Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Lack of Awareness

বালিকা বধূর মৃত্যুতে ফের সচেতনতায় খামতি নিয়ে প্রশ্ন

হাজারো প্রচার, পুলিশ-প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরদারি সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে চলছেই। মেয়েটির বিপদ ঘটলে সে কথা সামনে আসে।

An image of death

—প্রতীকী চিত্র।

সীমান্ত মৈত্র  
হাবড়া শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩১
Share: Save:

সাড়ে তিন মাস আগে জলপাইগুড়ির বাসিন্দা, সাড়ে পনেরো বছরের কিশোরীর বিয়ে হয়েছিল হাবড়ার এক যুবকের সঙ্গে। মেয়েটির এ বারই মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা ছিল। অথচ, বিয়ের পরে পড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শ্বশুরবাড়িতে সাংসারিক অশান্তির জেরে কয়েক দিন আগে কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যা চেষ্টা করে মেয়েটি। সোমবার হাবড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ গ্রেফতার করেছে মেয়েটির স্বামীকে।

কিছু দিন আগে অশোকনগরের বাসিন্দা, পনেরো বছরের এক কিশোরী বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিলেন পরিচিত এক যুবককে। মেয়েটির বাপের বাড়ির লোকজন প্রথমে মেনে না নিলেও পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারস্থ হননি। অভিযোগ, পণের টাকার দাবিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন কিশোরীকে মারধর করে আগুনে পুড়িয়ে খুন করে। মেয়েটি তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিল।

এই সব ঘটনা ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, হাজারো প্রচার, পুলিশ-প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরদারি সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে চলছেই। মেয়েটির বিপদ ঘটলে সে কথা সামনে আসে। জলপাইগুড়ির ওই কিশোরীর মায়ের বক্তব্য, “সোশ্যাল মিডিয়ায় মেয়ের সঙ্গে হাবড়ার যুবকের পরিচয় হয়েছিল। মেয়ে আমাদের জানায়, ওই যুবকের সঙ্গে বিয়ে না দিলে সে পালিয়ে যাবে। প্রথমে মেয়েকে বলেছিলাম, আঠারো বছর না হলে বিয়ে দেব না। পরে মেয়ের কথা মানতে বাধ্য হই।” সন্তানহারা মায়ের কথায়, ‘‘বিয়ের জন্য এমন জোরাজুরি না করলে এ ভাবে অকালে মেয়েটাকে হারাতে হত না!”

কয়েক বছর আগে হাবড়ার বাসিন্দা, উনিশ বছরের এক তরুণী জ্বরে ভুগে মারা গিয়েছিলেন। তাঁর দেড় বছরের মেয়ে ছিল সে সময়ে। জানা যায়, তারও নাবালিকা অবস্থায় বিয়ে হয়েছিল। কিছু দিন আগে হাবড়ায় কোলের ছেলেকে নিয়ে চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন এক তরুণী। শিশুটি বেঁচে যায়। এ ক্ষেত্রেও জানা গিয়েছিল, আঠারো পেরোনোর আগেই মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল।

একের পর এক এমন ঘটনা সামনে আসায় প্রশ্ন উঠছে, কিশোরীদের বিয়ে আটকানো যাচ্ছে না কেন?

এই মেয়েদের অনেকের পরিবারের লোকজনেরই দাবি, আঠারো বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দিতে নেই, তা তাঁরা জানতেন না। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়, তাই ‘ভাল ছেলে’ পেয়ে তড়িঘড়ি বিয়ে দেওয়ার যুক্তিও নানা সময়ে সামনে আসে। সব মিলিয়ে সচেতনতার অভাব এখনও স্পষ্ট। অনেকেরই অল্প বয়সে বিয়ের পরে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সব মেয়ের নাম চলে যায় ‘স্কুলছুটের’ তালিকায়। লকডাউন পরিস্থিতিতে এমন বহু ঘটনা সামনে এসেছিল।

পুলিশ ও প্রশাসনের একটি সূত্রের দাবি, অল্পবয়সি মেয়েরা আবেগের বশে, প্রলোভনে পা দিয়ে ফেলছে। কখনও, স্কুলে যাওয়ার পথে কোনও ছেলের খপ্পরে পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সময়ে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে। এ সবের মাধ্যমে বিয়েও হচ্ছে, ঘটছে নারীপাচারও।

পুলিশের তরফে স্কুলে স্কুলে পড়ুয়াদের সচেতন করতে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। স্কুলের সামনে ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে ছাত্রীদের সচেতন করা হয়। সেখানে বলা হয়, স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ছাত্রীরা যেন কোনও অচেনা যুবকের সঙ্গে পরিচয় না করে। কেউ ফোন নম্বর চাইলে যেন তারা তা না দেয়। ফেসবুকে অচেনা কারও সঙ্গে যেন যোগাযোগ তৈরি না করে।

এত কিছুর পরেও ফাঁক থেকে যাচ্ছে। অভিভাবকেরাও অনেক সময়ে জোর করে কিশোরী মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন বলে জানা যায়। প্রশাসনের দাবি, শুধু পুলিশ-প্রশাসন নয়, সব স্তরে সকলে সচেতন না হলে সমস্যা মিটবে না। পরিবারের সদস্যদেরও এগিয়ে আসতে হবে। তাঁরা যেন অল্পবয়সি মেয়েদের হাতে মোবাইল তুলে না দেন। মেয়েরা বাড়িতে বেশিক্ষণ মোবাইল সময় ব্যয় করছে কি না, সে দিকেও অভিভাবকদের নজর রাখতে হবে। স্কুলে আসা-যাওয়ার পথেও নজর রাখতে হবে তাঁদের।

একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমরা স্কুলে এ বিষয়ে ছাত্রীদের সচেতন করি। স্কুলে মোবাইল নিয়ে আসাও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু স্কুলে বাইরে, আসা-যাওয়ার পথে তাদের উপরে নজর রাখা আমাদের সম্ভব হয় না।” প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাব তৈরি করা হয়েছে। তাদের মাধ্যমে নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। চাইল্ড লাইন ও প্রশাসনের তরফেও নজরদারি চলে।”

কিন্তু এত সবের পরেও যে নষ্ট হচ্ছে বহু প্রাণ, তা দেখিয়ে দিচ্ছে নানা ঘটনা।

অন্য বিষয়গুলি:

Domestic Violence Child Marriage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy