Advertisement
১৭ অক্টোবর ২০২৪
Water Logged Gaighata

জল-যন্ত্রণার স্থায়ী সমাধান চাইছেন গাইঘাটা-স্বরূপনগর এলাকার মানুষ

বোলদেঘাটা খাল মিলিত হয়েছে চারঘাট ব্রিজের কাছে যমুনা নদীতে। এই খালে ২০০০ সালের আগে জোয়ার-ভাটা খেলত।

প্রতি বছর এ ভাবেই প্লাবিত হয় গাইঘাটা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা।

প্রতি বছর এ ভাবেই প্লাবিত হয় গাইঘাটা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা। ছবি: নির্মল্য প্রামাণিক 

সীমান্ত মৈত্র  
বনগাঁ শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৫৩
Share: Save:

কয়েক দিনের ব্যবধানে দু’দফায় নিম্নচাপের বৃষ্টিতে গাইঘাটা এবং স্বরূপনগর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা, বাড়িঘর, খেতখামার জলমগ্ন হয়েছে। বিপাকে বহু মানুষ। অনেককে ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে হয়েছে। জল নামছে খুবই ধীরে। কবে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন, বুঝতে উঠতে পারছেন না জলবন্দি মানুষ। কাজকর্ম হারিয়ে দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম অবস্থা অনেকের। এখনও অনেকে ত্রাণ শিবিরে বা জলবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

এই পরিস্থিতি প্রতি বছর কার্যত নিয়মে পরিণত হয়ে গিয়েছে। এ বার জলবন্দি মানুষ দাবি তুলেছেন, সমস্যার স্থায়ী সমাধানের। কী কারণে প্রতি বছর এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে, সে বিষয়ে তাঁরা খতিয়ে দেখে স্থায়ী সমাধানে বেশ কিছু কারণ খুঁজে বের করেছেন। সেই বিষয়গুলি নিয়ে দাবিপত্র তৈরি করে প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছেন।

ভুক্তভোগী মানুষের দাবি, প্রতি বছর বর্ষায় দু’টি ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। তার প্রধান কারণ, ইছামতী, যমুনা নদী এবং বোলদেঘাটা খাল মজে যাওয়া। ইছামতী এবং যমুনার সংযোগস্থল টিপি মৌজায় চড়া পড়ে গিয়েছে। ওই এলাকায় যমুনার নদীর পাড়ের দিকে এক মাটির স্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছে। যা টিপির বাঁধ নামে পরিচিত। এ ছাড়া, নদিয়া জেলার হরিণঘাটা ব্লকে যমুনা নদীর উৎপত্তিস্থল মজে যাওয়ায় হুগলি নদীর জল যমুনায় প্রবেশ করে না। আবার ইছামতীর নোনা জল ও যমুনায় না প্রবেশ করার কারণে পুরো নদী বছরভর কচুরিপানায় পূর্ণ থাকে। নদী মজে যাচ্ছে। ইছামতীর মধ্যভাগ স্বরূপনগর ব্লকের টিপি গ্রামে যমুনার সংযোগস্থলে চড়া পড়ার কারণে ইছামতীর প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। জোয়ার-ভাটা খেলছে না। এর ফলে ইছামতীও মজে যাচ্ছে।

বোলদেঘাটা খাল মিলিত হয়েছে চারঘাট ব্রিজের কাছে যমুনা নদীতে। এই খালে ২০০০ সালের আগে জোয়ার-ভাটা খেলত। কিন্তু মজে যাওয়ার জন্য এই খালে এখন জোয়ার-ভাটার প্রভাব পড়ে না। একটু বৃষ্টি হলে খাল ছাপিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে।

বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হলে ইছামতী এবং যমুনা নদীর সংযোগস্থলে টিপি গ্রামে যমুনা নদী বরাবর যে বাঁধ দেওয়া হয়েছে, সেই বাঁধ ভেঙে যমুনার জল ইছামতীতে ফেলতে হবে। বলদেঘাটা খালের সংস্কার করতে হবে। ইছামতী ও যমুনা নদীর পলি প্রতি বছর তুলে সংস্কার করতে হবে। যমুনা এবং ইছামতী নদীর সঙ্গমস্থল, স্বরূপনগর থানার চারঘাট পঞ্চায়েতের টিপি মৌজার টিপি গ্রামে। এই মিলনস্থলে চড়া পরে মজে গিয়েছে। এখানে যমুনা থেকে ইছামতী পর্যন্ত দু’শো মিটার প্রস্থ এবং ১৫ মিটার গভীর এক কংক্রিটের কৃত্রিম সংযোগ খাল তৈরি করতে হবে। প্রতি বছর এখানেও পলি তোলা দরকার। যমুনা নদীর উৎসস্থল নদিয়া জেলার হরিণঘাটা ব্লকের চর যদুবাটি গ্রামের নদী সংস্কার করে চওড়া করতে হবে বলেও দাবি করা হয়েছে। গাইঘাটা ব্লকের সুটিয়া অঞ্চলের বোলদেঘাটা গ্রামে খালের উপর যে সেতু আছে, সেই সেতুর দু’পাশের রাস্তাকে আড়াই-তিন ফুট উঁচু করতে হবে বলেও মনে করছেন গ্রামের মানুষ। এই কাজগুলি করা হলে সমস্যা থেকে স্থায়ী মুক্তি মিলবে বলে তাঁদের মত।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার জলমগ্নতার পরে সেচ দফতর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সমস্যাগুলি চিহ্নিত করে রিপোর্ট তৈরি করেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ বারের জলমগ্নতার কারণ, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি থেকে অবিরাম বৃষ্টিপাতে গাইঘাটা ও স্বরূপনগর ব্লকে বন্যা পরিস্থিতি। ইছামতী নদীর গভীরে ১০ মিটার প্রস্থের একটি পাইলট চ্যানেল তৈরি করে স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা হিসাবে প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে গাইঘাটা এবং স্বরূপনগর ব্লকের সমস্যার পাকাপাকি সমাধানের জন্য গাইঘাটা ব্লকের কালাঞ্চি সেতু থেকে সংগ্রামপুর সেতু পর্যন্ত ইছামতী নদীর পলির পরিমাণ নির্ণয় করতে হবে। সেই অনুযায়ী ডিপিআর তৈরিতে সমীক্ষা প্রয়োজন।

জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘গাইঘাটা এবং স্বরূপনগর ব্লকের জল জমার স্থায়ী সমাধান করতে তেঁতুলিয়া সেতু থেকে কাবিলপুর পর্যন্ত ইছামতীর পলি তুলে সংস্কার করা হবে। যমুনা নদী এবং বলদেঘাটা খাল সংস্কারের বিষয়েও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Gaighata
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE