অদম্য: কাজ ছেড়ে এই স্কুলেই ফিরে এসেছে সেলিম (ইনসেটে)। নিজস্ব চিত্র।
পড়াশোনায় বরাবরই ভাল মৌসুনি কো-অপারেটিভ হাইস্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শেখ সেলিম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পরিবারের রোজগার তলানিতে ঠেকে। বাধ্য হয়ে শ্রমিকের কাজ নিয়ে সে পাড়ি দেয় কেরলে। কিন্তু স্কুল খোলার খবর পেয়েই কাজ ছেড়ে ফিরে এসেছে সেলিম। যোগ দিয়েছে স্কুলে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রত্যন্ত এলাকার বেশিরভাগ বিদ্যালয়েই স্কুলছুটদের ফেরাতে হিমশিম খাচ্ছেন শিক্ষকেরা। সেখানে সেলিমের এই পদক্ষেপে খুশি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, নামখানা ব্লকের মৌসুনি পঞ্চায়েতটি নদী ও সমুদ্র ঘেরা একটি দ্বীপ এলাকা। সেখানকারই পয়লাঘেরি গ্রামের বাসিন্দা সেলিম। পেশায় দিনমজুর বাবা করোনা আবহে কাজ হারান। পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে সেলিম মেজো। বড় ভাই কেরলে কাজ করে। লকডাউনে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে সেলিম শ্রমিকের কাজ নিয়ে কেরল চলে যায়।
তবে পড়াশোনা ছাড়েনি। বরং একটি স্মার্টফোন কিনে নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস করা শুরু করে। পরে ফোনটি খারাপ হয়ে যাওয়ায় ক্লাস করা বন্ধ হয়ে যায় তার। দিন কয়েক আগে বন্ধুর কাছে স্কুল খোলার খবর পেয়ে একাই ট্রেনে চেপে বাড়ি ফিরে এসেছে সে। সেলিমের কথায়, ‘‘কাজ করলেও মন পড়ে থাকত স্কুলে। খোঁজ নিতাম, কবে স্কুল খুলবে। খবর পেয়েই ফিরে এসেছি।’’ সেলিমের কথায়, ‘‘জানুয়ারি মাসে জাতীয় স্কলারশিপ পরীক্ষা রয়েছে। তাতে বসতে চাই। ভাল ফল করলে কেন্দ্রীয় সরকারের আর্থিক সাহায্য পাব। ওই টাকা আমার পড়াশোনায় কাজে লাগবে।’’
এত অনটনের মধ্যেও ছেলে পড়াশোনা করতে বাড়ি ফিরে আসায় খুশি সেলিমের বাবা-মা। মা সামিরুল বিবি বলেন, ‘‘অভাবের সংসারে ছেলেটা বাধ্য হয়েছিল কাজে যেতে। কিন্তু আমার কাছে সব সময়ে খোঁজ নিত, স্কুল খুলেছে কি না। ও ফিরে আসায় আমি খুব খুশি। যত কষ্টই হোক, আমি চাই ছেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাক।’’
স্কুলের গণিতের শিক্ষক অর্ঘ্যতনু মান্না বলেন, ‘‘সেলিম কৃতী ছাত্র। ও ফিরে আসায় ভাল লাগছে। বর্তমানে স্কুলের উৎসাহী পড়ুয়াদের নিয়ে স্কলারশিপ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করছি।’’
স্কুল সূত্রের খবর, সেলিম ফিরে এলেও অনেক পড়ুয়া স্কুলে আসছে না। এদের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু ছাত্র ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজে চলে গিয়েছে। কিছু ছাত্র এলাকায় ডাব বা বাজারে মশলাপাতি বিক্রি করে আয়ের পথ বেছে নিয়েছে। স্কুলের শিক্ষকেরা জানালেন, ওই পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরানোর চেষ্টা চলছে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিনয় শী বলেন, ‘‘সেলিমকে ফিরে পেয়ে আমরা খুশি। আপাতত ছাত্রছাত্রীদের অনুপস্থিতির হার ৭-১০ শতাংশ। ওই পড়ুয়াদের ফেরাতে অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy