Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Panchayat Election 2023

রাত ২টোয় বাড়িতে শেষ ফোন, তার পরেই নিখোঁজ ক্যানিংয়ের ভোটকর্মী, কমিশনের দ্বারস্থ পরিবার

ভোটপর্ব মেটার পর ব্যালট বাক্স জায়গা মতো জমা করে ফোন করেছিলেন বাড়িতে। সেটাই ছিল শেষ ফোন। তার পর থেকেই নিখোঁজ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের ভোটকর্মী।

সঞ্জয় সর্দার।

সঞ্জয় সর্দার। নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
জীবনতলা  শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২৩ ১৯:৫৩
Share: Save:

ভোটপর্ব মেটার পর ব্যালট বাক্স জায়গা মতো জমা করে ফোন করেছিলেন বাড়িতে। সেটাই ছিল শেষ ফোন। তার পর থেকেই নিখোঁজ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের ভোটকর্মী। রবিবার সকাল থেকে খোঁজাখুঁজির পরেও হদিস না মেলায় অবশেষে কাশীপুর এবং জীবনতলা থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করল ভোটকর্মীর পরিবার। রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর, ভোটকর্মীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি তাদের কানেও পৌঁছেছে।

কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, নিখোঁজ হওয়া ভোটকর্মীর নাম সঞ্জয় সর্দার। তাঁর বাড়ি ক্যানিংয়ের জীবনতলা থানা এলাকায় দক্ষিণ বাগমারিতে। সঞ্জয়ের পরিবার সূত্রে খবর, সঞ্জয় পেশায় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী এবং দু’মাসের সন্তান রয়েছে। সঞ্জয়ের ভোটের ডিউটি পড়েছিল পোলেঘাট ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ১০৭ নম্বর বুথে। শনিবার রাত ২টো নাগাদ বাড়ির লোকেদের সঙ্গে শেষবার তাঁর কথা হয়েছিল। তার পর থেকে তাঁর আর হদিস মিলছে না। পরিবার জানিয়েছে, জীবনতলা থানা এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় প্রথমে তাঁরা সেই থানাতেই নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কিন্তু সঞ্জয়ের ভোটের ডিউটি যে হেতু কাশীপুর থানা এলাকায় পড়েছিল, সেই কারণে পরে সেখানেই যান পরিবারের সদস্যেরা।

কাশীপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করার পর সঞ্জয়ের ভাইপো দীপঙ্কর সর্দার বলেন, ‘‘গতকাল রাত ২টোর সময় শেষবার কথা হয়েছিল। ফোনে চার্জ ছিল না বলে অন্য এক জনের মোবাইল দিয়ে ফোন করেছিলেন কাকা। ফোনে জানিয়েছিলেন, কাঁঠালিয়া হাই স্কুলে ব্যালট বাক্স জমা দিয়ে সবে ফিরেছেন। ফিরেই বাড়িতে ফোন করেছেন। এ-ও জানিয়েছিলেন, ফোন রেখেই উনি বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেবেন। পরে শুনেছি, বাড়ি ফেরার জন্য সেখানে বেরিয়েও পড়েছিলেন। কিন্তু তার পর থেকে কাকার আর কোনও খোঁজ নেই।’’ এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়, ভেবে পাচ্ছে না সঞ্জয়ের পরিবার।

প্রসঙ্গত, গত ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও ইটাহারে সোনারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়। তার পরের দিন রায়গঞ্জের সুদর্শনপুরের বাসিন্দা রাজকুমারের ছিন্নভিন্ন দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ তুলে সিবিআই তদন্ত, দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার ও ভোটকর্মীদের নিরাপত্তার দাবিতে এর পর ‘রাজকুমার রায় হত্যার বিচার চাই’ মঞ্চ গড়ে তুলে আন্দোলনে নেমেছিলেন শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা। সেই ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর রাজকুমারের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন।

শনিবার ভোটের সারা দিন বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু বুথেই ভোটকর্মীদের অসহায় ছবি ধরা পড়েছে। কোথাও মহিলা ভোটকর্মী মুখে হাত ঢেকে কেঁদে চলেছেন। কেউ বলছেন, ‘‘ভালয় ভালয় বাড়ি ফিরতে চাই।’’ ভোটকর্মীদের সুরক্ষার জন্য সরকারি কর্মীদের দুটি সংগঠনের তরফে হেল্পলাইন ও হেল্পডেস্কের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। দু’টি সংগঠনেরই অভিযোগ, শাসকদল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভোটকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছেন। কোথাও ভোটকর্মীদের ভয়ে কাঁদতে দেখা গিয়েছে, কোথাও ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের শৌচালয়ে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচিয়েছেন তাঁরা। কেউ আবার ভোটকেন্দ্রের বাইরে বোমা পড়ার পর সাহায্য চেয়ে ফোন করেছেন প্রশাসন কিংবা পরিচিতদের কাছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে বুথের মধ্যেই আক্রান্ত হন এক পোলিং অফিসার। তৃণমূল এবং নির্দল প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে জখম হন জয়নগরের রাজাপুর করাবেগ গ্রাম পঞ্চায়েতের পোলিং অফিসার অমর্ত্য সেন। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বীরভূমের ময়ূরেশ্বরের গোপীনাথপুরে বিজেপি, তৃণমূল এবং নির্দলের সংঘর্ষ। আতঙ্কে বুথ ছেড়ে পালিয়েছেন বুথকর্মীরা। বুথ ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে। প্রাণ বাঁচতে পালিয়েছিলেন প্রিসাইডিং অফিসারও। এ বার ভোটকর্মীর নিখোঁজ হওয়ারও খবর মিলল।

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Panchayat Election 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE