—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
বাংলাদেশের নড়াইলের বাসিন্দা আশি বছরের বৃদ্ধ বুধবার এ দেশে এসেছিলেন। যাবেন নদিয়ায়। অনেক আগেই টুরিস্ট ভিসা নেওয়া ছিল। পেট্রাপোল সীমান্তে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী ছিলাম। আমাদের মুখে মুখে ঘুরত জয় বাংলা স্লোগান। আমরা গর্বিত বোধ করতাম সেই স্লোগান দিয়ে। সেটা এখন আর দেশের স্লোগান নেই, ভাবতেই পারছি না!’’ বৃদ্ধের বক্তব্যকে সমর্থন জানালেন নড়াইল থেকে আসা বৃদ্ধ বীরেন হালদারও।
জয় বাংলা স্লোগান আপাতত আর বাংলাদেশের জাতীয় স্লোগান নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা সহ ও দেশের মানুষের মুখে মুখে ঘুরত এই স্লোগান। এই স্লোগান দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সাহস পেতেন, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতেন বলে জানাচ্ছেন প্রবীণ বাংলাদেশিদের অনেকেই। ২০২০ সালের ১০ মার্চ বাংলাদেশ হাই কোর্ট জয় বাংলাকে জাতীয় স্লোগানের স্বীকৃতি দিয়েছিল। সম্প্রতি বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সুপ্রিম কোর্টে এর বিরুদ্ধে আপিল করে। সুপ্রিম কোর্ট, হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে স্থগিত দিয়েছে।
এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ এবং আতঙ্কিত বাংলাদেশ থেকে বুধবার পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে এ দেশে আসা সাধারণ বাংলাদেশিরা। তাঁদের মধ্যে সংখ্যালঘু, সংখ্যাগুরু— সব ধরনের মানুষই আছেন। ইমরান হোসেন নামে এক বাংলাদেশির কথায়, ‘‘ইউনূস সরকার আসলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শেখ মুজিবর রহমানকে মুছে দিতে চাইছে। শেখ হাসিনা অন্যায় করে থাকলে তাঁর বিচার হোক। কিন্তু দেশের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা আমরা কোনও ভাবেই মেনে নেব না।’’ বরিশাল থেকে এসেছিলেন এক সংখ্যালঘু ব্যক্তি। তিনি কর্মসূত্রে ঢাকায় থাকেন। বাড়ি বরিশালে। ওই ব্যক্তির কথায়, ‘‘ভারতের উপরে ওঁদের এত বিদ্বেষের কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।’’ গোপালগঞ্জ থেকে আসা এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘দেশের এই কঠিন পরিস্থিতিতে সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে একজোট হয়ে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। তা হলেই হয় তো দেশটাকে বাঁচানো যাবে।’’
নির্মল হালদার নামে বাংলাদেশির মতে, ‘‘জয় বাংলা স্লোগান জাতীয় না হলেও তা আমাদের হৃদয়ে মিশে গিয়েছে। এটাকেই আমরা ভবিষ্যতে জাতীয় স্লোগান মানব।’’ এ কথা বলে হাত মুঠো করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে উঠলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা’— জাতীয় সঙ্গীত থাকবে কিনা, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে বহু বাংলাদেশির মনে।
বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন পেশায় শিক্ষক, সংখ্যাগুরু ব্যক্তি। বললেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে ইউনূস সরকারের এই মাখোমাখো সম্পর্কের ফল ভবিষ্যতে আমাদের ভুগতে হতে পারে। একাত্তরের যুদ্ধের পরাজয় ওরা ভুলতে পারেনি। সুযোগ পেয়ে ভারতের বিরুদ্ধে এখন বাংলাদেশকে ব্যবহার করা হচ্ছে।’’
এরই মধ্যে অবশ্য আশার কথা শোনালেন কয়েক জন সংখ্যালঘু বাংলাদেশি। জানালেন, দেশের শহরগুলিতে সংখ্যালঘুদের উপরে তুলনায় কম অত্যাচার হচ্ছে। বরং গ্রামীণ এলাকায় বেশি হচ্ছে। নড়াইলের এক তরুণীর কথায়, ‘‘আমরা শহরে বসবাস করি। ওখানে এখনও সংখ্যাগুরুরা আমাদের পাশে আছেন। আপদে-বিপদে সহযোগিতা করছেন। আমরা চাই, দেশের সর্বত্র এই পরিস্থিতি তৈরি হোক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy