শোকার্ত: কান্নায় ভেঙে পড়েছে অনাদি শাসমলের পরিবার। ছবি: দিলীপ নস্কর।
পাঁচ বছরে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মৎস্যজীবী। নিখোঁজ অনেকে। মৎস্যজীবী সংগঠনের দেওয়া তথ্য-পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ১২৫। নিখোঁজদের মধ্যে অনেকে এখনও ক্ষতিপূরণও পাননি। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত বহু পরিবার।
জীবিকার জন্য সমুদ্রের উপরেই পুরোপুরি নির্ভরশীল যাঁরা, তাঁদের জীবনের সুরক্ষা কী ভাবে দেওয়া যায়, তা নিয়ে চিন্তিত সব পক্ষ। বার বার কেন দুর্ঘটনা ঘটছে, কেন উল্টোচ্ছে ট্রলার, কেন ধাক্কা খাচ্ছে চরে— উঠছে সে সব প্রশ্ন।
বকখালি থেকে প্রায় ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে বঙ্গোপসাগরের রক্তেশ্বরী চরায় ধাক্কা খেয়ে বুধবার দুপুরে ডুবে যায় এফবি হৈমাবতী নামে ট্রলারটি। ১২ জন মৎস্যজীবীর মধ্যে দু’জনকে উদ্ধার করা গেলেও বাকি ১০ জনের খোঁজ মিলছিল না। দুর্ঘটনার পরে আশপাশে থাকা ট্রলারগুলি প্রাথমিক ভাবে উদ্ধারের কাজে হাত লাগায়।
পরে ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানা ও উপকূলরক্ষী বাহিনীর কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার-কাজ শুরু করে। বেশ কয়েকটি ট্রলারের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে ডুবে যাওয়া ট্রলারটিকে বুধবার রাতে নিয়ে আসা হয় উপকূলে। ট্রলারের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় ৯ জন মৎস্যজীবীর দেহ। অনাদি শাসমল নামে আর এক মৎস্যজীবীর দেহ মেলে জলে।
এফবি হৈমাবতীর মতোই গত কয়েক বছরে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। মৎস্য দফতর থেকে শুরু করে মৎস্যজীবী সংগঠনগুলির দাবি, দিনের পর দিন সমুদ্রে চরা পড়ে যাওয়ার কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে। দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচতে ট্রলার চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট চ্যানেল চিহ্নিতকরণের দাবি তুলেছেন মৎস্যজীবীরা।
ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনাইটেড ফিশারম্যান অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক তথা কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, “আগে আবহাওয়ার সতর্কবার্তা না থাকার কারণে আরও বেশি দুর্ঘটনা ঘটত। তবে এখন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ফলে অনেক সুবিধা হয়েছে মৎস্যজীবীদের। তবে ইদানীং দুর্ঘটনা বাড়ার মূল কারণ হল, সমুদ্রে চর পড়ে যাওয়া। নাব্যতা কম থাকায় বেশি ঢেউয়ের মধ্যে পড়ছে ট্রলারগুলি। ভাটার সময়ে জল আরও কম থাকায় বিপদ বাড়ছে।”
মৎস্যজীবী ও ট্রলার মালিকদের বড় অংশের দাবি, সরকারি উদ্যোগে সমুদ্রের চরগুলি চিহ্নিত করে ট্রলারগুলিকে সমুদ্রে যাওয়া-আসার জন্য নির্দিষ্ট চ্যানেল করে দেওয়া হোক। তা হলে বিপদ কমবে।
উপকূলরক্ষী বাহিনী ও উপকূল থানার পুলিশ কর্মীদের অবশ্য দাবি, দুর্ঘটনার পিছনে দায়ী এক শ্রেণির মৎস্যজীবীর অসচেতনতাও। তাঁরা জানান, দু’মাসের মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা উঠে যেতেই সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করে দেয় ট্রলারগুলি। জোয়ার-ভাটা ও সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের পরিস্থিতি অনেকেই মাথায় রাখেন না। গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে অনেকেই লাইফ জ্যাকেট পড়ছেন না বলেও অভিযোগ।
উপকূলরক্ষী বাহিনীর আধিকারিক অভিজিৎ দাশগুপ্ত বলেন, “গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরিয়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে মৎস্যজীবীদের। তা হলেই বিপদ কমবে। বুলবুল, আমপান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড়ে একটাও ট্রলার ডুবি হয়নি শুধুমাত্র সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল বলেই। এখন সতর্কতার অভাবেই শান্ত আবহাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটছে।”
দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সহ মৎস্য অধিকর্তা (সামুদ্রিক) জয়ন্তকুমার প্রধান বলেন, “সমুদ্রে একাধিক জায়গায় চরা পড়েছে। সেই চরায় ধাক্কা খেয়েই এ বার দুর্ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি এই এলাকার ট্রলারগুলির গঠনগত সমস্যার জন্যও দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে যাবতীয় রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের জানানো হয়েছে।”
মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি এ দিন কাকদ্বীপে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, “কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েছে। সেগুলি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে আগামী ২২ জুলাই জেলাশাসকের কার্যালয়ে। যাতে সমস্যার সমাধান করা যায়, সেটা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
তথ্য সহায়তা: দিলীপ নস্কর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy