Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
সাংসদের চিঠি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে
Jessore Road

ফের যশোর রোড সম্প্রসারণের আবেদন

চিঠিতে বলা হয়েছে, যশোর রোড একটি আন্তর্জাতিক সড়ক। এ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে সড়কপথে যুক্ত করেছে। কলকাতা থেকে পেট্রাপোল সুসংহত চেকপোস্টের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার।

দু’পাশে সবুজঘেরা যশোর রোড বহু জায়গায় এখন এতটাই অপরিসর, পাশাপাশি দু’টি গাড়ি যেতেও সমস্যা হয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক 

দু’পাশে সবুজঘেরা যশোর রোড বহু জায়গায় এখন এতটাই অপরিসর, পাশাপাশি দু’টি গাড়ি যেতেও সমস্যা হয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক  nirmalya pramanik

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:৩৭
Share: Save:

দ্রুত যশোর রোড বা ১১২ নম্বর জাতীয় সড়ক চওড়া এবং সম্প্রসারণ করার আর্জি জানিয়েছেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। তিনি চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গড়কড়ীকে। ২ সেপ্টেম্বর দেওয়া চিঠিতে শান্তনু কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়েছেন, কেন যশোর রোড দ্রুত চওড়া এবং সম্প্রসারণ করা জরুরি। শান্তনু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণমন্ত্রীর কাছে বারাসত থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ৬০ কিলোমিটার যশোর রোড চওড়া এবং সম্প্রসারণ করার আবেদন করেছি। এই বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করারও আর্জি জানানো হয়েছে। বলেছি, যশোর রোড এখন এক লেনের। সেটি ৪ বা ৬ লেন করা হোক।’’

চিঠিতে বলা হয়েছে, যশোর রোড একটি আন্তর্জাতিক সড়ক। এ দেশের সঙ্গে বাংলাদেশকে সড়কপথে যুক্ত করেছে। কলকাতা থেকে পেট্রাপোল সুসংহত চেকপোস্টের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। যশোর রোডটি সম্প্রসারণ কেন জরুরি হয়ে উঠেছে, সে বিষয়ে চিঠিতে লেখা হয়েছে, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দু’দেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত অনেক বেড়েছে। বছরে প্রায় ২৩ লক্ষ মানুষ এখান দিয়ে যাতায়াত করেন। পেট্রাপোল দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর। সড়কপথে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যের প্রায় ৬০ শতাংশ হয় এই বন্দর দিয়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাকে করে পণ্য আসে। কিন্তু যশোর রোড সংকীর্ণ হওয়ায়, বিশেষ করে সন্ধ্যার পরে বারাসত থেকে ট্রাক আসতে কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে যায়। শান্তনু বলেন, ‘‘যশোর রোড সম্প্রসারণ হলে দু’দেশের মধ্যে যাত্রী যাতায়াত মসৃণ হবে। বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়বে এবং স্থানীয় মানুষও উপকৃত হবেন।’’

দীর্ঘ দিন ধরেই যশোর রোড সম্প্রসারণ বা সড়ক রোডে পাঁচটি রেলসেতু তৈরির কাজ থমকে আছে। কয়েক বছর আগে যশোর রোডে বারাসতে একটি, অশোকনগরে একটি, হাবড়ায় দু’ টি এবং বনগাঁয় একটি রেলসেতু তৈরির কাজের অনুমোদন করে কেন্দ্র। সমীক্ষার কাজ, মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ হয়। যশোর রোডের পাশে থাকা প্রাচীন গাছ কাটার কাজও শুরু হয়েছিল। ওই সময়ে বৃক্ষপ্রেমী এবং পরিবেশবিদেরা পথে নামেন। তাঁরা দাবি তোলেন, প্রাচীন গাছগুলিকে বাঁচিয়ে সড়ক সম্প্রসারণ করতে হবে। যশোর রোড গাছ বাঁচাও মঞ্চ তৈরি হয়।

মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর আদালতে মামলা করে। ২০১৮ সালে ৫টি রেল ওভারব্রিজের জন্য হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয়। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন পরিবেশপ্রেমীরা। গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কেই বহাল রেখে ৩৫৬টি গাছ কাটার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে ঝড়ে কয়েকটি গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে ৩০৬টি গাছ কাটতে হবে। আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, একটি গাছ কাটার পরিবর্তে পাঁচটি করে নতুন গাছ লাগাতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের ওই নির্দেশের পরে গত বছরই এপিডিআর-এর পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়, যশোর রোডের দু’পাশে থাকা গাছগুলি সম্পূর্ণ অক্ষত রাখা হোক। একটি গাছও যেন কাটা না হয়। পাশাপাশি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে গাছগুলি নিয়মিত পরিচর্যা করারও দাবি ওঠে। এই সব দাবি নিয়ে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছিল এপিডিআর-এর বারাসত ও বনগাঁ শাখার পক্ষ থেকে। ওই স্মারকলিপিতে বনগাঁ, হাবড়া, অশোকনগর ও বারাসতের কয়েক হাজার মানুষ সই করেছিলেন। আবেদনে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছিলেন রাজ্যের বহু বিশিষ্টজন। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেওয়া স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছিল, নাগরিকের যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহণে স্থায়ী বিকল্প প্রস্তাব কী হতে পারে। বলা হয়, যশোর রোডের প্রায় সমান্তরাল যাওয়া রেলপথটিই হতে পারে এই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থার স্থায়ী এবং সুষ্ঠু সমাধান। আজকের রেল চলাচলের দুই লাইনকে ক্রমে তিন লাইনে রূপান্তরিত করে, পরিবেশবান্ধব ট্রেনের সংখ্যা ও কামরা বাড়িয়ে সমস্ত শ্রেণির যাত্রীর যাতায়াত ও মালবহনের স্থায়ী সুরাহা হতে পারে অনেক কম খরচে। দীর্ঘ রাস্তার রেল ক্রসিংগুলিতে ফুটব্রিজ হলে যানজটের সমাধান হয়, গাছও বাঁচে বলে জানান আন্দোলনকারীরা। স্মারকলিপিতে সতর্ক করে বলা হয়, দেড়শো-দু’শো বছরের পুরনো গাছগুলি কেটে ফেললে মহা বিপর্যয় নেমে আসবে ঘনবসতিপূর্ণ এই এলাকায়।

তারপর থেকে যশোর রোডে রেলসেতু তৈরি বা যশোর রোড সম্প্রসারণের আলোচনা এত দিন কার্যত ধামাচাপা পড়ে গিয়েছিল। শান্তনু আবার তা নতুন করে ফিরিয়ে আনলেন। তাঁর কথায়, ‘‘আদালতের নির্দেশে রেলসেতু তৈরির জন্য গাছ কাটায় বাধা নেই। ফলে আমরা আশাবাদী।’’ এ বিষয়ে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "যশোর সম্প্রসারণে কেন্দ্রের সদিচ্ছা নেই। থাকলে রাজ্যকে জানাক। রাজ্য সরকার সহযোগিতা করবে।"

অন্য বিষয়গুলি:

Santanu Thakur Bangaon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy