জেলা কমিটিতে ফের জায়গা পেলেন শঙ্কর। প্রতীকী চিত্র।
দলে দীর্ঘ দিন ব্রাত্য থাকার পরে ফের তৃণমূলের সাংগঠনিক পদে ফিরলেন বনগাঁর প্রাক্তন পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। বুধবার বিকেলে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন দলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস এবং জেলা চেয়ারম্যান শ্যামল রায়। জেলা কমিটির সদস্যদের নাম ঘোষণা করেন তাঁরা। কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন ৩৫ জন। এ ছাড়া, ৬ জনের অ্যাডভাইজ়ারি কমিটি তৈরি হয়েছে। অ্যাডভাইজ়ারি কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে বনগাঁর পুরপ্রধান গোপাল শেঠকে। মূল কমিটিতে ৫ জন সাধারণ সম্পাদক আছেন। তার মধ্যে জায়গা পেয়েছেন শঙ্কর।
দলের অনেকের মতে, বিশ্বজিতের সৌজন্যেই জায়গা পেলেন শঙ্কর। দলের ভিতরের সমীকরণ ঠিক রাখতেই বনগাঁয় তৃণমূল রাজনীতিতে ফের প্রাসঙ্গিক করে তোলা হল শঙ্করকে। কয়েক বছর আগে বিশ্বজিৎ ও শঙ্করের মধ্যে রেষারেষি ছিল স্পষ্ট। এক তৃণমূল নেতার কথায়, “সময় অনেক কিছুই ভুলিয়ে দেয়। পারস্পরিক প্রয়োজনীয়তা মানুষকে কাছে টেনে আনে।” ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে বনগাঁ মহকুমায় তৃণমূলের ভরাডুবির পরে বনগাঁকে তৃণমূল নেতৃত্ব আলাদা সাংগঠনিক জেলা হিসাবে ঘোষণা করেন। সভাপতি করা হয়েছিল আলোরানি সরকারকে। পরবর্তী সময়ে সভাপতি করা হয় গোপাল শেঠকে। তারপর সভাপতি হন বিশ্বজিৎ। আলোরানি এবং গোপাল কেউই পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি তৈরি করতে পারেননি।
২০১৫ সালে ভোটে জিতে শঙ্কর পুরপ্রধান হন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে বনগাঁ শহর তৃণমূলের সভাপতি করা হয়, বাগদায় দলের পর্যবেক্ষকও করা হয়েছিল। এ ছাড়াও দলের একাধিক পদ সামলেছেন শঙ্কর।
কিন্তু ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে বনগাঁয় তৃণমূলের পরাজয়ের পরে শঙ্করকে সব পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পুরপ্রশাসকের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে আনা হয় গোপাল শেঠকে। গত বছর পুরসভা ভোটে শঙ্করকে দল প্রার্থী করেনি। যদিও তাঁর স্ত্রী জ্যোৎস্না আঢ্য টিকিট পেয়েছিলেন। শঙ্করের মেয়ে ও ভাই কংগ্রেসের প্রতীকে দাঁড়িয়েছিলেন। মেয়ে জয়ীও হয়েছেন।
ইদানীং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে শঙ্কর নিজেকে অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছিলেন। বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার শঙ্করের কালীপুজো ও দুর্গাপুজোর উপস্থিত হয়ে গুঞ্জন বাড়িয়েছিলেন। তৃণমূলের কিছু স্থানীয় নেতা সভা থেকে শঙ্করের নাম না করে সমালোচনা করে দাবি করেন, শঙ্কর তৃণমূলে নেই। অন্য কোনও দল করেন। পুরপ্রধান গোপাল এবং তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নারায়ণ ঘোষকে শঙ্করের সঙ্গে কোনও দলীয় সভায় এক সঙ্গে দেখা যায়নি বলেই জানাচ্ছেন দলের কর্মীদের একাংশ।
ওই কর্মীরা জানাচ্ছেন, শঙ্কর যখন পুরপ্রধান এবং বিশ্বজিৎ যখন বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন, তখন তাঁদের মধ্যে দূরত্ব ছিল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটে একটি দলীয় সভায় দু'জনকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন এ নিয়ে।
লোকসভা ভোটের পরে বিশ্বজিৎ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যান। ঘনিষ্ঠ মহলে বিশ্বজিৎ জানিয়েছিল, দল ছাড়ার অন্যতম কারণ ছিলেন শঙ্কর। বিশ্বজিৎ এ দিন বলেন, “তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করে করছেন, শঙ্করকে সাংগঠনিক দক্ষতাকে কাজে লাগানো প্রয়োজন। সে কারণে তাঁকে পদে বসানো হয়েছে। শঙ্করকে তো কখনও দল বলেনি যে তিনি বহিষ্কৃত। মাইকে কে কী বলল, তা তাঁরাই বলতে পারবেন।”
পদ পেয়ে কী বলছেন শঙ্কর?
তাঁর কথায়, ‘‘দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, দলের এক জন সৈনিক হিসাবে তা পালন করব। আগেও করেছি।”
দলের অন্দরের খবর, সাম্প্রতিক সময়ে গোপাল শেঠের সঙ্গেও দূরত্ব বেড়েছে শঙ্করের। গোপাল এ দিন শঙ্করের দলীয় পদ পাওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। শঙ্করের পদ পাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হতেই তাঁর অনুগামীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার শুরু করেছেন। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করে শঙ্করকে শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দাদা ফের স্বমহিমায় ফিরে এসেছেন।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy