বন্ধুর পাশে বন্ধু। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
দু’জনেরই বাবা-মা নেই। এক জন ঠাকুমার সঙ্গে, অন্য জন দাদু-দিদিমার সঙ্গে থাকে। দু’জনেই গাইঘাটা ব্লকের পাঁচপোতা ভাড়াডাঙা হাই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া। এক জনের নাম রিম্পা পাড়ুই, অন্য জন গোপাল দাস। আর্থিক অনটনের সঙ্গে লড়াই করে ওরা পড়াশোনা করছে। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া জোটে না। স্বাভাবিক কারণেই দু’জনের পুজোয় এ বার জামা হয়নি।
স্কুলের সহপাঠীরা সে কথা জানতে পারে। তারা নিজেরা টাকা তুলে জামা কিনে দিয়েছে। কেউ বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা এনেছে। কেউ টিফিনের খরচ বাঁচিয়ে টাকা দিয়েছে। পুজোর আগে নতুন জামা পেয়ে মুখে হাসি ফুটেছে রিম্পা-গোপালের।
রিম্পার বাড়ি বেড়িগোপালপুর এলাকায়। বাবা-মা আলাদা ভাবে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। রিম্পা থাকে ঠাকুমা আরতি এবং ঠাকুরদা কার্তিকের সঙ্গে। কার্তিক অসুস্থ, কাজকর্ম করতে পারেন না। বৃদ্ধা আরতি দিনমজুরি, খেতমজুরি করেন। সম্প্রতি নিম্নচাপের বৃষ্টিতে গাইঘাটা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে গিয়েছে। অনেকের কাজকর্ম বন্ধ। আরতিরও কাজ নেই। গোপালের বাবা-মা তাকে ছেড়ে আলাদা চলে গিয়েছেন। দিদার কাছে থাকে সে। দাদু মারা গিয়েছেন। দিদা ফুলখেতে কাজ করেন। খেত জলমগ্ন হওয়ায় তিনি কর্মহীন।
ক’দিন আগে স্কুলের শিক্ষক সন্দীপ ঘোষ ক্লাসে পড়ুয়াদের কাছে জানতে চান, পুজোয় কার কী পোশাক হয়েছে। তখনই রিম্পা, গোপাল জানায়, তাদের কোনও জামা হয়নি। সন্দীপের কথা মতো শুভ্রজিৎ বিশ্বাস, সোনালি বড়াল, জয়দীপ চক্রবর্তী, তনুশ্রী পাল সহ আরও বেশ কিছু সহপাঠী টাকা সংগ্রহ করে রিম্পা এবং গোপালের হাতে নতুন জামা, লজেন্স, খাতা তুলে দিয়েছে।
সহপাঠীদের কথায়, ‘‘আমরা পুজোয় নতুন পোশাক পরব, মণ্ডপে যাব ঠাকুর দেখতে। নতুন পোশাক পরে অঞ্জলি দেব। আর আমাদের দুই বন্ধুরা মনমরা হয়ে ঘুরবে, এটা আমরা মেনে নিতে পারিনি।’’ খুশি রিম্পা-গোপাল। তারা জানায়, পুজোয় নতুন জামা হয়নি বলে মনে কষ্ট ছিল। সহপাঠীরা সে দুঃখ ভুলিয়ে দিয়েছে। খুব আনন্দ হচ্ছে। সন্দীপের কথায়, ‘‘বন্ধুদের একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর এই শিক্ষা ওদের ভবিষ্যতে প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy