Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Water Hyacinth

ইছামতী থেকে কচুরিপানা তোলা বন্ধ, হতাশ বনগাঁ

প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার নদী পথ থেকে কচুরিপানা তোলা হবে। প্রকল্প হাতে নেয় বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন। কচুরিপানা তোলা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ হয় ৭৮ লক্ষ টাকা।

কচুরিপানায় মুখ ঢেকেছে ইছামতী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

কচুরিপানায় মুখ ঢেকেছে ইছামতী। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বনগাঁ শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৫:২৮
Share: Save:

ইছামতী নদী থেকে কচুরিপানা তুলে নদী সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল নভেম্বরে। দিন কয়েক কাজ চলার পরে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ বনগাঁর মানুষ। তাঁরা দ্রুত নদী থেকে কচুরিপানা তোলার দাবি তুলেছেন।

সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপালনগরের বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট এলাকা থেকে বনগাঁ শহর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার নদী পথ থেকে কচুরিপানা তোলা হবে। প্রকল্প হাতে নেয় বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন। কচুরিপানা তোলা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ হয় ৭৮ লক্ষ টাকা। নভেম্বর মাসে বিভূতিভূষণ স্মৃতিঘাট এলাকায় কাজ শুরু হয়েছিল।

এর ফলে বহু দিন পরে নদীতে জলের মুখ দেখতে শুরু করেছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। কারণ, দীর্ঘ দিন ধরে নদীবক্ষ কচুরিপানায় ভরা ছিল। স্নান করা, মাছ ধরা, চাষের কাজে নদীর জল ব্যবহার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কচুরিপানার কারণে মশা ও সাপের উপদ্রব বেড়েছিল। এর জেরে বাসিন্দারা তিতিবিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। নদী কচুরিপানামুক্ত হতে দেখে মানুষ স্বস্তি পেয়েছিলেন।

অভিযোগ, কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থে নদীতে শাল বাঁশের খুঁটি পুঁতে তার দিয়ে নদী ঘিরে রেখেছিলেন। বাসিন্দারা কচুরিপানা তোলার সঙ্গেই ওই শাল খুঁটি বাঁশ তোলার দাবি তুলেছিলেন। যা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পাশাপাশি বৃষ্টি ও ঝড়ে কচুরিপানা নদী থেকে এমনিতেই বেশ কিছুটা অংশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল। এরপরে কচুরিপানা তোলা হলে টাকার অপচয় হবে বলে বাসিন্দারা দাবি তোলেন। একই সঙ্গে তাঁরা সাড়ে ৮ কিলোমিটার নদী পথের পরিবর্তে বনগাঁ মহকুমা থাকা নদীর সমস্ত অংশ থেকে কচুরিপানা তোলার দাবি তোলেন। অতীতে বিক্ষিপ্ত ভাবে নদীর একাংশ থেকে কচুরিপানা তোলার কয়েক মাস পরেই ফের নদী কচুরিপানায় ভরে গিয়েছিল। এলাকার মানুষের বক্তব্য, ‘‘এক সঙ্গে মহকুমায় থাকা সমস্ত নদী পথ থেকে কচুরিপানা তোলা না হলে সমস্যা মিটবে না।’’মানুষের ওই সব দাবি নিয়ে প্রশাসনের তরফে বৈঠক হয়। সেখানে আলোচনা হয়, মহকুমার সমস্ত নদী পথ থেকেই এক সঙ্গে কচুরিপানা তুলতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের কথা জেলাশাসক বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন ও সেচ দফতরে পাঠানো হয়। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, এ সবের জেরেই কচুরিপানা তোলার কাজ আপাতত বন্ধ। বারাসতে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ইছামতী থেকে কচুরিপানা তোলার বিষয়টি তুলেছিলেন প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নদী থেকে কচুরিপানা তুলতে শুরু করেছিল সেচ দফতর। কিন্তু ওই কাজ বন্ধ হওয়ায় ক্ষুব্ধ মানুষ। নদী এমনিতেই সংস্কারের অভাবে নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায়। মানুষ অন্ততপক্ষে চাইছেন কচুরিপানা মুক্ত হোক নদী।

গোপাল বলেন, ‘‘যে ভাবে কচুরিপানা তোলা হচ্ছিল, তাতে টাকার অপচয় হওয়ার আশঙ্কা ছিল। আমরা বনগাঁ মহকুমার সমস্ত অংশ থেকে কচুরিপানা তোলার দাবি করেছি। সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।’’

বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, ইছামতী নদীর সাড়ে ৮ কিলোমিটার অংশ থেকে কচুরিপানা তোলার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এলাকার মানুষ মহকুমার সমস্ত নদী থেকে কচুরিপানা তোলার দাবি তুলেছেন। ৭৮ লক্ষ টাকায় ওই কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। ফলে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। বিদ্যাধরী ড্রেনেজ ডিভিশনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দত্তফুলিয়া থেকে কালাঞ্চি পর্যন্ত নদীপথ থেকে কচুরিপানা তুলতে টাকা বরাদ্দের জন্য সেচ দফতরের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ডিপিআর তৈরি হয়েছে। টাকা মঞ্জুর হয়ে গেলেই কচুরিপানা তোলার কাজ শুরু করা হবে।’’ কিন্তু নদী পাড়ের বাসিন্দারা হতাশ। কবে অর্থ অনুমোদন হবে, তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে। বনগাঁর দীনবন্ধুনগর, মাধবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, নদী বক্ষ কচুরিপানায় ভরে রয়েছে। বাসিন্দারা জানালেন, ফের মশা-সাপের উপদ্রব শুরু হয়েছে। শীতের মধ্যে কচুরিপানা পরিষ্কার করা না হলে জ্বর-ডেঙ্গি ছড়াতে পারে। কচুরিপানা নদীতে দীর্ঘ দিন জমে থেকে তা পচে নদীর তলদেশে জমা হয়ে নদীর গভীরতা কমিয়ে দিচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Water Hyacinth Ichamati River
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy