Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
24 Parganas

মুড়িগঙ্গায় বাড়ছে চরা, অস্তিত্বের সঙ্কটে সাগরদ্বীপ

সাগরদ্বীপকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে মুড়িগঙ্গা নদী। কাকদ্বীপের লট নম্বর ৮ থেকে এই নদী পেরিয়েই যেতে হয় সাগরদ্বীপে।

মুড়িগঙ্গায় বাড়ছে চরা। নিজস্ব চিত্র।

মুড়িগঙ্গায় বাড়ছে চরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগর শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ২১:৫০
Share: Save:

সারা দেশের হিন্দু ধর্মালম্বী মানুষের কাছে এই দ্বীপ ‘কপিলমুনির ধাম’। আয়লা, বুলবুল, ফণী, আমপানের মতো ঘূর্ণিঝড় এসে কার্যত লন্ডভন্ড করে দিয়েছে এই দ্বীপ। তবে সব ক্ষত সারিয়ে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সেই সাগরদ্বীপের দীর্ঘদিনের সঙ্কট নাব্যতা। প্রতিনিয়ত মুড়িগঙ্গায় চর পড়ে অস্তিত্বের সঙ্কটে ভুগছে সুন্দরবনের শেষ প্রান্তের এই দ্বীপ ভূখণ্ড। যদিও সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা।

সাগরদ্বীপকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে মুড়িগঙ্গা নদী। কাকদ্বীপের লট নম্বর ৮ থেকে এই নদী পেরিয়েই যেতে হয় সাগরদ্বীপে। কিন্তু সেই নদী পথই বাধ সেধেছে যোগাযোগে। দিন দিন বাড়ছে পলি জমার পরিমাণ। নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভেসেল চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে মুড়িগঙ্গা। প্রায় ৩ কিলোমিটার চওড়া এই নদীর মাঝে পলি জমে বহু চর তৈরি হয়েছে। ভাটার সময় সেই চরগুলি স্পষ্ট দেখা যায়। প্রায়শই ভাটার সময় ভেসেল ঘাটে ভিড়তে পারে না। জোয়ারের অপেক্ষায় যাত্রী-সহ চরেই আটকে থাকতে হয় ভেসেলকে।

সাগরদ্বীপ থেকে ধান পান-সহ মরসুমের সবজি আসে কাকদ্বীপ বাজারে। রুজি-রুটির টানে কাকদ্বীপে আসেন এলাকার মানুষ। যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহণের জন্য ভেসেল এবং বার্জই একমাত্র ভরসা। মুমূর্ষু রোগীদেরকেও নদী পেরিয়ে আনতে হয় শহরে। স্থানীয়দের দাবি, গত কুড়ি বছর ধরে এই সমস্যায় নাজেহাল হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষ থেকে তীর্থযাত্রীদের। যার জেরে প্রত্যক্ষ ভাবে প্রভাব পড়ছে দ্বীপের অর্থনীতিতে।

নাব্যতা কমে যাওয়ায় ভেসেল চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে মুড়িগঙ্গা। নিজস্ব চিত্র

দিন যত এগিয়েছে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর ব্রিজ তৈরির দাবি জোরালো হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। সাগরের এক যুবক সুদীপ মাইতি বলেন, ‘‘ব্রিজ না হওয়ায় আমরা নিত্যদিন ভোগান্তির মুখে পড়ছি। ক্ষমতায় আসার আগে প্রত্যেক রাজনৈতিক দল ব্রিজ তৈরির আশ্বাস দিলেও কোনও কাজ হয় না। ব্রিজ তৈরির দাবিতে গণস্বাক্ষর-সহ আবেদনপত্র রাজ্য ও কেন্দ্রের একাধিক দফতরে জমা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও সুরাহা মেলেনি।’’

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২০০৮ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে রাজ্যের বাম সরকারের তরফে ৩ কোটি টাকা খরচ করে কাকদ্বীপের লট নম্বর ৮ থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত ব্রিজের রিপোর্ট যোজনা কমিশনে জমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন জাহাজ মন্ত্রক থেকে জানানো হয় তাদের দফতরের মাধ্যমেই ব্রিজ তৈরি হবে। সেই প্রশাসনিক দড়ি টানাটানিতে আজও অধরা সাগরদ্বীপের ব্রিজের স্বপ্ন।

তবে মুড়িগঙ্গার উপর ব্রিজ তৈরি হলে অশনি সঙ্কেত বলেই মনে করছেন রাজ্যের সমুদ্র বিজ্ঞানীদের একাংশ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞানের ডিরেক্টর অধ্যাপক তুহিন ঘোষ বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে হুগলি নদী মজে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তাই হুগলির বিকল্প প্রধান শাখা হতে পারত মুড়িগঙ্গা। কিন্তু গতিপথ ক্রমশ পরিবর্তিত হওয়ার পাশাপাশি কমেছে মুড়িগঙ্গার গতি। একাধিক কারণে নদীর পলি সমুদ্রে যেতে পারছে না। এ দিকে নদীর উপর ৫টি বিদ্যুতের টাওয়ার বসানো হয়েছে। সেই টাওয়ারগুলির গোড়ায় পলি জমতে শুরু করেছে। তার উপর যদি নদীতে ব্রিজ তৈরি হলে মুড়িগঙ্গা মজে যেতে বেশি সময় লাগবে না। নদী মজে যেতে থাকলে বন্যাও দেখা দেবে। যেমন বর্তমানে মাতলা নদীর অবস্থা।’’

গঙ্গাসাগর মেলার আগে প্রশাসনের তরফে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মুড়িগঙ্গায় ড্রেজিং করে পলি সরিয়ে ভেসেল চলাচলের উপযুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী কোনও সমাধান হয়নি। নিউ নর্মালে কড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনেই মেলা করতে চাইছে প্রশাসন। নতুন করে ড্রেজিংও শুরু করা হয়েছে। এ বিষয়ে সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরা বলেন, ‘‘নদীতে ড্রেজিং চলে প্রতি বছর। ফলে বছরের কয়েকটা সময় ছাড়া ভেসেল চলাচলে খুব সমস্যা হয় না। তবে অন্য বিষয়গুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে জেলা প্রশাসন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

24 Parganas Sagar Island Kakdwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy