এই সমস্ত মেছোভেড়ি নিয়ে অশান্তি। নিজস্ব চিত্র
কখনও বোমা-গুলির লড়াই বাধছে। কখনও বাড়ি-দোকান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটছে। প্রতি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের লোকজনের মধ্যেই গোলমাল বাধছে বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে গত কয়েক মাসে লাগাতার গোলমালে প্রাণ অতিষ্ঠ হাড়োয়া মানুষের।
মেছোভেড়ির লিজের টাকা নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত বলে মনে করছে দলের একটি অংশ। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত দলের উপরমহল। বিবাদমান দুই গোষ্ঠীকে নিয়ে একাধিক বৈঠকে বসলেও সমাধান সূত্র বেরোয়নি বলে দলীয় সূত্রের খবর। ফলে চিন্তিত পুলিশ-প্রশাসনও।
শনিবারও হাড়োয়া বাজারে দু’পক্ষের মারপিট বাধে। বেশ কিছু বাইক-দোকান ভাঙচুর করা হয়। ভাঙা হয় তৃণমূলের পার্টি অফিসও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাড়োয়ায় বেশ কয়েক হাজার বিঘা মেছোভেড়ি রয়েছে। যার দখল এবং লিজের টাকা নিয়ে বাম আমল থেকেই শুরু হয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দাপাদাপি। গত কয়েক বছর ধরে রাজনৈতিক ক্ষমতা তৃণমূলের হাতে। এখন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ লেগেই আছে।
পুলিশ জানায়, হাড়োয়া এলাকায় প্রায় সাতশো বিঘা খাস জমি রয়েছে। স্থানীয় দরিদ্র মানুষকে ওই জমির পাট্টা দেওয়া হয়। সেই জমিতে মাছ চাষ হয়। অভিযোগ, জমি যার, লিজের টাকা তাঁর কাছে না গিয়ে সরাসরি চলে যায় ভেড়ি মালিকের হাতে। সেই টাকার দখলদারি নিয়েই শুরু হয় রাজনৈতিক সংঘাত। মাঝখান থেকে সামান্য টাকা হাতে গুঁজে দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয় জমির পাট্টা যাঁদের হাতে, সেই
গরিব মানুষকে।
পাট্টা পাওয়া স্বপন মুন্সি, বাদল আড়ৎদার, ভবেশ মুন্ডা, সুকান্ত মণ্ডল, ফজের আলিরা জানান, আগে তাঁরা বিঘা প্রতি বছরে ১১-১২ হাজার টাকা মেছোভেড়ির মালিকদের কাছ থেকে লিজ বাবদ পেতেন। বর্তমানে তাঁদের হাতে সরাসরি সেই টাকা পৌঁছয় না। ভেড়ি মালিকদের ধমকে-চমকে টাকা আদায় করে রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদেরই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সারা বছরই কারণে-অকারণে মারপিট বাধে। আর জমির পাট্টা প্রাপকদের হাতে সামান্য টাকা ধরিয়ে চুপ করে থাকতে বলা হয়।
ছিদাম মুন্ডা, পরিতোষ মণ্ডল, কাছেদ আলি, কমল পাত্রের কথায়, ‘‘আগে বিঘা প্রতি বছরে ১১-১২ হাজার টাকা পেতাম। এখন তৃণমূলের তাণ্ডবের কারণে তা কমে চার-পাঁচশো টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে। অনেক পাট্টা মালিক তো কিছুই পান না।’’
এই ভাবে বছরে লিজ বাবদ কোটি কোটি টাকা তৃণমূলের কিছু লোক হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘যার হাতে এই টাকা থাকবে, তারই এলাকায় ক্ষমতা বেশি।’’ এই টাকার বখরা পার্টির উপর মহলেও পৌঁছয় বলে অভিযোগ গ্রামের লোকের। তাঁদের দাবি, সে জন্যই দলের নেতারা মুখ বুজে থাকেন। গোলমাল বাড়িবাড়ি হলে দু’একটা মিটিং হয়। সামান্য কিছু ধরপাকড়ও হয় তো হয়। কিন্তু হাড়োয়ায় বন্দুকের রাজনীতিতে কখনওই পাকাপাকি রাশ টানা হয় না। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একটা অংশও এই বেআইনি কারবার থেকে লাভবান হন বলে মনে করেন গ্রামের মানুষ। মাঝখান থেকে বোমা-বন্দুকের দাপাদাপিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় সাধারণ খেটে খাওয়া গ্রামের গরিব মানুষের। অনেকে ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র থাকেন বলে জানালেন গ্রামবাসীদের কেউ কেউ।
হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেতা আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, ‘‘হাড়োয়া ২ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল এবং তাঁর লোকজনেরা প্রায় সাতশো বিঘা জমির লিজের টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করছেন। গরিব মানুষকে তাঁদের প্রাপ্য লিজের টাকা না দিয়ে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করেছেন। প্রতিবাদ করতে গেলে দলেরই কর্মীদের মারধর করা হচ্ছে। বোমাবাজি করে গুলি ছুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে।’’
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অবশ্য মিথ্যা বলে দাবি করে মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক উষারানি মণ্ডলের স্বামী মৃত্যুঞ্জয় বলেন, ‘‘আব্দুল খালেক মোল্লা এলাকার কিছু দুষ্কৃতীকে একত্রিত করে গরিব মানুষের লিজের টাকা আত্মসাৎ করছেন। গুলি-বোমা ওঁরাই মজুত করছেন। ওঁদের জন্যই হাড়োয়ায় মাঝে মধ্যেই গুলি-বোমা ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদে একত্রিত হয়েছেন।’’ দু’পক্ষেরই বক্তব্য, দলের ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বকে সব জানানো হয়েছে।
তৃণমূলের জেলা কোর্ডিনেটর নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘হাড়োয়ায় গোলমালের পিছনে শুধু রাজনীতি নয়, ভেড়ির অর্থনীতিও জড়িয়ে আছে। এ বিষয়ে তৃণমূলের কেউ জড়িত থাকলে বরদাস্ত করা হবে না।’’ পুলিশ-প্রশাসনের বক্তব্য কী? বসিরহাট পুলিশ জেলা সুপার শঙ্করপ্রসাদ মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের কাছে কোনও পক্ষের কোনও লিখিত অভিযোগ হয়নি। তবে কেউ হাঙ্গামা বাধানোর চেষ্টা করলে তাকে ছাড়া হবে না।’’ হাড়োয়া বাজারে শনিবারের ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy