চলছে সমুদ্রতট বাঁধানোর কাজ। ছবি: সমরেশ মণ্ডল।
সামনেই গঙ্গাসাগর মেলা। শুরু হয়ে গিয়েছে প্রস্তুতি। গত বছরের তুলনায় এ বার পুণ্যার্থীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এর মধ্যেই সেচ দফতরের সমুদ্রতট বাঁধানোর প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, জেলা প্রশাসনের একাংশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে মনে করছেন, স্থায়ী ভাবে ভাঙনপ্রবণ তট বাঁধানো না হলে সমস্যার সমাধান হবে না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে সমুদ্রতট একাধিক বার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বারও বিভিন্ন সময়ের কটালে সমুদ্রতটের ১ নম্বর স্নানঘাট থেকে ৪ নম্বর স্নানঘাট সমুদ্রে তলিয়ে যায় কংক্রিটের রাস্তা-সহ। মেলার আগে পুণ্যার্থীদের স্নানের উপযোগী ঘাট তৈরি করা প্রশাসনের কাছে মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবারই মেলার প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে আসেন সেচ দফতরের সচিব মণীশ জৈন। সঙ্গে ছিলেন কাকদ্বীপের মহকুমাশাসক মধুসূদন মণ্ডল, সাগরের বিডিও কানাইয়া কুমার রায়-সহ সেচ দফতরের আধিকারিকেরা। সমুদ্রতট পরিদর্শনে গিয়ে সেচ দফতরের সচিব দেখেন, সমুদ্রতটের যেখানে-সেখানে ভাঙা ছোট-বড় কংক্রিটের টুকরো পড়ে রয়েছে। পড়ে গিয়ে পুণ্যার্থীদের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে তিনি দফতরের আধিকারিকদের নির্দেশ দেন, দ্রুত সে সব সরিয়ে নিতে। যদিও এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বালির ভিতর থেকে কংক্রিটের এত ভাঙা অংশ সরানো সম্ভব নয়। বরং, বালি কেটে বালির ভিতরে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।’’
মণীশ জৈনের উপস্থিতিতে দফতরের এক আধিকারিক জানান, সমুদ্রতটের ১ নম্বর থেকে ৪ নম্বর ঘাট পর্যন্ত মাটির বস্তা ও শালবল্লার সঙ্গে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বাঁধ দেওয়া হবে। মেলা চলাকালীন তা মেরামত করা হবে একদিন অন্তর। যাতে বাঁধ ভেঙে সমুদ্রের জল মেলায় প্রবেশ না করে। মেলা শেষ হলে সমুদ্রতটে গাছ লাগানো হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘সেচ দফতর প্রতি বছর যে ভাবে পরিকল্পনা করে কাজ করছে, তাতে ভাঙনের জেরে কপিলমুনি মন্দির সমুদ্রে তলিয়ে যেতে পারে। স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবছে না। দিঘায় যদি ভাঙন আটকানো যায়, এখানে কেন যাবে না?’’
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজের জন্য মোট ৩২০০ কিউবিক টন মাটি প্রয়োজন। সাগরদ্বীপের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মজে যাওয়া খাল এবং অনাবাদি জমি থেকে মাটি কেটে আনা হবে। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, প্রতি বছর যে ভাবে গঙ্গাসাগরের সমুদ্রতটের ক্ষতি হচ্ছে, তাতে দ্রুত এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান না করা গেলে আগামী দিনে চাষের জমি থেকেই মাটি কেটে এখানে ফেলতে হবে।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯ হাজার ট্রাক্টর মাটি লাগবে ১ থেকে ৩ নম্বর সমুদ্রতটে বাঁধ নির্মাণের জন্য। মাটি ফেলা শেষ হলে তার উপর ছড়ানো হবে বালি।
সেচ দফতরের সচিব এ দিন প্রথমে নামখানা লঞ্চঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। সেখানকার পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে সাগরের বেুবন লঞ্চঘাটে ড্রেজ়িংয়ের কাজ সরেজমিনে দেখেন। সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশও দেন তিনি। তবে, বিশেষ গুরুত্ব দেন গঙ্গাসাগর সমুদ্রতটের উপরে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে কপিলমুনি মন্দিরের কিছু অংশ সংস্কার করা হচ্ছে। মন্দিরে লেগেছে নতুন রঙের ছোঁয়া। মন্দিরের রাস্তার দু’ধারে থাকা খারাপ ত্রিফলা বাতি সারানো হচ্ছে। মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন জায়গায় বসানো হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। মন্দির চত্বরে বসানো হয়েছে ওয়াটার এটিএম। পাশাপাশি, মুড়িগঙ্গা নদীতে ড্রেজ়িং করে পলি তোলার কাজ শুরু করেছে সেচ দফতর। তৈরি থাকছে স্বাস্থ্য দফতরও।
সাগরের বিডিও কানাইয়া কুমার রায় বলেন, ‘‘মেলার প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। ২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে মেলার কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। মকর সংক্রান্তির আগের দিন পূর্ণিমার কটাল নিয়ে চিন্তা রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy