Advertisement
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪
shaman

সাপে কাটা রোগীকে ঝাড়ফুঁক, মৃত্যু বধূর

দুপুর দেড়টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে ঝাড়ফুঁক। ততক্ষণে আরও কাহিল হয়ে পড়েছেন রেহেনা। অবস্থা বেগতিক বুঝে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ওঝা। 

রেহেনা বিবি।

রেহেনা বিবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ক্যানিং শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০৫:০৯
Share: Save:

সাপের কামড়ে মৃত্যু হল এক বধূর। মৃতের নাম রেহেনা বিবি (২৭)। সাপের কামড়ের পরে ওঝা-গুনিনের কাছে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ ঝাড়ফুঁক করা হয় তাঁকে। কোনও কাজ হচ্ছে না দেখে অনেক পরে তাঁকে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে আনেন পরিবারের সদস্যেরা। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসাও শুরু হয়। দেওয়া হয় ৩০টি এভিএস। তবে শেষ পর্যন্ত বাঁচানো সম্ভব হয়নি রেহেনাকে। সোমবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকেরা জানান, আরও আগে হাসপাতালে আনা হলে সুস্থ করা হয় তো সম্ভব হত। কিন্তু তা না করে ওঝার কাছে ফেলে রাখা হয়েছিল রোগিণীকে।

সোনারপুর থানার চম্পাহাটি কুস্তিয়া এলাকার বাসিন্দা রেহেনা। স্বামী ও তিন সন্তান নিয়ে সংসার। স্বামী আইজুল লস্কর দিনমজুর। রবিবার কাজের জন্য তিনি বাড়িতে ছিলেন না। দুপুরে ঘাটে গেলে সাপে ছোবল মারে রেহেনাকে। ঘরে ফিরে পরিবারের লোকজনকে সে কথা বলেন তিনি। স্থানীয় এক ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়া হয় রেহেনাকে।

দুপুর দেড়টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে ঝাড়ফুঁক। ততক্ষণে আরও কাহিল হয়ে পড়েছেন রেহেনা। অবস্থা বেগতিক বুঝে তাঁকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় ওঝা।

ততক্ষণে রেহেনার স্বামী বাড়িতে ফিরে এসেছেন। স্ত্রীর অবস্থা দেখে তড়িঘড়ি প্রতিবেশী কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ক্যানিং হাসপাতালে যান।

রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ যখন ক্যানিং হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় রেহেনাকে, তখন চোখ-মুখ ফুলে গিয়েছে। হাসপাতালের সিসিইউতে রেখে শুরু হয় চিকিৎসা। প্রায় ২০ ঘণ্টা টানাপড়েনের পর মারা যান ওই বধূ।

চিকিৎসকদের দাবি, চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়েছিল তাঁকে। ক্যানিং হাসপাতালের সাপেকাটা রোগীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সমরেন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘‘সাপের কামড়ের প্রায় এগারো ঘণ্টা পরে হাসপাতালে আনা হয়েছিল রোগীকে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। চিকিৎসকেরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছিলেন। ক্যানিং হাসপাতালে ডায়ালিসিস সেন্টার না থাকায় বারুইপুরে স্থানান্তরিত করার কথাও ভাবা হয়েছিল। কিন্তু তার আগেই মৃত্যু হয়।”

সাপ নিয়ে কাজ করা ক্যানিংয়ের যুক্তিবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থার সদস্য নারায়ণ রাহা বলেন, ‘‘সাপে কামড়ালে ওঝা-গুনিনের কাছে না গিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসার জন্য আমরা দীর্ঘ দিন ধরে প্রচার চালাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। কিন্তু এখনও কিছু মানুষ কুসংস্কার থেকে বেরোতে পারছেন না।’’

আইজুল বলেন, “ওঝার কাছে না নিয়ে গিয়ে স্ত্রীকে আগে হাসপাতালে নিয়ে এলে এই ক্ষতি হত না।”

অন্য বিষয়গুলি:

shaman Snake bite Canning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy