ফাইল চিত্র।
পথে বেরোলেই কানে আসবে মাইকের শব্দ। চার দিকে চার রকম অনুষ্ঠানের আওয়াজ, গানে রীতিমতো কাহিল অবস্থা বনগাঁ শহরের মানুষের। ঘরের দরজা-জানলা এঁটেও আওয়াজের হাত থেকে রেহাই মেলে না। কোথাও রাস্তায় বিদ্যুতের খুঁটি, টেলিফোনের খুঁটিতে মাইক বাঁধা। কখনও শহরের পথে টোটো-অটোয় মাইক লাগিয়ে চলে প্রচার। কোনওটা অনুমতি নিয়ে বাজে। কেউ কেউ সে সবের ধার ধারে না। সব মিলিয়ে শব্দের দৌরাত্ম্যে প্রাণ ওষ্ঠাগত শহরবাসীর।
পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তারা নড়েচড়ে বসলে সাময়িক ভাবে কয়েক দিন শব্দের দাপট কমে। পুলিশি নজরদারি কমে গেলে ফের শুরু হয় তাণ্ডব। অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভার নিয়মিত নজরদারি ও সদিচ্ছার অভাবেই মাইকের দাপট চলছে।
পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘চোঙা বাজানোর অনুমতি পুলিশ-প্রশাসন দিয়ে থাকে। আমরা খবর পেলেই পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলি। মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে যাতে উচ্চস্বরে মাইক না বাজানো হয়, তা দেখতে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।’’ কয়েক দিন পরেই শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। এখনও অবশ্য গভীর রাত পর্যন্ত মাইক বাজছে শহরের রাস্তায়।
শব্দের দাপটে স্কুলে ক্লাস নিতে অসুবিধা হয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ছেলেমেয়েদর মনঃসংযোগ নষ্ট হয়। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী এক পড়ুয়ার বাবার কথায়, ‘‘রাতে বাড়ি ফিরলেই ছেলে প্রশ্ন করছে, বাবা মাইকের আওয়াজ কবে বন্ধ হবে। কোনও উত্তর দিতে পারছি না। লেখাপড়া লাটে উঠতে বসেছে।’’
এলাকাবাসী জানান, বনগাঁ শহরের রাস্তাগুলির দিকে চোখ রাখলেই দেখা যায় মাইক বাঁধা। বছরভর এ ভাবেই চলে। শীতের সময়ে তা আরও বাড়ে। যে কোনও অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তারা রাস্তার ধারে মাইক বেঁধে প্রচারে নেমে পড়েন। কোনও কোনও সময়ে অনুষ্ঠানের পনেরো-বিশ দিন আগে থেকে চলে মাইকে প্রচার। বিশ-তিরিশটাও মাইক বাঁধা হয় কোনও কোনও অনুষ্ঠানের জন্য।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ধর্মীয়— যে কোনও অনুষ্ঠানেই মাইক বাঁধা হয়।
শীতের সময়ে গভীর রাত পর্যন্ত দূরদূরান্ত থেকে মাইকের কান ফাটানো শব্দ ভেসে আসে। এখন আবার বাড়ির সামাজিক অনুষ্ঠানেও রাস্তায় মাইক বাধা হচ্ছে। রাতে বনভোজন, জলসায় চলে সাউন্ড বক্সের তাণ্ডব।
শব্দ দূষণের জেরে পথেঘাটে অনেক সময়ে মোবাইলে কথা বলতে সমস্যা হয়। বেশিক্ষণ শব্দের দাপটের মধ্যে থাকলে শারীরিক-মানসিক অস্বস্তি হয় বয়স্ক মানুষ, শিশুদের। যানবাহনের হর্নও পথচারীরা শুনতে পান না।
অতীতে শহরের কিছু মানুষ শব্দ দূষণ প্রতিরোধ মঞ্চ তৈরি করে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে প্রচার কর্মসূচি করেছিলেন। শহরে মিছিল বেরোয়। মানুষকে সচেতন করতে লিফলেট বিলিও করা হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠনের তরফে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও পুরো বন্ধ করা যায়নি শব্দ দূষণ।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, শব্দ দূষণের ফলে শ্রবণশক্তি হারিয়ে যাওয়া, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া-সহ নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও অনুষ্ঠানের জন্য হয় তো প্রশাসনের তরফে ৬টি মাইকের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, তার থেকে অনেক বেশি মাইক বাঁধা হচ্ছে। তা ছাড়া, ৬৫ ডেসিবলের বেশি জোরে মাইক বাজলেও তা মাপার মতো পরিকাঠামো নাকি পুলিশের নেই। সব মিলিয়ে শব্দদূষণ যে শহরবাসীর মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে, তা মানছে পুলিশও। বনগাঁ থানার আইসি মানস চৌধুরী বলেন, ‘‘উচ্চস্বরে মাইক বা সাউন্ড বক্স বাজার আওয়ার পেলে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। শীঘ্রই সাউন্ড ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে, অনুমতি ছাড়া তাঁরা যেন মাইক না বাঁধেন।’’
বনগাঁর মহকুমাশাসক কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে শব্দদূষণ শব্দ করতে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। পরীক্ষার ৭২ ঘণ্টা আগে থেকে মাইক বাজানো বন্ধ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy