বেহাল: ভারী ট্রাকের যাতায়াত।
বনগাঁ ব্লকের গোপালনগর কালীবাড়ি মোড় থেকে সহিশপুর পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার পিচের সরু রাস্তায় চলছে দশ চাকার ট্রাক। মাল বোঝাই ট্রাকগুলি কল্যাণপুর সড়ক নামে ওই রাস্তায় ঢোকায় সমস্যায় পড়েছেন গ্রামবাসী।
বাসিন্দারা জানালেন, বড় ট্রাক রাস্তা দিয়ে বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করে। যে কোনও সময়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ভারী যানবাহন চলাচল করার ফলে রাস্তা ভেঙে গিয়ে যাতায়াতের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। ইট-পাথর উঠে গিয়ে গর্ত তৈরি হয়েছে।
ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য গ্রামীণ রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে খবর আসছিল মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও। মঙ্গলবার জেলাশাসক জেলা পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠক করেন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ। ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, পূর্ত ও পরিবহণ দফতরের সচিব, রাজ্য পুলিশের এডিজি (ট্র্যাফিক)। বিভিন্ন জেলার পূর্ত কর্তারাও ছিলেন। তা নিয়েই বৈঠক হয়। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইট, পাথর, বালি বোঝাই ট্রাকের উপরে প্রাথমিক ভাবে নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনকে।
তবে গ্রামের রাস্তা দিয়ে ট্রাক যাতায়াত কোনও নতুন নয়। বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, গোপালনগর সর্বত্রই মালবোঝাই ট্রাক যাতায়াত করতে দেখা যায়। বাগদা ব্লকের সিন্দ্রাণী বাজার থেকে খয়রামারি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পিচের রাস্তা। ওই পথ দিয়ে মাঝেমধ্যেই বিপজ্জনক ভাবে দশ চাকার ট্রাক যাতায়াত করে। স্থানীয় বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক গৌর রায় বলেন, ‘‘বড় ট্রাক যাতায়াত করার জন্য রাস্তার ক্ষতি হচ্ছে। রাস্তার মাঝে ইট-পাথর উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে।’’
এলাকার মানুষ জানান, মূলত ঘর-বাড়ি তৈরির কাজে মানুষ ট্রাকে ইট, পাথর, বালি বোঝাই করে গ্রামে নিয়ে আসেন। দ্রুত যাতায়াতের জন্যেও চালকেরা গ্রামের রাস্তা ব্যবহার করেন।
বছর দু’য়েক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রশাসনিক সভায় গিয়ে দশ চাকার বড় ট্রাক গ্রামের রাস্তায় চলাচল করা বন্ধের কথা ঘোষণা করেছিলেন। পুলিশ-প্রশাসনকেও পদক্ষেপের নির্দেশ দেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, গ্রামের রাস্তা বড় গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত নয়। ওই রাস্তায় বড় ট্রাক চললে রাস্তার ক্ষতি হয়। রাস্তা ভেঙে যায়। বারবার রাজ্য সরকারকে সেই রাস্তা মেরামত করতে হচ্ছে। ফলে রাজ্যের খরচ বাড়ছে।
তারপরেও অবশ্য গ্রামের রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়নি। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেল, বহু ট্রাকই নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে যাতায়াত করে। নজরদারি এড়াতে তারা মূল সড়ক ছেড়ে গ্রামের রাস্তায় ঢুকে পড়ে। পরিবহণ খরচ কমাতে মানুষও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বাড়ির কাছাকাছি ট্রাকে করে মালপত্র নিয়ে আসেন। চাষিদের কাছ থেকে আনাজ কিনে নিতে কারবারিরা গ্রামে খেত পর্যন্ত ট্রাক নিয়ে চলে যাচ্ছে।
বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সৌমেন দত্ত বলেন, ‘‘ইতিমধ্যেই আমরা গোপালনগর ২ পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকটি রাস্তায় ট্রাক, ভারী যানবাহন চলা বন্ধ করেছি। সরকারি নির্দেশ পেলে বনগাঁর ১৬টি পঞ্চায়েত এলাকাতেই বন্ধ করা হবে।’’ জেলা পরিবহণ দফতরের সরকারি সদস্য গোপাল শেঠ বলেন, ‘‘জেলার গ্রামীণ রাস্তা মালবোঝাই ট্রাকের জন্য খারাপ হচ্ছে। দুর্ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। পুলিশ ও পরিবহণ দফতর যৌথ ভাবে দ্রুত পদক্ষেপ করবে।’’
বনগাঁর পুলিশ সুপার তরুণ হালদার বলেন, ‘‘কোন কোন গ্রামীণ রাস্তায় ওভারলোডিং ট্রাক, ভারী যানবাহন চলছে— তা সমীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy