Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Bhangar

দামের গুঁতো, শেষ পাতে দই-মিষ্টি বন্ধ করেছেন অনেকেই

বর্তমানে মিষ্টির দাম কয়েকগুণ বাড়ায় সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। খাওয়ার পরে শেষপাতে দই-মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকেই।

মিষ্টি দই।

মিষ্টি দই। প্রতীকী চিত্র।

সামসুল হুদা
ভাঙড়  শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২২ ০৭:৫৫
Share: Save:

‘এসো বন্ধু একসাথে হাঁটি’—এই নাম দিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলেছেন ভাঙড়ের কয়েকজন যুবক। গ্রুপের সদস্যেরা প্রতিদিন একসঙ্গে সকালে হাঁটতে যান। প্রায় ১৬ জনের দলটিতে রয়েছেন পুলিশ, পল্লি চিকিৎসক, ব্যবসায়ী, সমাজসেবী-সহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। দলের এক সদস্য শুভঙ্কর বিশ্বাস প্রতিদিন ভাঙড় বিজয়গঞ্জ বাজারের একটি মিষ্টির দোকান থেকে ঠাকুরের নিত্যভোগের জন্য মিষ্টি কেনেন। ওই দোকানেই দলের সদস্যেরা সকালের খাওয়াদাওয়া সারেন। খেতে খেতেই এলাকার উন্নয়ন, খেলাধুলো-সহ বিভিন্ন বিষয়ে আড্ডা জমে ওঠে। বুধবার সকালে পাতে কচুরি-তরকারির সঙ্গে রসগোল্লা খেতে খেতে গল্পগুজব চলছিল। সেখানে এক সদস্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত একটি খবরের কথা তুলে ধরেন। ‘এঁদো খাল পাড়ে জগিং ট্র্যাক ও ঢালাই রাস্তা করেছে পঞ্চায়েত’— খবরটি দেখে তাঁরাও নিজেদের মধ্যে বলাবলি শুরু করেন, বিজয়গঞ্জ বাজারের খালপাড়েও এমন ট্র্যাক তৈরি করা গেলে দিব্যি হত। গল্পের ফাঁকেই চাহিদা মতো কচুরি-মিষ্টি দিয়ে যাচ্ছিলেন দোকানের মালিক গৌরব বিশ্বাস। আটটা বাজতেই তাড়াহুড়ো শুরু হয়। টিফিনের টাকা সকলে মাসিক চাঁদা হিসেবে জমা করে মেটান। তবে শুভঙ্কর নিত্যভোগের মিষ্টি নগদেই কেনেন। দাম মেটাতে গিয়ে পকেটে টান পড়ায় বলে ওঠেন, ‘‘যে ভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে তাতে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। পুজো করতে গেলে তো ঠাকুরের ভোগ লাগবেই। তাই বাধ্য হয়ে অন্য খরচ কমাতে হচ্ছে।’’

শুধু শুভঙ্কর নন, বর্তমানে মিষ্টির দাম কয়েকগুণ বাড়ায় সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। খাওয়ার পরে শেষপাতে দই-মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন অনেকেই। শুধু শুভঙ্করদের গ্রুপের সদস্যেরাই নন, বিজয়গঞ্জ বাজারের ওই মিষ্টির দোকানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতার ভিড় লেগেই থাকে। ভোরবেলা এসে যাঁরা বাজারে দোকান খোলেন, তাঁরা অনেকেই ওই দোকানে কচুরি, তরকারি, পেটাই পরোটা, শিঙাড়া, মিষ্টি দিয়ে প্রাতরাশ সারেন। দোকান মালিক জানান, বর্তমানে অনেকেই কচুরি-তরকারি খাওয়ার পর মিষ্টি খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা সাদাতুল হক তরফদার প্রতিদিন বাড়িতে ভাত খাওয়ার পর শেষ পাতে দই-মিষ্টি খেতেন। তিনি বলেন, ‘‘আগে রসগোল্লার দাম ছিল ৬ টাকা। এখন তার দাম ১০ টাকা। ১৪০ টাকা কেজি দামের দই এখন ১৮০ টাকা হয়ে গিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে দই-মিষ্টি খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। তা ছাড়া বয়স বাড়ছে, তাই সুগার হওয়ার ভয়ও রয়েছে।’’

স্থানীয় ব্যবসায়ী দেবপ্রসাদ সাহা বলেন, ‘‘ ব্যবসার কাজে অনেকেই বাড়িতে আসেন। আগে তাঁদের চা-মিষ্টি খাওয়াতাম। কিন্তু যে ভাবে মিষ্টির দাম বেড়েছে তাতে চা-বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়ন সারা ছাড়া উপায় নেই।’’

পল্লি চিকিৎসক শেখ জামালউদ্দিন বলেন, ‘‘আগে প্রায়ই সন্ধ্যায় বাড়িতে চা-শিঙাড়া দিয়ে পরিবারের সকলে টিফিন করতাম। চার টাকা দামের শিঙাড়া এখন ৬ টাকা হয়ে গিয়েছে। তাই এখন বাড়িতেই তেলেভাজা বানিয়ে খাওয়া হয়।’’

মিষ্টির দোকানের মালিক গৌরব বিশ্বাস জানান, মিষ্টি তৈরির দুধ, ছানা-সহ সমস্ত উপকরণের দাম কয়েরগুণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কারিগরের মজুরি। তাই দই, মিষ্টি, শিঙাড়ার দামও বাড়াতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আগের মতো আর বিক্রি হচ্ছে না। লকডাউনের পর থেকেই বাজারে মন্দা চলছে। আগে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ থাকত। এখন তা কমে গিয়েছে। ব্যাঙ্কের ঋণ শোধ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Bhangar Bengali Sweets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy