বাজার সেরে ডিঙিতে করে বাড়ি ফিরছেন বনগাঁর বনদেবীতলার এক বাসিন্দা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।
প্রতি বছর দুর্গা পুজোয় বন্ধুদের সঙ্গে অঞ্জলি দেয় সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী পল্লবী সরকার। পুজোর ক’টা দিন কাটে হই-হুল্লোড়ে। কিন্তু এ বারের পুজোয় সে সব কিছুই হবে না। বৃষ্টিতে তাদের বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। আগামী কয়েক দিনেও সেই জল নামার সম্ভাবনা নেই। বাধ্য হয়ে পরিবারের সকলের আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে।
গাইঘাটার পাঁচপোতা ভাড়াডাঙা হাই স্কুলের ত্রাণ শিবিরে উঠেছেন পল্লবীদের মতো আরও অনেক পরিবার। পুজোর কথা উঠতে ভেজা চোখে পল্লবী বলে, ‘‘ঘরে জল ঢুকেছে। চারপাশ জলমগ্ন। নতুন পোশাক হয়নি। আমাদের বাড়ির কাছে ছোট করে পুজো হচ্ছে। কিন্তু আমি যেতে পারব না এ বার। খুব মন খারাপ লাগছে।’’
কয়েক দিনের ব্যবধানে দু’দফায় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে বনগাঁ মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকা বিশেষ করে গাইঘাটা ব্লক এবং বনগাঁ পুরসভা এলাকায় বাড়িঘর, খেতখামার জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। বহু মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। জল নামছে খুবই ধীরে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছে জলবন্দি পরিবারগুলি। অনেকে কাজকর্ম হারিয়ে দু’বেলা খাওয়ার জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন। পুজোর আনন্দ ফিকে হয়ে গিয়েছে তাঁদের কাছে।
গাইঘাটা ব্লকের বাসিন্দা বৃদ্ধ অশোক মল্লিক পরিবার নিয়ে ত্রাণ শিবিরে উঠেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘জলের তলায় বাড়িঘর। মাস খানেক ধরে ত্রাণ শিবিরে রয়েছি। হাতে কাজ নেই, পুজোয় পরিবারের লোকদের নতুন জামাকাপড় দিতে পারব না। জল কবে নামবে, সেই দিকেই তাকিয়ে রয়েছি।’’
ওই ত্রাণ শিবিরে থাকা সন্ধ্যা সাঁতরা বলেন, ‘‘কবে থেকে ত্রাণ শিবিরে রয়েছি। কাজে যেতে পারছি না। পুজো এসে গিয়েছে। বাচ্চারা কান্নাকাটি করছে। কিন্তু নতুন পোশাক কিনে পারলাম না। আমারও নতুন পোশাক হয়নি। তাই এ বার অঞ্জলি দিতে যাব না।’’
বনগাঁ শহরের ঢাকাপাড়া এলাকা এখনও জলের তলায়। রাস্তায় হাঁটুজল। মানুষ নৌকো করে যাতায়াত করছেন। বেশ কিছু পরিবার ত্রাণ শিবিরে উঠেছে। অনেকের ঘরে জল ঢুকলেও তাঁরা বাড়িতেই রয়েছেন।
ঢাকাপাড়ার বনদেবীতলার বাসিন্দা তপন করের বাড়ি জলমগ্ন। সেখানেই দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে আছেন তিনি। বাজার হাট বা অন্যান্য কাজে বাইরে বেরতে হলে জল পেরোতে হচ্ছে। তিনি জানান, একটি ডিঙির ব্যবস্থা করেছেন। তাতে করেই যাতায়াত চলছে। তপন গ্রিলের কাজ করেন। গত কয়েক দিন কাজে যেতে পারেননি। ছেলেদের স্কুলে ত্রাণ শিবির হওয়ায় তা বন্ধ। তপনের কথায়, ‘‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের তো আর নতুন জামাকাপড় হবে না। চেষ্টা করব বাচ্চাদের কিছু কিনে দিতে। তবে জল পেরিয়ে প্রতিমা দেখতে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। আমাদের কাছে পুজো মানে জলযন্ত্রণা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy