা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ ওঠে।
অথচ হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, আক্রান্ত ও মৃতদের পরিবার পিছু মাসিক পেনশন, পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা, মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা, এলাকায় স্বাস্থ্য শিবির-সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও সরকারি ভাবে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। সিলিকোসিসে আক্রান্ত ও মৃতদের পরিবারের অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে সিলিকোসিসে মৃত ব্যক্তিদের মৃত্যুর শংসাপত্রে ‘সিলিকোসিস’ লেখা হচ্ছে না। যে কারণে সরকারি ক্ষতিপূরণ থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
পাঁচ বছর আগে জীবনতলা থানার মদনখালি গ্রামের সইদ বানুর স্বামী রমজান লস্কর মারা যান। আজও পরিবার কোনও সরকারি সাহায্য পায়নি। সইদ বলেন, ‘‘আমার দুই ছেলে টাকার অভাবে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। ব্যাগ সেলাইয়ের কাজ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করি। আমার নিজের অসুস্থতার কারণে ঠিক মতো কাজ করতে পারি না। চিকিৎসাও করাতে পারি না। বিভিন্ন জায়গায় আবেদন নিবেদন করেও সরকারি সাহায্য পাইনি।’’
কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও সিলিকোসিস আক্রান্ত সংগ্রামী শ্রমিক কমিটির পক্ষে তাপস গুহ, সাইদুল পাইক বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও রাজ্য সরকার সিলিকোসিসে আক্রান্ত ও মৃতদের পরিবারগুলিকে হরিয়ানা মডেলে কোনও ক্ষতিপূরণ বা সরকারি সাহায্য দিচ্ছে না। গ্রামে ঠিকমতো স্বাস্থ্য শিবির হচ্ছে না।’’ পাথর খাদানগুলিকে আইনি বৈধতা দিলে মালিকেরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে ন্যূনতম পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবেন বলে মনে করেন আন্দোলনকারীরা। সে ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের থেকেও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার সুযোগ পাবে পরিবারগুলি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy