সচেতনতার প্রচার চালাচ্ছেন যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যেরা। নিজস্ব চিত্র
সাপের কামড় নিয়ে কুসংস্কারের জেরে গত বছরখানেকের মধ্যে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা, বনগাঁ, বাগদা-সহ নানা জায়গায়। এই এলাকাগুলির বাসিন্দাদের একাংশ এখনও সাপে কাটা রোগীকে বাঁচাতে ওঝা-গুনিনের উপরে ভরসা করেন। অনেক ক্ষেত্রে ঝাড়ফুঁকের পরে যখন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, ততক্ষণে চিকিৎসকদের আর বিশেষ কিছু করার থাকে না। মৃত্যু হয় রোগীর।
যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যেরা এবার সরাসরি জ্যান্ত সাপ নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে পথে নামলেন। মঞ্চ সূত্রে জানানো হয়েছে, তাদের কাছে থাকা পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছর এখনও পর্যন্ত হাসপাতালের পরিবর্তে ওঝার কাছে গিয়ে জেলার ৮ জন সাপে কাটা রোগী মারাগিয়েছেন।
রবিবার বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার চাঁদপাড়া স্টেশন যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যেরা একটি লাউডগা ও একটি গোখরো সাপ নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালান। লাউডগা সাপ দেখিয়ে তাঁরা জানান, সাপটির বিষ নেই। এ ধরনের আরও সাপ রয়েছে যাদের কামড়ে মৃত্যু হয় না। এই ধরনের রোগীকে ওঝার কাছে নিয়ে গেলে এমনিতেই ভাল হয়ে যান। এর ফলেই ওঝার উপরে মানুষের বিশ্বাসজন্মায়।
গোখরো সাপ দেখিয়ে তাঁরা জানান, এই ধরনের বিষধর সাপ কামড়ালে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। সাপে কামড়ালে নির্দিষ্ট পরিমাণ বিষ যদি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে, তা হলে ওঝার পক্ষে কখনওই রোগীকে বাঁচানো সম্ভব নয়। এর একমাত্র ওষুধ, এভিএস। হাসপাতালেই যে চিকিৎসা মেলে।
মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘লোকালয়ে সাপ দেখা গেলে আমরা সেই সাপ ধরে এলাকাবাসীকে সচেতন করছি। এই পদ্ধতি খুবই কার্যকর। জ্যান্ত সাপ দেখলে মানুষ দাঁড়িয়ে যান। বক্তব্য শোনেন। এতে সচেতনতার প্রচার সহজ হচ্ছে। প্রচার শেষে সাপগুলি আমরা আবার প্রকৃতির মধ্যে ছেড়ে দিই।’’ প্রচার শেষে রবিবারই সাপ দু’টিকে নিরাপদ জায়গায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঞ্চ সূত্রে জানানো হয়েছে, রবিবারের প্রচারে আনা লাউডগা সাপটি চাঁদপাড়ার ঢাকুরিয়া এলাকায় একটি বাড়ি থেকে ধরা হয়েছিল। গোখরো সাপটি ধরা হয়েছিল চাঁদপড়ার কাছে দিঘা বটতলা এলাকায় একটি ধানের চাতাল থেকে। সাপ ধরেছিলেন জনবিজ্ঞান কর্মী তথা যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্য নির্মল বিশ্বাস। আগে তিনি সাপুড়ে ছিলেন।
যুক্তিবাদী মঞ্চের সদস্যদের পরামর্শ, সাপে কাটলে রোগীকে দ্রুত হসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। অনেক সময়ে দেখা যায়, রোগীর সঙ্গে সাপটিকেও ধরে হাসপাতালে আনা হচ্ছে। তবে চিকিৎসার জন্য সাপ চেনার প্রয়োজন হয় না বলে জানানো হয়েছে। মঞ্চের বার্তা, জীববৈচিত্র রক্ষায় সাপের অবদান অসীম। সাপকে কখনওই মেরে ফেলা উচিত নয়। হয় সেটিকে নিরাপদ স্থানে ছেড়ে দিতে হবে, অথবা বন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রদীপ বলেন, ‘‘হাতে হাতে স্মার্ট ফোন পৌঁছে গিয়েছে, অথচ এখনও অনেক মানুষ কুসংস্কারে বিশ্বাস করেন। আমরা চেষ্টা করি, ছোট থেকেই শিশুদের মধ্যে কুসংস্কার-বিরোধী মনোভাব গড়ে তুলতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy