ভেঙে পড়েছে গাছ। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
উপকূলবর্তী এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল রবিবার সকাল থেকে। রাতে ‘ল্যান্ডফল’-এর সময়ে ঝড়ের দাপট বাড়ে। দুই ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী ব্লকগুলিতে প্রচুর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুই জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর গাছ ভেঙেছে, ক্ষতি হয়েছে চাষের।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গোসাবা ব্লকে পাঁচশোর বেশি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত তিন হাজারের বেশি বাড়ি। বাসন্তী ব্লকে প্রায় চারশো বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত চার হাজারের বেশি বাড়ি। ক্যানিং ১ ব্লকে প্রায় ৭০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং তিনশোর বেশি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভাঙড় ২ ব্লক এলাকায় শতাধিক কাঁচা বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়। ভাঙড় ১ ব্লক এলাকায় প্রায় ১৬০টি কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
গোটা জেলায় মোট কত বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, সেই হিসেব অবশ্য জেলা প্রশাসনের তরফে এখনও মেলেনি। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “জেলার আটটি ব্লকে ঝড়ের দাপটে বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব ব্লক থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সম্পূর্ণ রিপোর্ট হাতে এলে তবেই এ বিষয়ে বলা সম্ভব হবে।”
উত্তরে হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকে প্রায় পাঁচশো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রের খবর। দুই জেলার অন্যান্য ব্লকগুলিতেও বহু বাড়ির ক্ষতি হয়েছে।
বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি কয়েক হাজার গাছ ভেঙেছে ঝড়ের দাপটে। দুই জেলার উপকূলের প্রায় প্রতিটি ব্লকেই বড় বড় গাছ উপড়ে পড়েছে। গাছ পড়ার জেরে সোমবার সকালে যান চলাচলেও সমস্যা হয়েছে অনেক জায়গায়। প্রশাসনের তরফে গাছ কেটে রাস্তা সাফ করা হয়। বাসন্তী হাইওয়ের বিভিন্ন জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় রবিবার রাতে। ভাঙড় ট্রাফিক গার্ডের বিশেষ দল গাছ কেটে রাস্তা সাফ করে। দত্তপুকুরের পালপাড়া এলাকায় যশোর রোডে ভেঙে পড়ে একটি বড় গাছ। ঘণ্টা তিনেক বন্ধ ছিল যশোর রোডে যান চলাচল। গাছ পড়ে একটি বাড়ির একাংশও ভেঙেছে।
বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছে বহু জায়গায়। বিদ্যুতের খুঁটিও উপড়ে পড়েছে। বহু এলাকায় সোমবার রাত পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ ফেরেনি। দ্রুত বিদ্যুৎ ফেরানোর চেষ্টা চলছে বলে বিদ্যুৎ বণ্টন দফতরের তরফেজানানো হয়েছে।
বেশি কিছু জায়গায় নদী বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সন্দেশখালির মণিপুর পঞ্চায়েতের তালতলায় রবিবার রাতে বাঁধের বেহাল অবস্থা হয়েছে। সোমবার সকালে সেচ দফতরের উদ্যোগে বাঁধ মেরামতি শুরু হয়। রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এ দিন সকালে ন্যাজাট থানার হাটগাছি পঞ্চায়েত এলাকার নদীবাঁধ ঘুরে দেখেন। সঙ্গে ছিলেন সন্দেশখালির বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। অন্য দিকে, বিজেপির বসিরহাট লোকসভার বিজেপি প্রার্থী রেখা পাত্র আসেন হিঙ্গলগঞ্জের স্বরূপকাটিতে। রেখা বলেন, “দুলদুলি যাব ভেবেছিলাম। কিন্তু ভেসেল বন্ধ, তাই যাওয়া হল না। মানুষের কোনও সমস্যা হলে ফোনে জানাতে বলেছি, সাহায্য করব।” এ দিন বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী নুরুল ইসলাম সন্দেশখালির রেমাল কবলিত এলাকায় যান। রেমাল কবলিত এলাকায় যান সিপিএমের প্রার্থী নিরাপদ সর্দারও।
চাষেও ক্ষতি হয়েছে। ধান মাঠে না থাকলেও গ্রীষ্মকালীন আনাজ যেমন বরবটি, পটল, ঢ্যাঁড়শ, বেগুন চাষে ক্ষতি হয়েছে। কাঁকরোল, ঝিঙের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া, তিল, ফুল, কলা পেঁপে চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাট গাছের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া, নীচু এলাকায় খেতে কোথাও কোথাও জল জমেছে। এর ফলে বেগুন, লঙ্কা চাষেও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ঝড়ে গাছের আম প্রচুর পড়ে গিয়েছে। তবে কত হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার তালিকাও জেলা প্রশাসন তৈরি করে উঠতে পারেনি। ব্লক কৃষি আধিকারিকদের দ্রুত তালিকা করে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর।
দুর্যোগের কারণে রাত থেকেই বহু মানুষকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হয়। বিশেষত, নদীবাঁধ লাগোয়া এলাকায় বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে আনা হয়। ডায়মন্ড হারবার মহকুমার ৯টি ব্লকের প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় স্কুলে, ফ্লাড শেল্টারে শিবির খোলা হয়েছে। ডায়মন্ড হারবার মহকুমাশাসক অঞ্জন ঘোষ বলেন, “প্রতিটি ব্লকে প্রায় দেড় থেকে দু’হাজার ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের খাওয়া থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।” ক্যানিং ২ ব্লক এলাকায় ১১৭টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়। রাতের মধ্যেই প্রায় সাত হাজার মানুষকে সেখানে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। স্থানীয় বিধায়ক সওকাত মোল্লা বলেন, “আমার বিধানসভা এলাকায় ৪০০-৫০০ মাটির বাড়ি ভেঙে পড়েছে। অনেকেই আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। ৭০০০ মানুষকে নিরাপদে ত্রাণ শিবিরের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রিপল ও খাবার-দাবার দেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy