গোসাবার আমলামেথির এই নির্মীয়মাণ রিসর্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছিল পরিবেশ আদালতের নির্দেশে। এ ধরনের পদক্ষেপ আর কতটা করা যাবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। —ফাইল চিত্র
সুন্দরবনের উপকূল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠেছে একের পর এক নির্মাণ। যার অনেকগুলিই বেআইনি বলে নানা সময়ে অভিযোগ উঠেছে। মন্দারমণিতে অবৈধ নির্মাণ নিয়ে গ্রিন বেঞ্চের রায়ের পরে সুন্দরবনের নির্মাণগুলি নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও মন্দারমণিতে অবৈধ নির্মাণকে মুখ্যমন্ত্রী কার্যত স্বীকৃতি দেওয়ায়, সুন্দরবনে এ ধরনের নির্মাণ আরও বাড়বে কিনা, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে পরিবেশ সচেতন মানুষের মনে।
নামখানার মৌসুনি দ্বীপ, বকখালি, গোবর্ধনপুর, গঙ্গাসাগর, কাকদ্বীপ, গোসাবার পাখিরালয়, সোনাগাঁ সহ বিভিন্ন এলাকা ছেয়ে গিয়েছে হোটেল, রিসর্টে। পরিবেশবিদদের দাবি, এর জেরে বাদাবনের চরিত্র বদলে যাচ্ছে। ধবংসের দিকে এগোচ্ছে সুন্দরবন। শুধু হোটেল-রিসর্টই নয়, নদীর চর দখল করে ব্যবসায়িক স্বার্থে অন্যান্য নানা নির্মাণও হচ্ছে বলে অভিযোগ। ম্যানগ্রোভ কেটে ভেড়ি তৈরি হচ্ছে প্রায় বহু এলাকায়। এ ছাড়া, অনেক জায়গায় নদীর চর দখল করে গড়ে উঠেছে দোকানপাট।
সবুজ আদালতের নির্দেশে এর আগে গদখালিতে নদীর পাড়ে তৈরি হওয়া জেলা পরিষদের ভবন ভাঙতে হয়েছিল। গোসাবার বালি ১ পঞ্চায়েতের আমলামেথি গ্রামে তৈরি হওয়া কটেজও ভেঙে দেয় জেলা প্রশাসন। এপ্রিল মাসে কলকাতা হাই কোর্টে একটি মামলায় মৌসুনি দ্বীপের বারোশালা এলাকার নদীর চরের ২০০ মিটারের মধ্যে একটি অবৈধ রিসর্ট গড়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করা হয়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কাছে হলফনামা তলব করেন। সঙ্গে ওই এলাকার আরও ৪২টি রিসর্ট তৈরির জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন। কী ভাবে তারা অনুমতি পেয়েছে, তা খতিয়ে দেখে জেলা প্রশাসনকে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়।
বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে বকখালি-মৌসুনি থেকে শুরু করে দিঘা, মন্দারমনির মতো জায়গায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে হোটেল ও রিসর্ট তৈরির কাজে। অভিযোগ, এই সমস্ত জায়গায় অধিকাংশ বিনিয়োগ রয়েছে শাসকদলের ছোট-বড় নেতাদের। মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি নেতা অরুণাভ দাস বলেন, “এই সরকার কোর্টের নির্দেশও মানতে চায় না। নিজেদের ইচ্ছে মতো প্রশাসন পরিচালনা করে। ভবিষ্যতে সুন্দরবন রক্ষা করা মুশকিল।”
পাখিরালয় হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ সভাপতি প্রফুল্ল মণ্ডল বলেন, “হোটেল ব্যবসায় এলাকার পর্যটনের উন্নয়ন হয়েছে। এলাকার বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পরিবেশ বাঁচিয়ে কী ভাবে উন্নয়ন করা যায়, সে দিকে সকলেরই নজর দেওয়া উচিত।”
পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পরিবেশের উপরে দুর্বৃত্তায়ন চলছে, যা আগে কখনও হয়নি। এই সরকার কারও কোনও নির্দেশ মানতে চাইছে না। আগামী দিনে সুন্দরবন সহ কলকাতাও বিপদের মুখে পড়তে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাবে পরিবেশের আরও ক্ষতি হবে।”
সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরার প্রতিক্রিয়া, “সুন্দরবন এলাকায় কোথাও যদি অবৈধ নির্মাণ হয়ে থাকে, প্রশাসন অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy