মহার্ঘ্য: কাঠের উনুনেই চলছে রান্না। ছবি: নবেন্দু ঘোষ।
ঢাকঢোল পিটিয়ে উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাসের সংযোগ দিয়েছিল কেন্দ্র। যাঁরা সংযোগ নিয়েছিলেন, জানতেন না এক সময়ে হাজার ছুঁই ছুঁই সিলিন্ডারের দাম কোথা থেকে মেটাবেন। ভর্তুকি কমতে কমতে সিলিন্ডারের দাম মেটাতে হাঁসফাঁস অবস্থা তাঁদের। উজ্জ্বলা প্রকল্পে দুই জেলার পরিস্থিতির খোঁজ নিল আনন্দবাজার
মাস কয়েক গ্যাসের ওভেনে রান্না করেছেন আরিফা। কিন্তু ইদানীং এ দিক ও দিক থেকে কাঠকুটো জোগাড় করে তাতেই আঁচ দিতে হচ্ছে। দফায় দফায় বেড়ে চলা গ্যাসের দামের সঙ্গে আর পাল্লা দিতে পারছে না গরিব পরিবারটি।
বছর চারেক আগে কেন্দ্র সরকার বহু ঢাক-ঢোল পিটিয়ে শুরু করেছিল উজ্জ্বলা যোজনা। বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পে বিনামূল্যে সংযোগ পাবেন গ্রাহকেরা। ভর্তুকিতে সিলিন্ডারও পাবেন নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলারা। উনুনের ধোঁয়ায় কষ্ট করে রান্না করা থেকে মুক্তি পাবেন মহিলারা।
গ্রামে গ্রামে সে সময়ে সিলিন্ডার নেওয়ার ধুম পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছরেই বদলে গিয়েছে ছবিটা। গ্যাসের দাম বেড়েছে হু হু করে। দিন আনা দিন খাওয়া বহু পরিবারেই এখন আর সিলিন্ডার কেনার সামর্থ্য নেই। ফলে উজ্জ্বলা যোজনায় নাম লেখানোর পরেও বহু মহিলা এখন আর সিলিন্ডার নিচ্ছেন না। রান্না করছেন কাঠ বা কয়লার উনুনে।
হাসনাবাদ থানার আমরুলগাছার বাসিন্দা আরিফা বিবি উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সিলিন্ডার নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, কাঠের উনুনে রান্নার ঝামেলা থেকে মুক্তি মিলবে। কয়েকদিনের জন্য তেমনটাই হয়েছিল। কিন্তু ক্রমশ দাম বেড়ে চলায় বছর দেড়েক হল আর সিলিন্ডার কেনার ক্ষমতা নেই আরিফার। আগের মতো দিনভর ঘুরে কাঠ জোগাড় করে সেই আগুনে রান্না করছেন।
আরিফা জানালেন, ২০১৭ সালে গ্যাস পান তিনি। প্রথম বছর দু’য়েক ভালই চলছিল। একটা সিলিন্ডারে প্রায় মাস দু’য়েক চলে যেত। রান্না বান্নার সময় বাঁচায় দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনায় নজর দিতে পারতেন। কিন্তু তারপর থেকেই ক্রমশ বাড়তে শুরু করে গ্যাসের দাম। এক সময়ে ৬৫০ টাকায় মিলত সিলিন্ডার। সেই দামই এখন হাজার ছুঁই ছুঁই। স্বামী আনাজ বিক্রতা। মাসিক আয় মোটামুটি সাড়ে সাত হাজার টাকা। এই আয়ে সংসার, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ সামলে আর গ্যাস কেনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে ফের কাঠের চুল্লিতে রান্না শুরু করেছেন তিনি।
আরিফা বলেন, “সেই সময়ে বলা হয়েছিল, আমাদের মতো নিম্নবিত্ত পরিবারের মহিলাদের আর কষ্ট করে ধোঁয়ার মধ্যে রান্না করতে হবে না। তাই গ্যাস দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে লাভ কী হল? সেই তো উনুনেই রান্না করতে হচ্ছে।”
হিঙ্গলগঞ্জের উত্তর মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা বেবি বিবিও বছরখানেক হল আর উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস নেন না। পা ভেঙে যাওয়ায় বেবির স্বামী আশরাফ আলি গাজি কাজকর্ম করতে পারেন না। সংসার চালাতে বেবি বিড়ি শ্রমিকের কাজ করেন। মাসে ৫-৬ হাজার টাকা আয় হয়। তাই দিয়েই কোনও রকমে সংসার চলে। বেবি জানান, ছেলে স্কুলে পড়ে। সামনের বছর মাধ্যমিক দেবে। মেয়ে কলেজে পড়ছে। দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনা, সংসার খরচ সামলে হাজার টাকা দিয়ে সিলিন্ডার কেনার সামর্থ্য তাঁর নেই। তিনি বলেন, “সারাদিন বিড়ি বাঁধার কাজ সামলে গ্যাসে রান্না করলে সুবিধাই হয়। কিন্তু উপায় নেই। বাধ্য হয়ে উনুনেই
রান্না করি। ওভেনটা তুলে রেখেছি। জানি না গ্যাসের দাম কখনও কমবে কি না। কমলে আবার ওভেন বের করব।”
একেবারে বন্ধ না করলেও দাম বাড়ায় অনেকে আবার গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। হিঙ্গলগঞ্জের নারকেলতলার বাসিন্দা রিনা মণ্ডল জানান, আগে একটা সিলিন্ডারে দু’মাস চলত। এখন সেটাই টেনেটুনে চার মাস চালানোর চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, “আগে গ্যাসে তিনটে তরকারি রান্না করতাম। এখন একটাই করছি। বাকিটা উনুনেই সারছি। অভাবের সংসার। আয় বাড়ছে না, কিন্তু জিনিসের দাম তো বেড়েই চলেছে।”
এ দিকে, উজ্জ্বলা যোজনায় নতুন গ্যাসের সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েকদিন। এতে সমস্যা পড়েছেন কিছু গ্রাহক। গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রকল্পের দ্বিতীয় দফা ঘোষণা করা হয়। সে সময়ে গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটাররা গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার জন্য এক-একটি এলাকা থেকে বহু গ্রাহকের কেওয়াইসি সংগ্রহ করেন। কিন্তু ভোটপর্ব মিটলেও এই গ্রাহকদের গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।
বাসন্তীর এক ডিস্ট্রিবিউটর শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, “আমরা উভয় সঙ্কটে পড়েছি। নতুন সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। ওভেনের জন্য কোম্পানির কাছে মোটা টাকা জমা রেখেছি। অন্য দিকে, প্রথম দফায় গ্যাস সংযোগ নেওয়া অনেকেই আর্থিক কারণে নতুন সিলিন্ডার নিচ্ছেন না। সেগুলির জন্যও আমাদের উপরে চাপ সৃষ্টি করছে সংস্থাগুলি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy